কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭টি বরোর মধ্যে আটটি বরোয় ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বালিগঞ্জ, বেক বাগান, শ্যামবাজার, কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট চিন্তাজনক।
মেয়রের ওয়ার্ড সর্বাধিক ডেঙ্গিপ্রবণ
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গি (dengue) আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি খেলা অব্যাহত। প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরেও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তেই সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠছে। আগষ্ট মাস থেকেই রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছে। কিন্তু তারপরেও ডেঙ্গি মোকাবিলার তুলনায় তথ্য গোপন নিয়েই বেশি ব্যস্ত প্রশাসনিক মহল। অন্তত সংশ্লিষ্ট মহলের এমনই অভিযোগ।
সূত্রের খবর, বেসরকারি হিসাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে রাজ্যে মোট আক্রান্ত পাঁচ হাজার। অর্থাৎ, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে গড়মিল আকাশ ছোঁয়া। বেসরকারি হিসাবে রাজ্যের প্রতিদিন গড়ে হাজারের কাছাকাছি মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধুমাত্র কলকাতাতেই গড়ে সাড়ে চারশো মানুষ দিনে ডেঙ্গি আক্রান্ত । যদিও স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব বলছে, আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি নয়।
আরও পড়ুন: রাজ্যে হু-হু করে বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ, নিজেকে বাঁচাবেন কী করে?
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭টি বরোর মধ্যে আটটি বরোয় ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ১,৬,৭,৮,৯,১০,১১ এবং ১২ নম্বর বরোয় ডেঙ্গি পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। অর্থাৎ, বালিগঞ্জ, বেক বাগান, শ্যামবাজার, কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় প্রত্যেক দিন যে হারে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার।
কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, ৬, ৬৯, ৮২, ৮৩ এবং ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি খারাপ। পুরসভা বিশেষ নজর দিচ্ছে। উল্লেখ্য, এরমধ্যে রয়েছে খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ওয়ার্ড। অর্থাৎ, ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। চেতলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক।
ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারপরেও সরকারের তথ্য নিয়ে লুকোচুরি জারি রয়েছে। 'টক টু মেয়র' অনুষ্ঠানে কলকাতার বাঁশদ্রোণী থেকে বেলগাছিয়া একাধিক জায়গার বাসিন্দারা মেয়রকে ফোন করে ডেঙ্গি সমস্যার কথা বলেছেন। প্রত্যেককেই অবশ্য মেয়রের উত্তর, পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। একাংশের মতে, এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কাজ জরুরি। কিন্তু পুরসভার সেই ভূমিকা নেই।
তবে, শুধু কলকাতা নয়। কলকাতার আশপাশের জেলাগুলোতেও ডেঙ্গির প্রকোপ মারাত্মক বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সমস্ত বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে। নিয়মিত যোগাযোগ রেখে একযোগে ডেঙ্গি মোকাবিলা করা হচ্ছে। এক কর্তার কথায়, "একদিনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নির্মূল করা যাবে না। তবে প্রশাসন তৎপর। যা প্রয়োজন, করা হচ্ছে। "
যদিও প্রশাসনের মনোভাব দায় সাড়া বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়, কতজন ডেঙ্গি আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হলো, সেই তথ্য যেন গোপন থাকে, সে দিকে।
এক চিকিৎসকের কথায়, "কয়েক বছর আগে চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত চৌধুরীর ঘটনা আমরা ভুলিনি। ডেঙ্গির আসল তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। তাই তাকে সরকারের কোপে পড়তে হয়েছিল। ডেঙ্গি নিয়ে হাসপাতাল প্রশাসন যতগুলো মিটিং করেন, তাতে বারবার তথ্য নিয়ে যেন মুখ না খোলা হয়, সে নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। কিন্তু একটা সংক্রামক রোগ বাড়লে, তা গোপন করা যায় না। গোপন করতে চাইলে বিপদ আরও বাড়বে। এটা কবে রাজ্য সরকার বুঝবে জানি না। "
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আরজিকর, এনআরএস, বেলেঘাটা আইডি, বাঙ্গুর হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগী ভর্তির জন্য শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক। তাই শয্যা না বাড়লে রোগী মৃত্যু আশঙ্কাও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
রাজ্যের ডেঙ্গি তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে শুধু চিকিৎসক মহল নয়, বিরক্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও। ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য ঠিকমতো নিয়মিত স্বাস্থ্য মন্ত্রকে ও পাঠানো হচ্ছে না। ফলে, কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ে অসুবিধা হচ্ছে। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, "কেন্দ্রের নিজস্ব মেকানিজম আছে। তারা তাদের মতো তথ্য সংগ্রহ করুন।"