Paschimbanga Chhatra Samaj: ছক কষে, আগাম অপপ্রচার! তাহলে কি ছাত্রদের ভয় পাচ্ছে কলকাতা পুলিশ?
নবান্ন অভিযান রুখতে তৎপর পুলিশ।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি করকাণ্ডে এর আগে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির তিক্ত স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে কলকাতা পুলিশ। গত ১৪ অগাস্ট আরজি করে (RG Kar Incident) ছলে-বলে-কৌশলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছিল। সে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা পুলিশকে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়। তাই মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানকে (Paschimbanga Chhatra Samaj) ভয় পাচ্ছে মমতা প্রশাসন। নানারকম অপপ্রচারও চলছে। প্রশ্ন উঠছে, মঙ্গলবারের অভিযান (Nabanna Abhijan) নিয়ে পুলিশের কাছে প্রচুর তথ্য অথচ, আরজি করে হামলার আগে পুলিশের কাছে এরকম তথ্য কেন ছিল না? নবান্ন অভিযানে দমন নীতি প্রয়োগের পরিকল্পনাও নিয়েছে মমতা সরকার। কিন্তু স্বাধীনতার আগের রাতে আরজি কর হামলার সময়ে এই বীর পুলিশ ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল কেন?
যে কোনও প্রতিবাদকে এখন ভয় পাচ্ছে মমতা প্রশাসন। তাই ছক কষে, আগাম অপপ্রচার চালিয়ে, বদনাম রটিয়ে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে রোধ করাই মমতার প্রশাসনের একমাত্র লক্ষ্য। আর সেই অপপ্রচারের অঙ্গ হিসেবে দুটি ভাইরাল অডিও-ভিডিও ক্লিপকে হাতিয়ার করে নবান্ন অভিযানকে (Nabanna Abhijan) আটকাতে তৎপর মমতার পুলিশ। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশ দাবি করে, নবান্ন অভিযানে দুষ্কৃতী ঢুকিয়ে গন্ডগোল পাকানো হবে। দাবির স্বপক্ষে গত ২ দিন ধরে অডিও-ভিডিও ভাইরাল ক্লিপ প্রকাশ করা হয় পুলিশ-প্রশাসন, এমনকী তৃণমূলের তরফে। কোথাও আবার আন্দোলেনর মুখ হয়ে ওঠা ছাত্র প্রতিনিধিদের চরিত্র-হননেও নেমে পড়েছে শাসক দল ও উর্দিধারীরা। বিরোধীদের দাবি, এর উদ্দেশ্য একটাই— গণ-আন্দোলনকে খাটো করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। কারণ, ছাত্রদের পুলিশ ভয় পেয়েছে। ছাত্রদের প্রশাসন ভয় পেয়েছে। তাঁদের দাবি, ভয় পেয়েছে বলেই ৬০০০ পুলিশ নামানো হচ্ছে, ১৯টি পয়েন্টে ব্যারিকেড করা হচ্ছে, নামানো হচ্ছে ২৬ জন ডিসিকে। জলকামান, বডি প্রোটেকটিভ গিয়ার, টিয়ার গ্যাসেরও প্রস্তুতি থাকছে। বিদ্যাসাগর সেতুর দু'পাশে অর্থাৎ কলকাতা ও হাওড়া দুই দিকেই ব্যারিকেড থাকছে।
আরও পড়ুন: ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমন নয়’’, মমতাকে সুপ্রিম-নির্দেশ মনে করালেন রাজ্যপাল
নবান্ন অভিযানের ঠিক আগে আচমকা ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার বিষয়টাকে সন্দেহজনক বলছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেছেন, ‘‘এখন তো দেখছি ভিডিও অন ডিমান্ড! যখনই দরকার হচ্ছে, একটা করে ভিডিও চলে আসছে। এই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। এটা ভুয়ো কি না, জানতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি লড়াই চালাব। বিজেপির পরিকল্পনা অথচ শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন না, আর মণ্ডল সভাপতি জেনে গেলেন?’’ ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটও দাবি করেছেন, “তৃণমূল মিথ্যা ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়াচ্ছে। আসলে স্বতঃফূর্ত আন্দোলনের ঝাঁঝ দেখে ভয় পাচ্ছে ওরা।”
উল্লেখ্য, সোমবার শাসকদলের তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, তাদের দাবি সেটা গেরুয়া শিবিরের যেখানে নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhijan) ঘিরে অশান্তি ছড়ানোর ছক কষা হয়েছে। কিন্তু বিজেপির তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে ছাত্রদের (Paschimbanga Chhatra Samaj) শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করে দিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
নবান্ন অভিযান
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) August 27, 2024
---------------
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ বিজয়ী ভব pic.twitter.com/UXQ0G9nOiX
অরাজনৈতিক নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhiyan) ঘিরে পুলিশ কতটা তটস্থ, তার প্রমাণ মিলেছে প্রশাসনের নিরাপত্তার বহর দেখেই। ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানকে আটকাতে যেন যুদ্ধে নামছে মমতার পুলিশ। চারজন আইজি র্যাঙ্কের পুলিশ অফিসার ছাড়াও থাকছেন ডিআইজি এবং এসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ সুপার, ডিসিপি বা কমান্ডান্ট পদমর্যাদার ১৩ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এডিসিপি পদের ১৫ জন, ডেপুটি পুলিশ সুপার বা এসিপি পদের ২২ এবং ২৬ জন ইনস্পেক্টর নবান্ন অভিযান ঠেকাতে মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি র্যাফ, ইএফআর, স্ট্রাকো বাহিনীর জওয়ান-সহ প্রায় ৬,০০০ পুলিশকর্মী নিযুক্ত থাকবেন। তাঁদের লাঠি থেকে শুরু করে হেলমেট, বডি প্রটেক্টিভ গিয়ার রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মিছিল আটকাতে বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। থাকছে জল কামান এবং ড্রোনের ব্যবস্থা। নবান্নর সামনে ৭ ফুট উঁচু উঁচু গার্ডরেল জুড়ে দেওয়া হয়েছে নাট-বল্টু দিয়ে। তার সামনে রাখা হয়েছে বালির বস্তা। এছাড়াও লোহা দিয়ে মাটির সঙ্গে দৃঢ় ভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে সেকেন্ড হুগলি ব্রিজে ওঠার আগেই রাস্তায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক লোহার ও বাঁশের ব্যারিকেড। প্রতিটি ব্যারিকেডের সামনে লাগানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা।
বিরোধীদের কটাক্ষ, মনে হচ্ছে যেন ছাত্রদের মিছিল ঠেকাতে নয়, কোনও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যের পুলিশ! অবশ্য, যে পুলিশ আরজি করের হামলার সময় ভয়ে পালিয়ে যায়, তাদের কাছে এটা তো যুদ্ধ হবেই! তারা বলছেন, মমতা কতটা ভয় পেয়েছেন, তা এর থেকেই প্রমাণিত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।