Supreme Court: কাউকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তো কাউকে আবেদন করার আগেই ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে! মমতার সরকারের হলফনামা ঘিরে চাঞ্চল্য...
ওবিস সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের হলফনামা ঘিরে চাঞ্চল্য।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে পাওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট (OBC List in Bengal) বাতিল করে দিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ফলে আদালতের নির্দেশ মূলত কার্যকর হতে চলেছে তৃণমূল আমলে ইস্যু করা ওবিসি শংসাপত্রের উপরেই। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছে রাজ্য। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) রাজ্য সরকার এ নিয়ে হলফনামা জমা দেয়। সেই হলফনামায় উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি মুসলিম জাতিকে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে! এমনকী, অনেককে তো আবেদনের আগেই অন্তর্ভুক্ত করেছে রাজ্য সরকার! অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস প্রশাসন যে ৭৭টি জাতিকে ওবিসি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এদের মধ্যে ৭৫টি মুসলিম সম্প্রদায়।
সরকার দাবি করেছে যে, ওবিসি তালিকা (OBC List in Bengal) সম্প্রসারণ একটি জটিল তিন-স্তরের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, যার মধ্যে দুটি জরিপ এবং অনগ্রসর শ্রেণির কমিশনের একটি শুনানি অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাধারণত, ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রথম ধাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আবেদন করতে হয়।শ্রেণি, জনসংখ্যা, বসবাসের স্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক অবস্থার মতো বিভিন্ন তথ্য দিতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। সেই আবেদনপত্র পাওয়ার পরে সমীক্ষা চালায় কমিশন।
জানা গিয়েছে, কিছু মুসলিম গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে সম্পন্ন হয়েছে, যা সরকারের জটিল কাজের প্রকৃতি বিবেচনায় কার্যত অসম্ভব। হাইকোর্ট জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পরে যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে, তা যথাযথ আইন মেনে বানানো হয়নি। এর ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছে পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট, যার অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে মুসলিমদের ওবিসি সংরক্ষণের (OBC List in Bengal) আওতায় আনা হয়েছিল বামফ্রন্ট জমানায়। এরপর পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল সরকার। আদালত জানিয়েছে, মূলত 'নির্বাচনি মুনাফার' জন্য ওই ৭৭টি শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় যোগ করা হয়েছিল। যা শুধুমাত্র সংবিধানের লঙ্ঘনই নয়, মুসলিমদের অবমাননাও। ২০০৯ সালের ১৩ নভেম্বর খোট্টা মুসলিম সম্প্রদায় আবেদন করে এবং সেদিনই তারা ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। একইভাবে, ২০২০ সালের ২১ এপ্রিল জমাদার মুসলিম গোষ্ঠী আবেদন করে এবং সেদিনই তাদের ওবিসি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া, গায়েন এবং ভাটিয়া মুসলিম গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও একইভাবে দ্রুত অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, সাব-ক্যাটাগোরাইজেশন জরিপ এমন গোষ্ঠীগুলোর জন্যও সম্পন্ন হয়েছে, যারা এখনও কমিশনের কাছে আবেদনই করেনি। যেমন, কাজি, কোটাল, হাজারি, লায়েক, খাস এবং কিছু অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীর জন্য জরিপ ২০১৫ সালের জুনে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তাদের আবেদন অনেক পরে জমা দেওয়া হয়।
এই বছরের মে মাসে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ বাম ও তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দ্বারা ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ওবিসি শংসাপত্র (OBC List in Bengal) জারি করা ৭৭টি গোষ্ঠীর শংসাপত্র বাতিল করে। বিচারকরা লক্ষ্য করেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০৬ সালের সাচার কমিটির রিপোর্ট "বিস্তৃতভাবে" ব্যবহার করেছে, যা মুসলিমদের পিছিয়ে থাকার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আদালত এই রিপোর্টের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, অনগ্রসর জাতির তালিকায় নতুন ভাবে কয়েকটি সম্প্রদায়কে অন্তুর্ভুক্ত করা এবং ওবিসি শংসাপত্র জারি করার ক্ষেত্রে অনগ্রসর জাতি সংরক্ষণ আইন মানা হয়নি। নিয়মমাফিক জাতিগত সমীক্ষা হয়নি, খসড়া তালিকা সামনে আসেনি, কোন রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সংরক্ষণ তাও জানানো হয়নি। কেন কয়েকটি শ্রেণিকে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হল, সে বিষয়েও সঠিক তথ্য পেশ করতে পারেনি রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: ‘শান্তির সেতুবন্ধনই লক্ষ্য ভারতের’, কিয়েভে বার্তা মোদির, আজই জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক
ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে ২০১০ সালের বাম জমানায় সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ওই বছর মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য তখন ক্ষমতায় থাকা বামপন্থীরা ‘ওবিসি-এ’ ক্যাটেগরি তৈরি করেছিল। সে সময় অনগ্রসর জাতি (OBC List in Bengal) কমিশনের তরফে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকায় ৪২টি শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ জানানো হয়। এর মধ্যে ৪১টি ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরর সরকার ক্ষমতায় এলে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি ক্যাটেগরি মিলিয়ে আরও ৩৭টি শ্রেণিকে ওই তালিকায় যোগ করে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। যার মধ্যে ৩৫টি মুসলিম জাতি-গোষ্ঠী। এরাই পরবর্তী সময়ে ভোট রাজনীতির কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।