শিউরে ওঠার মতো ঘটনা
শান্তি সাউ এবং তাঁর হত্যাকারীরা
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চার বছর আগে অসমের কামাখ্যায় নরবলি (Human Sacrifice) দেওয়া হয়েছিল হুগলির তাঁতিপাড়ার এক ষাটোর্ধ্ব মহিলাকে। ঘটনার চারবছর পরে রহস্যভেদ করতে সক্ষম হল পুলিশ। গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বরা জানিয়েছেন, নিহতের নাম শান্তি সাউ (৬৪)। পুলিশ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতরা হল সুরেশ পাসওয়ান (৫৬), প্রদীপ পাঠক ওরফে দীনেশ বা রাজু (৫২) এবং আরও দুই ব্যক্তি, কানু আচার্য্য ওরফে কানু তান্ত্রিক (৬২), এবং রাজু বাবা (৬০) কে গ্রেফতার করে। ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজ চলছে।
অসমের কামাখ্যা মন্দিরের ফাঁড়িতে ২০১৯ সালের ১৯ জুন সন্ধ্যায় খবর এসেছিল, জয় দুর্গা মন্দিরে নামার রাস্তায় এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ পড়ে আছে। পাশে রয়েছে পুজোর সামগ্রী। প্রথম থেকেই পুলিশ সন্দেহ করছিল, নরবলি (Human Sacrifice) দেওয়া হয়েছে ওই মহিলাকে। এই ঘটনায় সেসময় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়লেও মহিলার পরিচয় কিছুতেই জানতে পারছিল না পুলিশ। হত্যাকারীদেরও ধরা যাচ্ছিল না। অবশেষে হত্যা রহস্যের কিনারা করতে পারল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অম্বুবাচীর সময়ে কামাখ্যায় নরবলি (Human Sacrifice) দিলে বিশেষ ক্ষমতা মিলবে, এমন অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়েই মথুরার এক ব্যক্তি ও এক সাধু মিলে ছক কষে হত্যা করে শান্তিকে।
গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, মৃত শান্তি শাউয়ের ছেলে মিডিয়া রিপোর্টের মাধ্যমে ঘটনার কথা জানতে পেরে জামাকাপড় এবং শরীরে থাকা ট্যাটু থেকে মৃতদেহটিকে তার মায়ের বলে শনাক্ত করেন এবং পুলিশকে জানান যে তিনি ২০১৯ সালের জুনের শুরুতে তার মা অম্বুবাচী মেলার উপলক্ষে কামাখ্যা মন্দিরে আসেন এবং তারপর থেকে মা নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এক তান্ত্রিক এবং আরও দুই মহিলার সঙ্গে ওই মহিলা বাংলা থেকে কামাখ্যা মন্দিরে আসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে একটি বিশেষ দল সম্প্রতি অতীতের প্রমাণ এবং সূত্রগুলি বিশ্লেষণ করে কোচবিহারে পৌঁছায় এবং ১৮ মার্চ, ২০২৩-এ কৈলাশ বর্মন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় মহিলার মোবাইল ফোন, জামাকাপড় এবং আধার কার্ড। ওই ব্যক্তি তদন্তে পুলিশকে জানায় এই জিনিসগুলি ২০১৯ সালের জুন মাসে এক ‘সাধুবাবা’, তার বাড়িতে রেখে যান। সেই সূত্র ধরে পুলিশ ২৫শে মার্চ মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে মাতা প্রসাদ পান্ডে ওরফে মাতেশ্বরী গিরিকে গ্রেফতার করে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে ওই মহিলাকে নরবলি (Human Sacrifice) দেওয়ার পরিকল্পনা অনেক আগেই করা হয়। সেই মত ২০১৯ সালের ১৮ এবং ১৯ জুন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেখানে মহিলা ছাড়াও আরও ১২ জন ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, দলের প্রত্যেকে প্রথমে ভূতনাথ মন্দিরে একটি পুজোর আয়োজন করে, যেখানে সবাই মদ্যপান পান করেন এবং মহিলাকে জোর করে আকন্ঠ মদ্যপান করানো হয়। এরপর কামাখ্যা শ্মশানে গিয়ে আরেকটি পুজো করা হয় এবং তৃতীয় পুজোটি হয় জয় দুর্গা মন্দিরে। মহিলার কাটা মুণ্ডু এরপর ব্রহ্মপুত্র নদীতে ফেলে দেয় তারা। এই মামলার বাকি আসামীদের খোঁজে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
Tags: