img

Follow us on

Friday, Nov 22, 2024

Mamata Banerjee Profile Pic: মমতার স্বাধীনতা প্রোফাইলে নেহরু বাদ, এলেন সর্দার প্যাটেল, অরবিন্দ

India At 75: পিছনেও নিশ্চিত থাকবে সেই রাজনীতির ভাবনাই। কি সেই রাজনীতি...?

img

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুকে বর্তমান প্রোফাইল ছবি । গত স্বাধীনতা দিবসের সময় দেওয়া ডিপি (ডানদিকে)

  2022-08-14 00:57:37

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার বদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপলক্ষ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবিতে সাজানো সেই প্রোফাইল ছবি। নীচে ট্রাই কালার রিবন। ৭৫তম বার্ষিকী লেখা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতে কোথাও জওহরলাল নেহরু নেই!

গান্ধী আছেন, অথচ নেহরু নেই। 'গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান অব ইন্ডিয়া' দাদাভাই নৌরজি আছেন, কিন্তু স্বাধীনতা সময়ে কংগ্রেসের নেতা জওহরলাল নেহরু নেই। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নেই অথচ আছেন দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। আছেন, বাল গঙ্গাধর তিলক-বিপিনচন্দ্র পাল-লালা লাজপত রাই। আছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসু, কিন্তু কোথাও জওহরলাল নেহরু নেই। কেন নেই? জানেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ব্যাপারটা এমন নয় যে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রোফাইল পিকচার বানিয়েছেন, তাঁদের কাছে নেহরুর ছবি নেই। বরং গত ৭৫ বছর ধরে যে দুজনের মুখের সঙ্গে দেশবাসী সবচেয়ে বেশি পরিচিত তাঁরা হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং জওহরলাল নেহরু। তাহলে কি শিল্পীর কাছে নির্দেশ ছিল ওই নির্দিষ্ট একজনের ছবি দেওয়া যাবে না। নইলে তিনি সেই ছবি ব্যবহার করলেন না কেন? কারণ এমন অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছবি আছে, যাদের ছবি বিরল। তাহলে কি জওহরলালের ছবি না রাখার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? তাহলে কি সচেতন বর্জন নেহরুকে? রাজনীতির মানুষ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। পিছনেও নিশ্চিত থাকবে সেই রাজনীতির ভাবনাই। কি সেই রাজনীতি...?

কি সেই রাজনৈতিক কারণ?  
বিশ্লেষকরা বলছেন, "সচেতন ভাবেই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলের পিকচারে জওহরলাল নেহরুর ছবি রাখতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোই এর পিছনের কারণ হতে পারে।"

কেন মনে হচ্ছে এমন কথা? কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর পিছনের যুক্তি কি? 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকের বক্তব্য, "অন্যান্য ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যাবে পিছনের যুক্তি। আসলে কখনও কখনও ছবিও কথা বলে।"
তাহলে চলুন দেখি কি কথা বলল নতুন ছবি। ছবির দিকে তাকিয়ে দেখুন। কারা আছেন ছবিতে?
 
আছেন সরোজিনী নাইডু, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদেদার। আছেন, বীণা দাস, যিনি জ্যাকসনকে গুলি করেছিলেন। আছেন কল্পনা দত্ত যিনি পরে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পিসি যোশীকে বিয়ে করে কল্পনা যোশী হয়েছিলেন। আছেন চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং, বটুকেশ্বর দত্ত যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়েই সাম্যবাদী ভাবধারায় পথ খুঁজছিলেন স্বাধীনতার। রাজনৈতিক ভাবে বামেদের শেষ করেই এই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছেন মমতা। সেই সিপিএমের আইকনিক স্বাধীনতার শহিদদের হঠাৎ এত গুরুত্ব কেন?  

তাহলে কি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বামেদের সমর্থনের জমিতে হাত বাড়াতে চাইছেন মমতা? নাকি সহিংস আন্দোলনের নেতাদের সামনে রেখেই চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনী সাম্পানে উঠতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বকে অস্বীকার করেই নিজেই নেতা হতে চান মমতা? সেই কারণে কি, কংগ্রেসের অতীত নেতাকে অস্বীকার করে, স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের ভূমিকাকেই ছোট করে দেখানোর চেষ্টা। কারণ লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের যে স্বপ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখছেন সেই তরী তীরে নিয়ে যেতে হলে দেশের সব রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা কংগ্রেসকে বড়দাদা হিসেবে মেনে চলতে হবে। কংগ্রেসকে নেতা মানতে আপত্তি একাধিকবার জানিয়েছেন মমতা। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বেচারি জওহরলাল নেহরুও কি মমতার "কংগ্রেস রোষে"র শিকার হলেন? 

আরও একটা যুক্তি তাহলে পাশাপাশি এসে যাচ্ছে। সেটা হল, জওহরলাল নেহরু নেই। কিন্তু স্পষ্ট ভাবে সেন্টার স্টেজে আছেন লৌহমানব বল্লভভাই প্যাটেল। নীচ থেকে দ্বিতীয় সারিতেই। যাতে প্রথমেই চোখ যায়। আর আছেন ঋষি অরবিন্দ ঘোষ, একেবারে উপরে দ্বিতীয় সারিতে। তাহলে নীচ থেকে দ্বিতীয় সারিতে বল্লভভাই প্যাটেল আর ওপর থেকে দ্বিতীয় সারিতে ঋষি অরবিন্দ! দুজনের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে। কোণাকুনি ডাইগোন্যাল। কেন? বিখ্যাত অঙ্কনশিল্পী জানাচ্ছেন, "অঙ্কন শৈলীর দিক থেকেও অরবিন্দ ও বল্লভভাই প্যাটেলের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মানুষ দেখার সময়, ওপরের বাঁদিক থেকে নীচের ডানদিকে দৃষ্টি চালায়। আমি আপনি সবাই তাই করি। সুতরাং অবস্থানগত ভাবেও ঋষি অরবিন্দ ঘোষ ও বল্লভভাই প্যাটেলের ছবিকেও গুরুত্ব দেওয়া। চোখে পড়ার কারণেই। 

প্রশ্ন হল বিজেপির আইকনিক দুই স্বাধীনতা যোদ্ধা বল্লভভাই প্যাটেল ও ঋষি অরবিন্দের ছবিকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনা কেন? বিজেপিকে তো রাজনৈতিক শত্রু মনে করেন মমতা। তাঁর কেন এলেন প্রোফাইলে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, "বল্লভভাই প্যাটেল ও ঋষি অরবিন্দের ছবির ব্যবহারও সচেতন ভাবেই করা হয়েছে। এটা বোঝাতে মমতা হিন্দু নেশনের রাজনৈতিক ধারণায় বিশ্বাসী। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে এখনও সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী মমতা নিজেই। তাঁর আপত্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহে। যাঁরা বারবার রাজ্য সরকারকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষক নিয়োগ থেকে কয়লা-বালি-গরু পাচার অবৈধ খাদান নিয়ে দুর্নীতির কথা। স্মরণ করাচ্ছেন মেলা উৎসবের নামে সরকারি অর্থের নয়ছয় না করে সময়োপযোগী উন্নয়নের পথে হাঁটতে। ফলে, মমতা বোঝাতে চাইছেন, 'বিজেপি ভাল। এখনকার নেতারা খারাপ।' উদ্দেশ্য হিন্দু ভোটের অংশ যাতে হাতছাড়া না হয়। বল্লভভাই প্যাটেল ও ঋষি অরবিন্দর ছবির ব্যবহার যদি 'ভাল বিজেপি'কে প্রথম মেসেজ হয়, তাহলে দ্বিতীয় মেসেজ, অবশ্যই; দেখুন নেহরুতে আপনাদের মতই আমারও আপত্তি।"

মমতার প্রোফাইল ঘিরে এত প্রশ্ন কেন উঠল সেটা বলি। বিধানসভা নির্বাচনের আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রোফাইল পিকচার বদলেছিলেন। তখন যেটা ব্যবহার করেছিলেন, যেটা প্রশান্ত কিশোরের টিমই বানিয়ে দিয়েছিল। বর্তমান প্রোফাইল ছবিও যদিও পিকে-র টিমেরই বানানো। পুরানোতে এই নেতারা কেউই ছিলেন না। যেখানে 'জয় হিন্দ, জয় বাংলা' স্লোগান লেখা ছিল। কারণ সামনে নির্বাচন বাংলায়। অতএব, পুরানো প্রোফাইলে, বাংলার বাইরের মাত্র তিন জন ছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, ভগত সিং আর বি আর অম্বেডকর। তফশিলি জাতি উপজাতি আর পঞ্জাবি ভোট টানতেই মমতার প্রোফাইলের ছবির সজ্জা। সঙ্গে বাঙালি আবেগ, রবীন্দ্র-নজরুল-নেতাজি। আর স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীর প্রোফাইলে বাংলা তো বটেই ভিনরাজ্যের একাধিক স্বাধীনতার লড়াইয়ের নেতার ছবি। তবে, বাদ গেছেন জওহরলাল নেহরু। বাদ গেছেন আরও এক জন। তিনি, বি আর অম্বেডকর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দাবি, অম্বেডকরের ছবি বাদ যাওয়াটা 'মিসটেক' হতেই পারে। কিন্তু নেহরুকে 'সচেতন বর্জন' করে দুই মেসেজ দিলেন মমতা। ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে। এক কংগ্রেসকে পাত্তা দিচ্ছি না। বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

Tags:

Mamata Banerjee

Jawaharlal Nehru

azadi ka amrut mahotsav

India independence day

India at 75

Mamata Banerjee Social Media Profile Picture

Sardar Vallavbhai Patel

Sri Aurobindo


আরও খবর


ছবিতে খবর