বুধবার মহা সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা গেরুয়া শিবিরে...
রবিবার ধর্মতলায় বিজেপির খুঁটিপুজো (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য সরকার যাঁদের নানাভাবে বঞ্চিত করেছে, তাঁদের নিয়েই বুধবার সভা করছে বিজেপি। সেই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে হাজির থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার সভাস্থানে সম্পন্ন হল খুঁটিপুজো। তার আগে বঙ্গ বিজেপির (BJP) নেতৃত্ব সেই স্থানে বসেই প্রধানমন্ত্রীর ১০৭ তম 'মন কি বাত' অনুষ্ঠান শোনেন। খুঁটিপুজো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল সহ অন্যান্যরা। বুধবার বিজেপির সভা সংখ্যার বিচারে অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাবে বলে আশাবাদী গেরুয়া শিবির।
হাইকোর্টের অনুমতিতেই হচ্ছে সভা
৯ বছর আগে, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর একই স্থানে সভা করেছিল রাজ্য বিজেপি। তখনও হাজির ছিলেন বিজেপির তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তারপর থেকে রাজ্যে বিজেপির (BJP) যথেষ্ট শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে বিরোধী দলের জায়গাও পেয়েছে বিজেপি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করেও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির। মিলেছে ১০ হাজারেরও বেশি গ্রাম সংসদের আসন। এমতাবস্থায়, গেরুয়া শিবিরের কাছে লোকসভা ভোটের আগে শক্তি প্রদর্শনের বড় মঞ্চ হতে চলেছে ২৯ নভেম্বরের সভা। সভার অনুমতি নিয়ে অবশ্য জলঘোলাও কম করেনি রাজ্য প্রশাসন। একই জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেস সভা করলেও বিজেপির সভায় আপত্তি তুলে প্রথমে অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ। এরপরে জল গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। উচ্চ আদালতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা পুলিশকে অনুমতি প্রদানের নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত, ওই একই স্থানে প্রতি বছর ২১ জুলাই সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে যে তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ যদি ওখানে হতে পারে, তবে বিজেপির সমাবেশ কেন নয়? বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। সেখানেও রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে ডিভিশন বেঞ্চ। সভার অনুমতি প্রদানের বিষয়ে একক বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ।
দুর্নীতি ইস্যুতে কোণঠাসা শাসকদল
প্রসঙ্গত, শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রামস্তরে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ির টাকায় কাটমানি নেওয়া, বার্ধক্য ভাতা এবং বিধবা ভাতার টাকা চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর পাশাপাশি রাজ্যস্তরে রেশন দুর্নীতি, শিক্ষা দুর্নীতি এবং গরু পাচারের মতো ঘটনায় শাসক দলের একাধিক নেতা বর্তমানে জেলবন্দি। লোকসভা ভোটের আগে দুর্নীতি ইস্যুতে অনেকটাই কোণঠাসা মমতা সরকার। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। গত অগাস্টে অভিষেক ও তাঁর দলবল কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে যখন দিল্লিতে একপ্রস্থ নাটক দেখায়, তখনই রাজ্যের বঞ্চিতদের নিয়ে পাল্টা সভার কথা ঘোষণা রাজ্য় বিজেপি (BJP)।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহল থেকে লোক আসবে বিজেপির (BJP) ভাড়া করা ন'টি ট্রেনে। একই সঙ্গে বুধবার হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে দুটি বড় মিছিল এসে মিশবে ধর্মতলায়। ধর্মতলার বিভিন্ন চত্বরে দশটি বড় মাপের বাক্স রাখা হবে। সেখানে বিজেপির সভায় যোগদান করা মানুষরা লিখিতভাবে জানাবেন যে কোন কোন প্রকল্প থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। আগামী দিনে এই আন্দোলন ব্লকস্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। সমস্ত অভিযোগ জমা করার পরে তা দিল্লিতে পাঠানো হবে। জানা গিয়েছে, বিজেপির সভায় অমিত শাহের ঢোকার কথা রয়েছে ঠিক দুপুর দুটো নাগাদ। রাজ্য বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পর্যন্ত প্রত্যেকেই নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলেছেন। সেখানে সমাবেশকে সফল করার স্লোগানও রাখা হয়েছে। বিজেপি (BJP) তরফ থেকে একটি থিম সং-ও লঞ্চ করা হয়েছে সমাবেশকে সফল করতে।
বুধবারের সভা নিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এক লক্ষ জমায়েতের কথা বলেছিলাম। কিন্তু যেভাবে আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে সাড়া পাচ্ছি, তাতে সংখ্যাটা অনেক বেশি হয়ে যাবে।’’ বিজেপির সভা নিয়ে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসক দল। সে প্রসঙ্গে জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘বিশ্বের বৃহত্তম দল বিজেপি। কোনও আঞ্চলিক দলের অনুকরণের দরকার পড়ে না আমাদের। তারা কী বলছে, তা নিয়েও আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। তৃণমূল বরং দলের প্রকৃত মালিক নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলমাল মেটাক।’’
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।