North 24 Parganas: পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে আর কতজন গ্রেফতার হল?
ধৃত মুহুরি সমীর দাসের বাড়়ি (নিজস্ব চিত্র)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: একতলা সাধারণ বাড়ি হয়ে যায় চারতলা প্রাসদোপম অট্টালিকা। আর সেটা হয়েছিল এক বছরের মধ্যে। করোনাকাল এবং তার পরবর্তী সময়েই পাসপোর্ট (Passport Scam) জালিয়তিকাণ্ডে ধৃত সমীর দাসের জাল নথির কারবারে রমরমা হয়েছিল। রীতিমতো একটি বিশাল চক্র তৈরি করে তিনি কারবার ফেঁদে বসেছিলেন। শুধু এপার বাংলা নয়, তার হাত ছিল ওপার বাংলা পর্যন্ত। সেখান থেকেও কাজের বরাত পেতেন তিনি। আর বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য তাঁর চাহিদাও খুব বেড়ে গিয়েছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে। তারাও সমীর দাসের চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। এছাড়াও টিকিয়াপাড়া থেকে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসাত আদালতে (Passport Scam) মুহুরির কাজ করার সুবাদে ঝুঁকি এড়াতে আদালতের হলফনামা দিয়েই জাল নথি তৈরি করতেন সমীর। জাল নথিতে থাকত তাঁরই বাড়ির ঠিকানা। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে, নিজের ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়ো পরিচয় পত্র বানিয়ে দিতেন সমীর। ইতিমধ্যেই তাঁর ২ ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পলাতক আরও একজনের খোঁজ চলছে। সমীর দাস গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন ওই ব্যক্তি। বারাসাতের নবপল্লিরই বাসিন্দা তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই সমীর দাস এবং তাঁর সহযোগীরা এই জাল নথির কারবার রমরমিয়ে চালাচ্ছিলেন। অথচ অন্ধকারে ছিল প্রশাসন। সূত্রের খবর, গত বছর মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে অচলাবস্থা শুরু হওয়ার পরে, ওপার বাংলা থেকে এপারে আসার চাহিদা বেড়েছে। সেই সঙ্গে হেরফের হয়েছে সমীর দাসের তৈরি করা রেট চার্টেও। টাকার অঙ্ক বেড়েছে বই কমেনি। কোনও জনপ্রতিনিধির থেকে শংসাপত্র নেওয়ার প্রয়োজনই ছিল না। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা আসতেন, তাঁরা আগেই যোগাযোগ করতেন সমীর দাসকে। রীতিমতো বরাত দেওয়া হত। এপারে নথি তৈরি হলে খবর পৌঁছে যেত পড়শি দেশে। তারপরই হত অনুপ্রবেশ। আর আদালতের হলফনামার সাহায্যেই যাবতীয় নথিপত্র পৌঁছে যেত অনুপ্রবেশকারীদের হাতে।
সমীর দাসের যে দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে (Passport Scam) গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজনের নাম কৌশিক মণ্ডল। অন্যজন চন্দন চক্রবর্তী। জানা গিয়েছে, কৌশিক মণ্ডলের বাড়ি বারাসাতের চৈতন্য নগরে। বারাসাতের চাঁদুর মোড়ে শীতলাতলা রোডে একটি দোকান ছিল তাঁর। দোকানের বয়স তিন বছর। আধার কার্ড,প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড সংশোধন-সহ বিভিন্ন নথি তৈরির কাজ হতো ওই দোকানে। তিন বছর ধরে চুটিয়ে চলছিল ব্যবসা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইরে থেকে অনেক লোক এসে এই দোকানে ভিড় জমাতেন। অনেক রাত পর্যন্ত চলত কাজ। কৌশিক ওই দোকানে রেশন কার্ড তৈরি করতেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সংশোধনের জন্য চড়া দামও নেওয়া হতো, প্রায় ৪০০ টাকা। এমনই অভিযোগ করেছেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। কোনও পরিস্থিতিতেই 'রেট' কমত না। আর শুধু বারাসাত কিংবা অন্যান্য শহরতলি নয়, কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তেও ছড়িয়ে রয়েছে সমীর দাসের এই জাল নথি কারবারের সহযোগীরা।
জাল পাসপোর্টকাণ্ডের (Passport Scam) তদন্তে নেমে জাল নথি তৈরির অভিযোগে টিকিয়াপাড়া থেকে ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। ধৃতরা মোটা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জাল নথি তৈরি করে দিত বলে অভিযোগ। ধৃতদের জেরা করে তারা জাল পাসপোর্টচক্রের সঙ্গে যুক্ত কি না জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃতরা হল বিশ্বজিৎ দে ও ফাহরুখ আনসারি। দীর্ঘদির ধরে জাল নথির কারবারে যুক্ত এরা। জাল মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট, জাল বার্থ সার্টিফিকেট, জাল স্ট্যাম্প পেপার থেকে শুরু করে হেন কোনও জাল নথি নেই যা এরা তৈরি করে না। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তারা কাদের কাদের জাল নথি তৈরি করে দিয়েছেন তা জানার চেষ্টা চলছে। ধৃতদের সঙ্গে জাল পাসপোর্ট চক্রের যোগ রয়েছে কিনা তাও জানার চেষ্টা চলছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।