গায়েব হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা...
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা নিতে উপভোক্তাদের ভিড়। ফাইল ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্কঃ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে (Lakshmir Bhandar) অলক্ষ্মীর বাসা!
সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, ২ লক্ষের বেশি। অগত্যা নকল ‘লক্ষ্মী’দের থেকে টাকা উদ্ধার করার নিদান দিয়েছে সরকার (Govt.)। কিন্তু কার টাকা কে উদ্ধার করে? অলক্ষ্মীদের আপাতত বাছাই করে ভাণ্ডার থেকে সরানো গেলেও, আরও কত জন এমন বসে রয়েছেন তা জানে না সরকারও। কর্তাদের অনেকের আশঙ্কা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে অনেক ‘নারায়ণ’ও ঢুকে থাকতে পারেন। কিন্তু বিতর্ক এড়াতে সে সব নিয়ে আর চর্চা চায় না নবান্ন (Nabanna)।
নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে এখন ১ কোটি ৮০ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে নথিভুক্ত রয়েছেন। তাঁরা সাধারণ শ্রেণির হলে মাসে ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি হলে ১০০০ টাকা করে ভাতা পান। নবান্নের নির্দেশ, সরকারি কর্মীদের বেতন দুদিন দেরি হতে পারে কিন্তু লক্ষ্মীর ভাতা যেন সময়ে পৌঁছে যায়। সরকারি কর্তাদের দাবি, মাসে ১১০০ কোটি টাকা এই খাতে বেরিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : তাজপুর বন্দরের ‘তাজ’ কেন পাচ্ছে না আদানিরা, নীরব কেন নবান্ন?
তবে প্রকল্পটি ঘিরে কিছু তথ্য দিলেই জানতে পারবেন কেমন চলছে ভাণ্ডার। কর্তাদের একাংশের দাবি, প্রকল্প শুরুর সময় কারা ভাণ্ডারের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন তা যাচাই করা হয়নি। ডিসেম্বর মাস নাগাদ শুরু হতেই দেখা যায় ২ লক্ষের বেশি এমন উপভোক্তা রয়েছেন যাঁরা ‘ডবল-ডবল’ ভাতা নিচ্ছেন। একই নামে একাধিক পাসবই অথবা একই অ্যাকাউন্টে অনেকের টাকা ঢোকার তথ্যও ধরা পড়ে। দ্রুত সেই অলক্ষ্মীদের বাছাই করে সরকার। জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয় টাকা উদ্ধার করতে হবে। এক কর্তার কথায়, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন সরকারে এলে ডবল-ডবল চাকরি দেবেন। সেই চাকরি হয়েছে কিনা জানা নেই, কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে ২ লাখের বেশি মহিলা ডবল-ডবল ভাতা নিয়ে নিয়েছেন। সেই টাকা উদ্ধার করা দুষ্কর। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পেও একই ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকার চুরির টাকা উদ্ধার করতে নির্দেশ দিয়েছে। সেই কারণেই বন্ধ রয়েছে নতুন বরাদ্দ। রাজ্য অবশ্য এর পুরো দায় কেন্দ্রের ঘাড়েই চাপাচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ক্ষেত্রে তারা চুপ। ২ লাখ অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে।
কর্তারা জানাচ্ছেন, সেই ধাক্কা সামলাতে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ মহিলার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। প্রকল্পের শর্তপূরণ করতে পারেননি বলে বাদ দেওয়া হলেও, আসলে এই ১৪ লক্ষ মহিলার অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত ‘ডবল-ডবল’ ভাতা পেতে আবেদন করেছিলেন। ডি-ডুপ্লিকেশন প্রক্রিয়ায় ধরা পড়ে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রাথমিকভাবে রাজ্যের সমস্ত মহিলাদের ভাণ্ডারের টাকা বিলির প্রস্তাব ছিল। সে ক্ষেত্রে বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হত। নানান শর্ত চাপিয়ে সেই সংখ্যা ২ কোটির মধ্যে রেখেছে নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর। এখন সরকার ভাণ্ডারে নতুন লক্ষ্মীর নাম ঢোকানোর চেয়ে অলক্ষ্মীদের বিদায় করতেই বেশি তৎপর বলে দাবি করেছেন নবান্নের কর্তারা। কারণ ভাতার গেরোয় সরকারি কর্মীদের সময়ে কতদিন বেতন দেওয়া যাবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় সরকার।
আরও পড়ুন : 'স্মোকিং কালী' বিতর্ক, হাত ছাড়ল দল, তৃণমূলকে আনফলো মহুয়ার