সেটিং তো দূরের কথা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার মমতাকে বিশেষ পাত্তা দেননি। প্রধানমন্ত্রীর হাবভাবও তেমন ভাল লাগেনি মুখ্যমন্ত্রীর। তাই বৈঠক শেষে দিদির মন ফুরফুরে ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মাধ্যম নিউজ ডেস্কঃ তিনদিনের দিল্লি সফর সেরে ফিরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata)। দিল্লি যাওয়ার পর থেকেই কলকাতায় সিপিএম-কংগ্রেস বলতে শুরু করে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেটিং করতে গিয়েছেন মমতা। ইডি-সিবিআইয়ের (ED-CBI) তৎপরতায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (SSC scam) এখন উচ্চগ্রামে চলছে। ৫১ কোটি নগদ উদ্ধার হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) বান্ধবীর ঘর থেকে। গত ১১ বছরে তোলাবাজি, সিন্ডিকেটবাজি করে যে সমস্ত তৃণমূল (TMC) নেতারা কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছেন, তাঁরাও চাইছিলেন দিদি যেন মোদির (Modi) সঙ্গে সেটিং করে ফিরে আসেন। তা হলে অন্তত ইডি-সিবিআইয়ের হাত থেকে তাঁরা বাঁচবেন। কিন্তু সেটিং কি হল? প্রধানমন্ত্রী কি বলেছেন মমতাকে?
দিল্লির খবরওয়ালাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সেটিং তো দূরের কথা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার মমতাকে বিশেষ পাত্তা দেননি। প্রধানমন্ত্রীর হাবভাবও তেমন ভাল লাগেনি মুখ্যমন্ত্রীর। তাই বৈঠক শেষে দিদির মন ফুরফুরে ছিল না। বরং দিল্লি থেকে চিন্তা নিয়েই কলকাতা ফিরে এসেছেন তিনি।
সূত্রের খবর, দিল্লি পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একান্ত বৈঠকে বসেছিলেন মমতা। মিনিট কুড়ির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে রিসেপশন পর্যন্ত সঙ্গী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনার এবং এক সাংবাদিক। অতীতে মোদির সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতাকে যেমন উৎফুল্ল দেখায়, এ বার তেমন ছিল না। অনেকেই মনে করছেন, বৈঠকে রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারিভাবে বলা হলেও আসলে ইডি-সিবিআই যেন ব্যানার্জী পরিবারে হাত না দেয়, সেই আর্জিই জানাতে গিয়েছিলেন মমতা। তাঁর যুক্তি ছিল, কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি কংগ্রেসকে কোণঠাসা করে দিচ্ছেন। বিজেপির সুবিধা হয় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাঁকে শুধু পশ্চিমবঙ্গটুকু ছেড়ে দেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রী মমতার কথা শুনে গিয়েছেন শুধু। কোনও আশ্বাস তো দূরের কথা সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অবস্থানে যে কোনও শিথিলতা দেখাবে না, তাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির মমতা, কিছু না বলেই ধরলেন কলকাতার উড়ান
পরের দিন বিকালে ছিল 'আজাদি কি অমৃত মহোৎসব' নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে মমতা থাকলেও মোদি দৃশ্যত পাত্তা দেননি মমতাকে। স্বাধীনতা ৭৫ উদযাপনের অনুষ্ঠান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) রিপোর্ট পেশ করেন অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশন (La Ganeshan)। মমতাকে একটি শব্দ বলারও সুযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকে জানাচ্ছেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, বৈঠকে উপস্থিত অন্য বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরাও মমতার সঙ্গে খেজুরে আলাপ করেননি। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির (Smriti Irani) সঙ্গে কিছুটা কথা বলে চলে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আসরে যোগ দেননি।
কেন্দ্রের টাকা নয়ছয়, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি শুভেন্দুর
এর পর শেষ বৈঠকটি ছিল নীতি আয়োগের (Niti Aayog) বৈঠক। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন মাত্র। অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দু-এক কথা বললেও মমতার সঙ্গে বাক্যালাপ করেননি। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে নীতি আয়োগের বৈঠকের মাঝপথেই কলকাতার বিমান ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। সংসদের অধিবেশনের শেষ দিনে চা চক্রে তৃণমূল সাংসদ নীতি আয়োগের বৈঠকের প্রসঙ্গ পাড়তেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সবার সামনেই বলেন, দিদি খুশি হয়েছেন?
বিজেপির অন্দরের লোকেরা জানেন এটি আসলে মোদিজির মোক্ষম খোঁচা। সেটিং করতে গিয়ে যে জোর ধাক্কা খেয়েছেন তাঁর প্রমাণ কলকাতা ফিরতে না ফিরতেই অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal) আগামীকাল সকাল ১১টায় তলব করেছে সিবিআই। দিল্লি থেকে অতিরিক্ত নির্দেশক অজয় ভাটনাগর এসেছেন চলতি মামলার তদন্ত করতে। আগামী কয়েক দিনেই বোঝা যাবে দিল্লির সফরে লাড্ডু মিলেছে কি না?