শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মাধ্যমিকে নজির গড়ল নদিয়ার এই কৃতী সন্তান…
শান্তিপুরের ছাত্র শুভজিৎ বিশ্বাস। নিজেস্ব চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ৮টি জটিল অস্ত্রোপচারে ডানহাত বাদ গেলেও মনের জোরে মাধ্যমিক দিয়ে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে শান্তিপুরের শুভজিৎ বিশ্বাস। তার সাফল্যে পরিবার এবং এলাকায় খুশির আবহ। মনের জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্যের নজির গড়ল নদিয়ার (Nadia) এই কৃতী সন্তান। তার বাবা কলকাতায় জন মজুররের কাজ করেন। মা লোকের বাড়িতে কাজ করেন। কোনও রকমে সংসার চালান, তাই আর্থিক অবস্থা ভালো না হবার কারণে মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে শুভজিৎ। তবে দীর্ঘ প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে ২০২৪ এর মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ায় খুশি নদিয়ার (Nadia) শুভজিৎ ও তার পরিবার।
ছোটবেলায় হাতে সাইকেল পড়ে যাওয়ায় গুরুতর আহত হয় হাত। তারপর কালের নিয়মে দিনের পর দিন অসুস্থ থাকার পর, হঠাৎই হাতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরবর্তীতে চিকিৎসকেরা জানান তার হাত কেটে বাদ দিতে হবে। তারপরেই বেঙ্গালুরুতে গিয়ে সমস্ত চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না থাকার কারণে ফিরে আসতে হয় বাড়িতে। তারপর কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্র প্রচার করে বাদ যায় ডান হাত। ঘটনায় রীতিমতো মনোবল ভেঙে পড়ে ২০২৪ এর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভজিৎ বিশ্বাসের।
নদিয়ার (Nadia) ছাত্র শুভজিৎ কথায়, “যখন হাত কাটা যায়, তখন মনোবল ভেঙে পড়ে আমার। কীভাবে পরীক্ষা দেব! তারপর বাবা-মায়ের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অদম্য জেদ চলে আসে আমার মাথায়। নিজের মনের জোরে বাম হাত দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তারপর দীর্ঘ দেড় মাসের প্রখর অনুশীলনে বাম হাতে লেখা অভ্যাস করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসি। তবে আমি ভেবেছিলাম পরীক্ষায় পাশ করতে পারব না। কারণ জটিল অস্ত্রোপচার, তারপর হাত বাদ যাওয়া এবং হাতে সময় কম থাকার কারণে পড়াশুনা একদম হয়নি। পরীক্ষার প্রশ্ন হয়েছিল অনেকটা কঠিন, যেটুকু পড়াশোনা করেছি, তাতে করে পাশ করাটা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু বাড়িতে পরিবারের সহযোগিতা এবং মনের অদম্য জেদ আমাকে সফলতার পথে নিয়ে গেছে। রাজ্য সরকারের কাছে কাতর আবেদন শুভজিৎ-এর (Nadia) যে যদি রাজ্য সরকার তার পড়াশোনার জন্য এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক কিংবা কোনও রকম সাহায্য করে, তাহলে খুবই উপকৃত হবে পরিবার।
আরও পড়ুনঃভোটের মুখে বিজেপি নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি, অভিযুক্ত তৃণমূল
অপরদিকে শুভজিৎ-এর বাবা ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘ চার বছর ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারেনি। তার হাতের অস্ত্রোপচারের কারণে পরীক্ষার আগে ডান হাতটা বাদ যাওয়ায় অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল পরিবারের সকলে। শুভজিৎ-এর ইচ্ছা ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তাই আমরা যথাসাধ্য তার মনবল বাড়িয়ে (Nadia) তাকে পরীক্ষায় বসার জন্য সহযোগিতা করেছি। তারপর সাফল্য আসে, তবে ওর রেজাল্ট যাই হোক না কেন, পাস করেছে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও, এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা। তবে রাজ্য সরকার যদি একটুখানি পরিবারের দিকে মুখ তুলে চায়, তাহলে উচ্চশিক্ষার জন্য শুভজিৎ-এর অনেকটাই সুবিধে হবে। এখন দেখার, রাজ্য সরকার এই দুস্থ পরিবারের পাশে কতটা দাঁড়ায়? নাকি অন্ধকারেই ভবিষ্যত কাটাতে হবে শুভজিৎ-এর পরিবারকে?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।