Bangladesh: ‘মুখে গামছা ঢুকিয়ে, এক পায়ে দাঁড় করিয়ে বেধড়ক মার’, বাংলাদেশে ঘটা অকথ্য অত্যাচারের কথা শোনাল ভারতীয় মৎস্যজীবীরা, এখনও আতঙ্ক কাটছে না...
বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা মৎস্যজীবীদের পরিবারের সদস্যরা (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর হিন্দুদের ওপর লাগামছাড়া অত্যাচার চলছে। এই আবহে ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী (Indian Fishermen) বাংলাদেশে ধরা পড়েছিলেন। সম্প্রতি, বাংলাদেশ থেকে ওই ৯৫ জন মৎস্যজীবী ভারতে ফিরেছেন। বাংলাদেশি নৌসেনারা যে কী অত্যাচার চালিয়েছেন, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তাঁদের শরীরে অবস্থা দেখলেই টের পাওয়া যাবে। তাঁরা দু'পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না। কীভাবে হয়েছে অত্যাচার? শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। মুখে গামছা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, লাঠি মুখে ঢুকিয়ে গুঁজে দেওয়া হয় গামছা, এরপর এক পায়ে দাঁড় করিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। বাথরুম যেতে দেওয়া হত না, দু'দিন খেতে দেওয়া হয়নি, ভয়ঙ্কর বক্তব্য উঠে আসছে তাঁদের মুখে। অথচ বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা যখন কেউ ধরা পড়েন ভারতের জলসীমায় তখন তাদের কীভাবে যত্নে রাখা হয়। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আর তার বিনিময়ে উল্টো ব্যবহার পেলেন ভারতের মৎস্যজীবীরা। নিজের আসল পরিচয় দেখিয়ে দিল ইউনূস প্রশাসন।
বাংলাদেশ থেকে ৯৫ জন বন্দি মৎস্যজীবী (Indian Fishermen) দেশে ফিরলেও এখনও ভয়ে শিঁটিয়ে তিলোকচন্দ্রপুর গ্রামের ফেরত আসা মৎস্যজীবীরা। এই গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষই মৎস্যজীবী। প্রায় প্রত্যেক বাড়ি থেকে কেউ না কেউ ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যান। এই গ্রামের ৯৬ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশে আটকে পড়েছিলেন। গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতীয় মৎস্যজীবী ভারতের জলসীমানা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তারপরে বাংলাদেশের (Bangladesh) পটুয়াখালি এবং মঙ্গলায় আটক ছিলেন তাঁরা। দুই দেশের তরফে মৎস্যজীবীদের আন্তর্জাতিক জল সীমানা লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় হিংসা। তার মধ্যে তাঁদের ওপরেও চলেছে অকথ্য অত্যাচার।
আরও পড়ুন: সীমান্তে বেড়া দিতে বাধা! বিএসএফের রণমূর্তির দেখে পগার পার বাংলাদেশিরা
জানা গিয়েছে, এখনও একজন মৎস্যজীবী (Indian Fishermen) ফেরেননি। বদলে ফিরেছে তাঁর জামাকাপড়। তাঁরই স্ত্রী গুরুমণি। তাঁর স্বামী ভয়ে ট্রলার থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। বাংলাদেশি নৌসেনাদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। গুরুমণি বলেন, "আমার স্বামী তো ভয়ে ঝাঁপ দিয়েছেন। ওই যে নেভি ধরছে, কোস্ট গার্ড ধরছে, মারছে, খুব মারছে, সেই দেখেই ভয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। ওরা যদি এভাবে মারধর না করত, তাহলে তো বেঁচে ফিরত আমার স্বামী।”
বাংলাদেশে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন একাধিক মৎস্যজীবী। অত্যাচারের বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকে কেঁদেও ফেলছেন রণজিৎ দাস নামে এক মৎস্যজীবী। তাঁকেও আটক করে রাখা হয়েছিল। এখনও সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠে তাঁর গলা। বলেন, "আমাদের সামনেই (Indian Fishermen) অফিসাররা বলছিল, পেটে ছুরি মেরে জলে ফেলে দে ওদের। এমন মারত, কত যে লাঠি ভেঙেছে। এক পায়ে দাঁড় করিয়ে পায়ের পাতায় মারত। চোখ বেঁধে রেখে নিতম্বে লাঠি দিয়ে মেরে দগদগে ঘা করে দেওয়া হয়।” অপর এক মৎস্যজীবী বলেন, আমাদের কাছে জিপিএস ছিল। কিন্তু সেটা ঠিকঠাক কাজ করছিল না। আমরা বাংলাদেশের জলসীমায় চলে যাই। মাঝি জানে না ঠিক করে। আমরা আত্মসমর্পণ করেছিলাম। তারপরেও আমাদের প্রচুর মারধর করল। মাঝি আর ইঞ্জিন মিস্ত্রি দুজনকে ট্রলারে রাখল। বাকিদের সারা রাত হাত বেঁধে রাখল। মারল। এরপর হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে গেল। সেখানে উল্টো-পাল্টা কথা বলছিল।
বাংলাদেশ ফেরত অত্যাচারিত মৎস্যজীবী (Indian Fishermen) সুভাষ দাস বলেন, "আমার সীমান্তে এসে কেন আমাকে নিয়ে যাবে? এইজন্য ওদের সঙ্গে একটু তর্কাতর্কি করি। ওরা আমাকে মারে। এরপর আমার ৫ জন লোক জলে পড়ে যান। যখন বোটটা কাত হয়ে যায়, তখন পড়ে যায়। তুলতে দিচ্ছিল না, তাও অনেক কষ্টে চেষ্টা করে ৪ জনকে তুলেছি। আর একজনকে খুঁজতে দেয়নি। অক্টোবরের ১৬ তারিখ রাত তখন ৩টে বাজে। আমার একটা লোক তখনও আছে। বলে, এখানে থাকা যাবে না। ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী আসতে পারে। দড়ি দিয়ে সবাইকে বেঁধে ফেলেছে। মারধর আরম্ভ করছে সবাইকে। আমার ছেলে কান্নাকাটি করল। লোকজন কান্নাকাটি করল। আমার গলায় পা রাখে। পায়ের তলায় মারে। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। ছেলে বলে, আমার বাবার বুকে অসুবিধা। বাবাকে ছেড়ে দেন। নাহলে, আমার বাবা বাঁচবে না। বললাম, একটু জল দেন। বলে, ইন্ডিয়ান। তোকে জল দেওয়া যাবে না।”
সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী (Indian Fishermen) শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘অতীতেও অনেকবার এ দেশের মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশ জল সীমানায় ঢুকে পড়েছে। কিন্তু কোনও বার এত অত্যাচার করা হয়নি। এবার বাংলাদেশের অশান্তির প্রেক্ষিতে অত্যাচার সীমা ছাড়িয়েছে। ৯৫ জনের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” প্রশ্ন উঠছে, কেন মারধর করা হল ভারতীয় মৎস্যজীবীদের? তাঁরা তো জলদস্যু নন, তারপরেও কেন এই ব্যবহার পেলেন তাঁরা? তবে কি ভারতীয় বলেই পেটানো হল?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।