হাওড়ায় আইনের দরজাতেই বেআইনি কাজের রমরমা!
হাওড়া জেলা হাসপাতালের সামনে ফুটপাথ দখল করে এভাবেই মঙ্গলাহাটের তক্তা ডাঁই করে ব্যবসা চলছে। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কথায় আছে গোদের ওপর বিষফোঁড়া। হাওড়া শহর জুড়ে ফুটপাথ দখল যেন এরকমই বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। জোর যার ফুটপাথ তার। শুধুমাত্র শহরের ভিতরেই নয়, শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান (Howrah Maidan), যেখানে রয়েছে হাওড়া শহরের সমস্ত প্রশাসনিক ভবন, সেখানেই চলছে এই দখলদারি। জেলাশাসক বাংলো থেকে হাওড়া আদালত, পুরসভা, জেলা হাসপাতাল, জেলা পরিষদ ভবন, এমনকী জেলার মুখ্য ডাকঘর। শহরের প্রধান প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয় যেখানে রয়েছে, সেই এলাকাতেই সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে চলছে ফুটপাথ দখল করে হকারি এবং রাস্তা দখল করে বেআইনি পার্কিং। এই পার্কিং ও ফুটপাথ দখল শুরু হচ্ছে খোদ জেলাশাসকের দফতর থেকে।
নিকাশি নালার ওপর বসার পাটাতনেরও চড়া দর!
জেলাশাসকের দফতর কাম জেলাশাসক বাংলোর প্রধান প্রবেশদ্বারের ঠিক বাঁদিকে রীতিমতো রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তৈরি হয়েছে টোটো স্ট্যান্ড। ডানদিকে জেলাশাসক বাংলোর পাঁচিল বরাবর সরকারি ও বেসরকারি গাড়ির পার্কিং। একইভাবে আদালতের সামনে সারি সারি গাড়ি ও বাইক পার্কিং। হাওড়া জেলা হাসপাতালের ভিতরেই গাড়ি পার্কিং। আর এইসব অফিসগুলির সামনের যে ফুটপাথ, তার কোনও অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। কোথাও চায়ের দোকান, কোথাও ফলের জুসের দোকান আবার কোথাও মঙ্গলা হাটের ডালা সাজানোর তক্তা ডাঁই করে রাখা হয়েছে ফুটপাথ দখল করে। প্রতি মঙ্গলবার হাওড়া ময়দানে (Howrah Maidan) মঙ্গলা হাট বসার কথা থাকলেও আদতে সপ্তাহে তিন দিন ধরে মঙ্গলা হাট বসে। তবে মঙ্গলবার হাওড়া শহরের প্রায় সমস্ত রাস্তার ধারেই খুচরো বিক্রেতারা তাঁদের ডালি সাজিয়ে বসে পড়েন। যেহেতু হাওড়ার রাস্তা অনেক ছোট, তার উপর রাস্তা দখল করে আগে থেকেই গাড়ি পার্কিং করা থাকে, ফলে মঙ্গলা হাটের ব্যবসায়ীদের বসার অসুবিধা হয়। তাই ফুটপাথের ধারে যে নিকাশি নালা রয়েছে, সেই নিকাশি নালার ওপরেই কাঠের পাটাতন বা তক্তা বিছিয়ে তার ওপর বসে মঙ্গলা হাটের কাপড়ের দোকান। ওই একদিনের জন্য কয়েকটি এজেন্সি থেকে ওই পাটাতন চড়া দামে ভাড়া করেন কাপড় ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার যেহেতু ভোর থেকেই ব্যবসা শুরু হয়, তাই রবিবার বিকেল থেকে আবার কখনও সোমবার সকাল থেকেই হাওড়া ময়দানের আশপাশে যত ফুটপাথ রয়েছে, তার পাশে নিকাশি নালার উপর পাটাতন বিছানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। মঙ্গলা হাট উঠে গেলে এই পাটাতনগুলিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় না। জায়গা দখল করে এই পাঠাতনগুলি সারি সারি ফুটপাথের দেওয়ালে রাখা হয়। এর ফলে গাড়ি পার্কিং বা হকার ঠেলে কোনও রকমে মানুষ যদি ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাচলার চেষ্টা করেন, তখন তাঁদের বাধা পেতে হয় এই পাটাতনে। ফলে হাওড়া ময়দান চত্বরে সাধারণ মানুষের কাছে এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনার শিকার (Howrah Maidan)
হাওড়া জেলা হাসপাতালের সামনে গেলে দেখা যাবে, হাসপাতালের প্রবেশ পথের ডান দিকের ফুটপাথ এমন ভাবে পাটাতন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, তার ফলে ফুটপাথ বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটাচলা করেন। একইভাবে হাওড়া গার্লস কলেজের সামনে এবং হাওড়া ময়দানের আনাচে কানাচে বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাথে এভাবেই রাখা হয়েছে পাটাতন বা তক্তা। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামছেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন প্রায় প্রতিদিন। এক অফিস যাত্রী সুদীপ হাজরা বলেন, যেখানে শহরের প্রধান প্রধান প্রশাসনিক ভবন রয়েছে, সেখানে আইন সব থেকে বেশি কড়া হওয়া দরকার। অথচ সেখানেই (Howrah Maidan) চলছে শহরের সব থেকে বেশি বেআইনি দখলদারি। প্রশাসনিক কর্তা থেকে পুলিশ প্রশাসন, কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আর তাঁদের মতো সাধারণ মানুষকে এই দুর্ভোগকে জীবনের অঙ্গ হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে।
দায়সারা জবাব পুরসভার
হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি ইতিমধ্যেই পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে (Howrah Maidan)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।