Post Office: টাকা দিলেই বিনা যাচাইয়ে মিলত পাসপোর্ট, নজরে একাধিক পোস্ট অফিস
জাল পাসপোর্ট চক্রের হদিশ (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বসিরহাট বা পঞ্চসায়র ডাকঘরই নয়, ভুয়ো পাসপোর্ট- চক্রের (Fake Passport) সঙ্গে যোগসূত্র মিলেছে রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি ডাকঘরের। সেগুলি কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ধৃত ডাককর্মী সমরেশ বিশ্বাসের চক্রের হাত ধরে শেষ পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে। এই খবর সামনে আসতেই জোর শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে। উদ্বেগ বেড়েছে আম-নাগরিকদের মধ্যে।
এই পাসপোর্ট চক্রের (Fake Passport) ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সমরেশ বিশ্বাস এবং তার ছেলে রিপন বিশ্বাস আগে থেকে আর এক অভিযুক্ত দীপঙ্কর দাসের মাধ্যমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাসপোর্টের জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্র, অর্থাৎ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, এমনকী জন্মের শংসাপত্র তৈরি করাত। এর পরে সেগুলি দিয়ে ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে আবেদন জমা দেওয়া হত। এক পুলিশ অফিসার জানান, সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্রগুলি এতটুকু যাচাই না করেই জমা নিয়ে নিত এই মামলায় ধৃত তারকনাথ সেনের মতো ডাকঘরের কর্মীরা। ফলে, কোনও রকম পরীক্ষ নিরীক্ষা ছাড়াই জমা পড়ে যেত ভুয়ো নথি ও তথ্য। প্রসঙ্গত, বসিরহাট ডাকঘরের কর্মী তারককেও ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় ধৃত দীপঙ্কর দাস যার নির্দেশে ভুয়ো নথি তৈরি করত, সেই ব্যক্তির খোঁজে বুধ এবং বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। ওই ব্যক্তির ভাড়া করা অফিস থেকেই মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয়েছিল প্রচুর জাল নথি, নথি তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্য সামগ্রী। মিলেছিল দু'টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিল, ৩৬টি ভারতীয় পাসপোর্টের ফোটোকপি এবং শেনগেন ও ব্রিটেনের ভিসা।
আরও পড়ুন: রাজ্যে এলেন অমিত শাহ, দিনভর কোন কোন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
জাল পাসপোর্ট (Fake Passport) তৈরি করে কীভাবেই বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সেই পাসপোর্ট? প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পোস্ট অফিসের (Post Office) কিছু লোকজন এর সঙ্গে জড়িত আছে। ওরা কেমিকেল দিয়ে পাসপোর্টের যে আসল খাম সেটা খুলে ফেলছে। তারপর তার ভিতরে নকল পাসপোর্ট ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই জাল পাসপোর্ট সুনির্দিষ্ট জায়গায় লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যাদের দিচ্ছে তাদের কিন্তু ওরা চেনে না।” এখানেই শেষ নয়। সত্যজিতবাবু প্রশ্ন তুলছেন পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। এমনকী ভুয়ো পাসপোর্ট পেতে এখানকার স্থানীয়রাও সাহায্য করছে বলে দাবি তাঁর। বলছেন, ‘‘কেউ নিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে করে। অন্য ব্যক্তিকে দেখিয়ে বলছে এ আমাদের এখানে ২৫ বছর ধরে রয়েছে। অথচ সে এখানে ছিলই না। হয়ত বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে এসেছে। তারাই ভিড়ের মধ্যে মিশে যাচ্ছে।”
সূত্রের খবর, সমরেশের পাসপোর্ট চক্রের (Fake Passport) সিংহভাগ জাল ছড়িয়েছিল দুই চব্বিশ পরগনা, নদিয়ার মতো জেলাতে। তবে তার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন জায়গাতেই তাঁদের গতিবিধি নজরে এসেছে। তবে এই তিন জেলার ডাক বিভাগের অফিসার, কর্মী, পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের অফিসাররাও এখন কলকাতা পুলিশের সিকিউরিটি কন্ট্রোল বিভাগের গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছেন। যারা এই সমস্ত পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন তাঁরা এখন কোথায় রয়েছেন তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, এই সমস্ত পাসপোর্ট ব্যবহার করে অনেকে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।