আকাশ থেকে এটিএম কার্ড পড়েছে পূর্ব বর্ধমানে! তোলপাড় প্রশাসন থেকে ব্যাঙ্ক
প্রতীকী চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আকাশ থেকে মাছ পড়া দেখেছেন? তবে সেসব গল্প বা কাল্পনিক হতে পারে। কিন্তু আকাশ থেকে এটিএম কার্ড পড়েছে পূর্ব বর্ধমানে (Purba Bardhaman)! যা নিয়ে এখন তোলপাড় প্রশাসন থেকে ব্যাঙ্ক সকলেই। তবে সবাই মুখে অদ্ভুত ভাবে কুলুপ এঁটেছে। আর এটিএম কার্ডের মালিকরা পড়েছেন মহা ফ্যাসাদে। তাঁদের মাথায় এখন আকাশ ভেঙে পড়েছে। তাঁরা কিছুই জানেন না। তাঁরা কোনও দিন এটিএম কার্ড তো দূরের কথা, অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাঙ্কের দরজায় যাননি। অথচ তাঁদের নামে গোছা গোছা এটিএম কার্ড। গোল বেঁধেছে এখানেই। তাঁরা হন্যে হয়ে ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন কিংবা ব্যাঙ্কের দরজায় ঘুরলেও কোন সুরাহা হয়নি। ফলে তাঁদের বিপদ বাড়ছে। প্রশাসনের গা-ছাড়া ভাব। ব্যাঙ্ক আবার এই কার্ডের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে।
জানা গেল কীভাবে?
ঘটনার সূত্রপাত মাস পাঁচ-ছয় আগে। হঠাৎই একজন ক্যুরিয়ার বয় এক ব্যাগ এটিএম কার্ড নিয়ে কালনা গ্রামে হাজির হন। কিন্তু কার্ড ভর্তি খামের উপর গ্রাহকের নাম-ঠিকানা মিললেও ফোন নম্বর মিলছিল না।ক্যুরিয়র বয় খামের উপর যে মোবাইল নম্বর ছিল, সেই নম্বরে ফোন করলে কাউকে পাচ্ছিলেন না। এদিকে ব্যাগ ভর্তি এটিএম কার্ড খুলতেই গ্রামের (Purba Bardhaman) বাসিন্দারা তো হাঁ হয়ে যান। দেখা যায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বর্ধমান শহরের কার্জন গেটের পাশে সিটি টাওয়ারে অবস্থিত শাখা থেকে কার্ডগুলি পাঠানো হয়েছে।
কী বলছেন বাসিন্দারা?
গ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, বলা হয়, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে ওই ব্যাঙ্কে। তাই তাঁদের মানে গ্রাহকদের নামে (Purba Bardhaman) এটিএম কার্ড এসেছে। আরও অদ্ভুত হল, এটি প্রথম কার্ড নয়। প্রথম বার এটিএম কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এবার দ্বিতীয় বার এটিএম কার্ড এসেছে। অথচ গ্রামবাসীরা পরিস্কার দাবি করেন, তাঁরা কোনও দিনই ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় কোনও অ্যাকাউন্ট খোলেননি। গ্রামবাসী সেখ মতিউর রহমান বলেন, তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে ব্যাঙ্কে গেলে প্রথমে তাদের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ পাত্তাই দেয়নি।পরে আরও বেশি লোকজন নিয়ে ব্যাঙ্কে গেলে ম্যানেজার জানান, তাঁদের নামে এখানে অ্যাকাউন্ট আছে। তাই এটিএম কার্ড গেছে বাড়িতে। তাঁরা আরও জানতে পারেন, গত কয়েক বছরে এক একজনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোটা টাকার লেনদেনও হয়েছে। অথচ গ্রামের মানুষজন পুরো অন্ধকারে। ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে দেখানো হয়, তাঁদের পাশবুকে তাঁদেরই ছবি। সেও এক অদ্ভুত। সেখ মতিউর রহমান বলেন, কেউ মাঠে একশো দিনের কাজ করছে, কেউ বাড়িতে রান্না করছে, আবার কেউ গোয়ালে কাজ করছে সেই অবস্থার ছবি দিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা এরপর প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। তবে তাতে এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। পাঁচ মাস ধরে নাকি তদন্ত চলছে।
শাসকদলের নেতারা জড়িত?
বিরোধীরের দাবি, এই গোটা ঘটয়ায় শাসকদলের নেতারা জড়িত। তাঁরাই এই সব কারসাজি করেছেন। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, দক্ষিণ দামোদর এলাকায় (Purba Bardhaman) যেমন প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়, তেমনি এখানে বহু সংখ্যক রাইসমিল আছে। একশ্রেণির অসাধু রাইসমিল মালিক স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগসাজশ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের নামে অবৈধ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সঠিক তদন্ত হলে আসল রহস্য বের হবে। একই দাবি করেন সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই ঘটনায় জড়িত। তিনিও সঠিক তদন্তের দাবি করেন। খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম জানান, এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে আসবে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, অভিযোগ জমা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
এই বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।