img

Follow us on

Thursday, Dec 12, 2024

BSF: নেই কাঁটাতার, তার ওপর শীতকাল! অনুপ্রবেশ রুখতে বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজর বিএসএফের

Bangladesh: অশান্ত বাংলাদেশ! কীভাবে সীমান্তে ঘটছে অনুপ্রবেশ?

img

কাঁটাতারহীন সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি (সংগৃহীত ছবি)

  2024-12-12 14:48:37

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্বাধীনতার সময় থেকে শুরু। একঝাঁক হিন্দু চলে এসেছিল এই দেশে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, ১৯৭১ তপ্ত সময়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকে বহু অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে ভারতে। অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরেই ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। তারপরেই বাড়ে অনুপ্রবেশের ঘটনাও। যা সম্প্রতি সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পরে আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে সরকারকে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের সমস্যা, কেবল কোনও ঘটনাকেন্দ্রিক নয়। এই সমস্যা সারা বছরের। গোটা বছরেই সেনাকে ফাঁকি দিয়ে, জঙ্গল-জল পেরিয়ে ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসে বহু মানুষ। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফ-এর (BSF) কাঁধে। তাহলে কেন বার বার সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশিরা? কী ভাবে, কোন পথেই বা ঘটছে অনুপ্রবেশ?

কোথা দিয়ে কীভাবে ঘটে অনুপ্রবেশ? (BSF)

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের (Bangladesh) যতটা সীমান্ত এলাকা রয়েছে, তার অনেকটাই পড়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গে মূলত রয়েছে উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার, দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার (BSF) এবং খানিকটা অংশ পড়ে গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের আওতায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুপ্রবেশের একটা বড় কারণ হল বিশাল অংশের অরক্ষিত সীমান্ত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও, অনেকটা বড় অংশেই নেই কোনও বেড়াজাল। যেখান দিয়ে অনায়াসে রাতের অন্ধকারে ঘটে অনুপ্রবেশের ঘটনা।

আরও পড়ুন: চালিয়ে খেলছে শীত! কলকাতায় ১৩ ডিগ্রির ঘরে পারদ, বঙ্গে তাপমাত্রা নামল ১০-এর নিচে

কতটা এলাকা কাঁটাতারহীন রয়েছে?

সরকারি তথ্য বলছে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের (BSF) অধীনে বাংলাদেশ সীমান্ত ২ হাজার ২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে স্থল সীমান্ত রয়েছে ৯১৩.৩২৪ কিলোমিটার এবং জলসীমান্ত আছে ৩৬৩.৯৩০ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৫৩৮ কিলোমিটার এলাকায় কোনও কাঁটাতার নেই। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনে স্থলসীমান্ত রয়েছে ৯৩৬.৭০৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৭৫ কিলোমিটার অংশই কাঁটাতারহীন। গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ার অধীনস্থ কোচবিহারে ১৭৭ কিমি সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত এবং প্রায় ৬৭ কিলোমিটার জল সীমান্ত। কোচবিহারে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত কাঁটাতারহীন জায়গা। অর্থাৎ প্রায় ৯৬৩ কিলোমিটার অংশই কাঁটাতার বিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই ফাঁক গলেই প্রতিদিন ভারতে ঢুকে পড়ছে অনুপ্রবেশকারীরা। সরকারি তথ্য বলছে বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের অধীনস্থ এলাক.ধরা পড়েছে ১২২০ জন। ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে গত দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সংখ্যাটা আরও বেড়ে গিয়েছে বলেই দাবি বিএসএফের।

কী ভাবে ঘটে অনুপ্রবেশ?

সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের দাবি, অরক্ষিত সীমান্ত (BSF) দিয়ে চলে অনুপ্রবেশ। রাতের অন্ধকারে যখন কুয়াশার চাদরে দৃশ্যমানতা কমে আসে, তখন জল পথে ভারতে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীরা। ভারতের ভূখণ্ডে উঠেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চোরা পথে চলে যায় নিজেদের গন্তব্যে। কাছেই আছে বড় রাস্তা। তাই পালানো হয়ে ওঠে আরও সহজ। কোথাও রয়েছে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব তো কোথাও আবার পুলিশকে ঘুষ দিয়ে পগারপার হয় অনুপ্রবেশকারীরা। মূলত এই কারণেই শীতকালকে ব্যবহার করেন অনুপ্রবেশকারীরা। তা ছাড়া শীতের শুরুতে জলসীমান্তের নদীগুলিতেও জলস্তর নামতে থাকে। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীপথ পেরিয়ে নদীপারের ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়েও ভারতে প্রবেশ করেন অনেকে।

কোন কোন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ?

উত্তরবঙ্গের মহানন্দা আর দক্ষিণবঙ্গের জলঙ্গি ও ইছামতী নদীকে অনুপ্রবেশের 'হটস্পট' বলেও চিহ্নিত করেছেন বিএসএফ (BSF) কর্তারা। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন প্রায়ই রাতে চলে এই অনুপ্রবেশ। মালদা সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি বাংলাদেশের ভোলাহাট, শিবগঞ্জ, চাঁপাই, যশোর, নবাবগঞ্জের মতো এলাকা থেকেই ভারতের হয়ে হবিবপুর হয়ে নিয়মিত চলে অনুপ্রবেশ। তেমনই দক্ষিণবঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এলাকাতে ইচ্ছামতী নদীর অংশের ব্যপারটাও অনেকটা একইরকম। কেউ কেউ বলছেন পরে আবার স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীকে ঘুষ দিয়ে করে নিচ্ছে জাল পরিচয় পত্র থেকে ঘরবাড়িও।

সক্রিয় দালালচক্র!

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে দু'দেশের 'দালাল'দেরও বিশেষ ভূমিকা থাকে। সে দেশের পুলিশের নজর এড়িয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তের গন্তব্যে পৌঁছে দেন ও পারের দালালরা। এর পর ওয়াকিটকির মাধ্যমে এ পারের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদেরই সহায়তায় 'নো ম্যানস ল্যান্ড' থেকে অরক্ষিত সীমান্ত এবং জঙ্গলঘেরা নদীপথ দিয়ে অবৈধভাবে বাংলায় প্রবেশ করেন বাংলাদেশি নাগরিকরা। অনুপ্রবেশের পর মূলত দালালচক্রই অর্থের বিনিময়ে আধার, ভোটার এবং প্যান কার্ড বানিয়ে দেন বাংলাদেশি নাগরিকদের।

কী বলছে বিএসএফ?

বিএসএফ-(BSF) এর উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইনস্পেক্টর সূর্যকান্ত বলেন, “ফাঁসিদেওয়ার আশেপাশে অনেক কাঁটাতারহীন এলাকায় ইতিমধ্যেই কাঁটাতার বসানো হয়ে গিয়েছে। বাকি অংশেও বসানোর কাজ চলছে। বড় বড় ফাঁকা অংশেও ফেন্সিং-এর কাজ চলছে।” জানা গিয়েছে, অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রহরা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে। নজরদারি চালানো হচ্ছে থার্মাল ক্যামেরা, নাইট ভিশন ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোনের মাধ্যমে। সীমান্তে পারাপারের জায়গায় বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক মেশিন। বসানো হয়েছে অ্যালার্ম। বিএসএফের এক কর্তা বলেন, “সীমান্তে টানা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে অগাস্টের পর থেকে ও পার থেকে সংখ্যালঘুদের এ পারে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)-র সঙ্গে আলোচনা করে ওই সমস্ত সমস্যা মেটানো হচ্ছে। আর ফেন্সিং (কাঁটাতার)-এর জন্য জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারেরও ভাল সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রন্টিয়ারের অধীনে থাকা মোট সীমান্তের ১০ শতাংশে ফেন্সিং নেই। খুব শীঘ্রই সেই জায়গাগুলোতে ফেন্সিং লাগানো হবে।”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

West Bengal

Bangladesh

BSF

bangla news

Bengali news


আরও খবর


ছবিতে খবর