Serampore: চারতলা রথের ওজন ১২৫ টন! জেনে নিন মাহেশের রথের ইতিহাস
মাহেশের রথ দেখতে এসেছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, এসেছিলেন মা সারদাও (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় হুগলির মাহেশে (Mahesh Rath Yatra)। শ্রীরামপুরের কাছে এই রথ দেখতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের ঢল নামে। মাহেশের রথেরও আছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। পুরীতে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার জন্য তিনটি আলাদা রথ থাকে। মাহেশে ত্রিমূর্তি থাকেন একটিই রথে। সেই রথের উচ্চতা ৫০ ফুট। পুরীর রথের থেকেও এই রথ উচ্চতায় বেশি। মনে করা হয়, জগন্নাথের এত উচ্চ রথ আর দ্বিতীয়টি নেই। উচ্চতা অনুযায়ী রথের ওজনও বেশি, এই রথ ১২৫ টনের। এবারও মাহেশের রথ দেখতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
মাহেশের (Mahesh Rath Yatra) মূল মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ রথে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে, প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় রথে চাপিয়ে। কথিত আছে, সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী ৬২৯ বছর আগে পুরীতে গিয়ে প্রভু জগন্নাথকে ভোগ নিবেদনের জন্য স্বপ্নাদেশ পান। কিন্তু, সেই ভোগ তিনি অর্পণ করতে পারেননি। এরপর স্বপ্নাদেশে পাওয়া নিম কাঠ দিয়ে তিন বিগ্রহ তৈরি করা হয়। সেই থেকেই চলে আসছে পুজো। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, সন্ন্যাস গ্রহণের পর শ্রীচৈতন্য পুরী যাওয়ার পথে মহেশের কাছে পৌঁছান। ধ্রুবানন্দের মন্দিরে যাওয়ার পর, তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গভীর সমাধিতে লীন হন। শ্রীচৈতন্য মাহেশকে 'নব নীলাচল' অর্থাৎ 'নতুন পুরী' বলে নামকরণ করেছিলেন। পরে, বৃদ্ধ ধ্রুবানন্দ তাঁকে মন্দিরের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধে শ্রীচৈতন্য কমলাকর পিপলাইকে তাঁর বারো গোপালের পঞ্চম মন্দিরের সেবাইত করেন। কিছুদিন পর ধ্রুবানন্দ মারা যান। কমলাকর পিপলাই ছিলেন, যেমনটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রীচৈতন্যের বারোটি গোপালের মধ্যে পঞ্চম। তিনি ছিলেন সুন্দরবনের খলিজুলির জমিদারের ছেলে। তিনি লজিক পড়ার জন্য নবদ্বীপে আসেন। পরে, তিনি মহাপ্রভুর প্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। মাহেশ মন্দিরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে, তিনি সেখানেই থেকে যান। তিনিই বিখ্যাত রথ উৎসব শুরু করেছিলেন। তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখনও মাহেশ এবং কেউ কেউ কলকাতায় মন্দিরের সেবাইত বা 'অধিকারি' হিসেবে বসবাস করেন।
মাহেশের (Mahesh Rath Yatra) এই জগন্নাথ অর্চনা ৬২৯ বছরের প্রাচীন। মাহেশের সেবাইত পিয়াল অধিকারী বলেন, স্বপ্নাদিষ্ট দারুমূর্তি আজও একই রকম ভাবে আছে, যা মাহেশের বিশেষ মাহাত্ম্য। এত বছর ধরে ঘড়া ঘড়া জল-দুধে স্নান সত্ত্বেও মূর্তি আছে অবিকল। মাহেশের স্নান প্রক্রিয়ারও আছে নিজস্বতা। ভাদ্র মাসে এই এলাকায় দেখা দেয় ষাঁড়াষাঁড়ি বান। সেই জল তুলে রাখা হয় জগন্নাথের স্নানের জন্য। বিশেষ সেই জলের সঙ্গে থাকে দেড় মন দুধ। সকলের সামনেই অনুষ্ঠিত হয় এই পুণ্যস্নানের মুহূর্ত। ভক্তমনের বাঞ্ছা পূর্ণ করতেই জগন্নাথের এই লীলা। মাহেশের রথ দেখতে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এসেছিলেন। মা সারদাও রথের টানে মাহেশে এসেছিলেন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মাহেশে রথ দেখতে এসেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস রাধারানি মাহেশ রথযাত্রার বিস্ময়কর বিবরণ নিয়ে লেখা।
জানা গিয়েছে, শ্যামবাজারের বসু পরিবারের কৃষ্ণরাম বসু এই রথ দান করেছিলেন। চারতলা এই রথেরও আছে নিজস্ব ব্যাখ্যা- চৈতন্যলীলা, রামলীলা, কৃষ্ণলীলা এবং শীর্ষে আরোহণ করেন প্রভু জগন্নাথ। স্নানযাত্রা থেকে রথযাত্রার এই অন্তর্বর্তী সময়ে অন্তরালে থাকেন জগন্নাথ। কথিত আছে, এই সময় জ্বরে ভোগেন তিনি। দূর- দূরান্ত থেকে কবিরাজ এসে পাঁচন তৈরি করে প্রভুর নিরাময়ের ব্যবস্থা করেন। তারপর আসে রথযাত্রার মুহূর্ত। কথিত আছে, রথে উপবিষ্ট জগন্নাথকে দর্শন করলে আর পুনর্জন্মের ভয় থাকে না। স্নানযাত্রা থেকেই সেই মহালগ্নের সূচনা হয়ে যায় শ্রীরামপুরের (Serampore) মাহেশে। জগন্নাথ দেবের মন্দির সংলগ্ন স্নান পীড়ি ময়দানে রথ উপলক্ষে প্রতি বছর ১ মাস ধরে চলে মেলা। প্রতিবছর নতুন সাজে সাজানো হয়। এবারও রথের (Serampore) রশিতে টান দিতে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করছেন মাহেশে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।