গলসির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর ন্যূনতম পরিষেবা নেই কেন?
গলসির পুরষা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হাসপাতালে সরবরাহ নেই ওষুধ, ইনজেকশন ও সেলাইন। এই জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে। জীবনদায়ী ওষুধ ও সেলাইনের সরবরাহ নেই এবং এরপর উপরে নেই নজর কারও। অভিযোগ রোগীর আত্মীয় এবং এলাকাবাসীর। ঠিক এই কারণেই বেশ কিছুদিন ধরে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) গলসির পুরষা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত শিকেয় উঠেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে নিঃস্ব হচ্ছেন গ্রামগঞ্জের গরিব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষরা। স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
জানাগেছে, হাসপাতালে (Purba Bardhaman) রোগী ভর্তি হলেই ডাক্তার বাবুরা চিকিৎসার জন্য ওষুধ, ইনজেকশন ও সেলাইনের প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছেন। তবে সেই ওষুধের বেশিরভাগই যোগান নেই হাসপাতালে। এমন অবস্থায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, ইনজেকশন ও সেলাইন বাইরের দোকান থেকে কিনে আনতে হচ্ছে রোগীদের। এমনকি জ্বর ও ডায়েরিয়া চিকিৎসাতে মিলছে না সাধারণ সেলাইন। এদিকে রোগী ভর্তি করলেই প্রতিদিন পাঁচ-সাতশো টাকার ওষুধ। ইনজেকশন ও সেলাইন কিনে আনতে হচ্ছে হাসপাতালে আসা গরিব রোগীর পরিজনদের। ঘটনার জেরে কিছুদিন ধরে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতাল চত্বর জুড়ে। ক্ষোভের আঁচ ভোগ করতে হচ্ছে হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে কর্মরত চিকিৎসক-স্বাস্থ্য কর্মীদের। এই কঠিন অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা। বেশিরভাগ গরিব রোগী পরিবারের পক্ষে বাইরে বহুমূল্যের চিকিৎসা নেবার ক্ষমতা নেই। এমন অবস্থায় এই হাসপাতাল বন্ধ রাখার দাবি করছেন স্থানীয়রা।
পরিষেবা না পেয়ে অসহায় রোগীর পরিজনেরা ক্ষিপ্ত। ক্যামেরার সামনে উগরে দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষোভ; যন্ত্রণার কথা। রোগীর আত্মীয়া জাহানারা খাতুন আনসারি বলেন, 'এর মধ্যে ওষুধ আর টেস্ট বাবদ ৭০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে।' নার্সিংহোমে (Purba Bardhaman) যাওয়া তাঁদের সাধ্যের বাইরে। মিলছেনা প্রয়োজনীয় ওষুধ। আরেক রোগীর আত্মীয় হাদিয়া বিবি শেখ, তিনি বলেন, 'কিছু ফ্রিতে হচ্ছে না। সব পয়সা লাগছে। এত পয়সা থাকলে তো বাইরে চিকিৎসা করাতাম।' রোগীর আত্মীয় ইনামুল হক, তিনিও ক্ষুব্ধ, বললেন, 'আগে সব পাওয়া যেত। এখন কিছুই নেই। শুধু একরকম সেলাইন ছাড়া।' তাঁরা কোথায় যাবেন?' রোগীর পরিজন সুভাষ আকুড়ে জানালেন, 'রোগী পড়ে আছেন, ওষুধ নেই, পরিষেবা নেই। বাইরে নিয়ে যাবার মত আমাদের ক্ষমতা নেই।' প্রশাসন কবে সুব্যাবস্থা করবে কে জানে! এইভাবে রোগীদের পরিজনদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। রোগীর আত্মীয় আসগর আলি মল্লিক জানান, 'আগে আমরা সব পেতাম। এখন কিছু নেই। কর্মীরা বলছেন তাঁদের কিছু করার নেই। তবে হাসপাতাল গুটিয়ে দেওয়া হোক।
একইরকম ভাবে অসহায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (Purba Bardhaman) চিকিৎসকরা। মেনে নিলেন সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে ভীষণভাবে। ডাঃ সায়ন জোয়ারদার বলেন, রোগীর পরিজনেরা রেগে যাচ্ছেন। তাঁদের ধৈর্য রাখতে হচ্ছে। ২/৩ সপ্তাহ ধরে এমনটা হচ্ছে। যদিও ওষুধ সরবরাহ করার বিষয়টি তাঁদের নয়। তবু মানুষ হাসপাতালেই প্রথমে আসেন। তাঁরা জবাব চাইছেন। ডাঃ পায়েল মল্লিক, তিনি নতুন বিএমও এইচ। তিনি জানান, 'সব বিষয়টি শুনেছি। আমি জেলায় সব জানিয়েছি। সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশাকরি সমাধান হয়ে যাবে।' এই সমাধানের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।