বন্দি ছিলেন সুভাষ, সেজে ওঠে সেই কারাগার, কোথায় জানেন?
নোয়াপাড়া থানার এই ঘরে নেতাজিকে রাখা হয়েছিল (বাঁদিকে), নেতাজির ব্যবহৃত কাপ-প্লেট (ডানদিকে) (নিজস্ব চিত্র)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জুটমিলের শ্রমিকদের সম্মেলনে যোগ দিতে বারাকপুরের শ্যামনগরে এসে ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Subhash Chandra Bose)। ৯৩ বছর আগের সেই স্মৃতি আজও অমলিন। নেতাজির স্মরণে একটি নেতাজি স্মৃতি গ্রন্থাগার তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নেতাজির উপরে নানা বই রয়েছে। বসানো হয়েছে নেতাজির পূর্ণবয়াব মূর্তি। মঙ্গলবার দিনভর নোয়াপাড়া থানায় নেতাজির ১২৮ তম জন্মদিন সাড়ম্বরে পালিত হয়। নেতাজির জন্মের সময় সোয়া ১২ টায় বাজানো হয় সাইরেন।
১৯৩১ সালের ১১ অক্টোবর ভাটপাড়ার গোলঘরে জুট মিল শ্রমিকদের সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Subhash Chandra Bose)। শ্যামনগরের চৌরঙ্গী কালীবাড়ির সামনে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ালেন নোয়াপাড়া থানার তৎকালীন ওসি মিস্টার ম্যাকেনজি। নেতাজিকে আর গোলঘরের ওই সম্মেলনে যেতে দেওয়া হল না। তাঁকে নিয়ে আসা হয় নোয়াপাড়া থানার লক আপে। সেখানেই কয়েক ঘণ্টা কাটাতে হয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। তিনি পুলিশের দেওয়া এক কাপ চাও খাননি। আশপাশের বাড়ি থেকে চা দিলে, তিনি তা খান। সেই কাপ-প্লেট আজও সংরক্ষিত রয়েছে। সেদিন থানার বাইরে কাতারে কাতারে মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। পরে তাঁর দাদা শরৎচন্দ্র বসু ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে যান নেতাজিকে। শর্ত ছিল আগামী দুমাস তিনি নোয়াপাড়া, ভাটপাড়া আসতে পারবেন না। আর এই ঐতিহাসিক ঘটনার জন্যই নোয়াপাড়া থানাকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। থানার নতুন বিল্ডিং তৈরি হলেও নেতাজির ইতিহাস বিজড়িত ওই লক আপ প্রায় একই রকম রয়ে গিয়েছে। যা নেতাজি স্মৃতি কক্ষ নামে পরিচিত। তবে, গারদের লোহার চাদর সরিয়ে কাঠের দরজা তৈরি করা হয়েছে। ঘরের ভিতরে রয়েছে নেতাজির ছবি। ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে। সেখানেই প্রতিদিন মাল্যদান করা হয়। নোয়াপাড়া থানার পুলিস কর্মীদের উদ্যোগে প্রতিদিন জ্বালানো হয় প্রদীপ।
বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ব্রিটিশ পুলিশ ভেবেছিল, নেতাজির কথা শুনলে শ্রমিকরা ব্রিটিশ শাসনের উপরে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবেন। ফলে, নেতাজির সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই ব্রিটিশ পুলিশ প্রস্তুত ছিল। শ্যামনগর চৌরঙ্গী কালীবাড়ির সামনে নেতাজির পথ আটকান তৎকালীন নোয়াপাড়া থানার ইনস্পেক্টর ম্যাকেঞ্জি। সুভাষচন্দ্রকে (Subhash Chandra Bose) নিয়ে আসা হয় নোয়াপাড়়া থানায়। আটকে রাখা হয় একটি ঘরে।
স্বাধীনতার পর বহু বছর নোয়াপাড়া থানার নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘরটি ভগ্নদশায় পড়েছিল। ২০১১ সালে ঘরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে দিনের বেহাল ঘর এখন সাদা টাইলস ও রঙে মুড়ে ফেলা হয়েছে। প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি এই ঘরটিতে সুভাষচন্দ্রের (Subhash Chandra Bose) ছবিতে ফুল-মালা দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়। থানা প্রাঙ্গণে নেতাজির পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান বারাকপুর পুলিস কমিশনার অলক রাজোরিয়া সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও স্কুলের কচিকাঁচারা। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।