বিকট ঝাঁকুনিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তারপর দেখি চারিদিকে শুরু রক্ত
দুর্ঘটনার ঘটনার পর একটি কামরার অবস্থা। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গতকাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express) রেল দুর্ঘটনা গাইসালের রেল দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল। ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছেই হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, একটি মাল গাড়ি এবং হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস লাইন থেকে চ্যুত হয়ে পরস্পর ধাক্কা লেগে একের পর এক কামরা উপরে উঠে গিয়ে ব্যাপক দুর্ঘটনা ঘটে। সূত্রে জানা যায়, ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যাত্রীদের সংখ্যা ছিল সবথেকে বেশি। এই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা থেকে যাঁরা প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরেছেন, তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা এক কঠিন বাস্তবতার পরিচয় বহন করে। চোখের সামনেই ছিল মৃত্যু, সেই মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে তাঁরা ফিরলেন বাড়িতে।
এই রেল দুর্ঘটনায়, একেবারে প্রাণ হাতে করে নিয়ে ফিরেছেন বাসন্তীর ফুল মালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের লেবুখালীর দুই বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম মোল্লা এবং পারুল মোল্লা। দুই জনেই একই পরিবারের সদস্য, একজন শ্বশুর ও অপরজন বৌমা। তাঁদের বক্তব্য, শালিমার থেকে যাত্রা করে চেন্নাইতে যেতে চেয়েছিলেন তাঁরা। পারুল মোল্লা বলেন, আমার স্বামী চেন্নাইতে কাজ করেন। আমরা তাঁর কাছেই যাচ্ছিলাম। ট্রেনে (Coromandel Express) হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে সব কিছু উলট পালট হয়ে গেলে। মুহূর্তের মধ্যেই কামরার সকলে এদিকে ওদিকে ছিটকে পড়ে গেল। আমিও পড়ে গিয়ে দারুণ ভাবে কোমারে আঘাত প্রাপ্ত হই। তিনি আরও বলেন, আমাদের কামরাতে কেবল আমি, আমার শ্বশুর এবং আর দুই ব্যাক্তি বেঁচে ফিরেছি। বাকি সকল যাত্রী দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পারুল মোল্লা আরও বলেন, মনে হচ্ছিল আর মনে হয় বেঁচে ফেরা হবে না। বিশ্বাস করতে পারছিনা এত বড় রেল দুর্ঘটনার পরও বেঁচে আছি।
চেন্নাই মেট্রোতে কাজের জন্য শালিমার থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে (Coromandel Express) উঠেছিলেন সোনারপুরের সুকান্ত হালদার। রেলের দুর্ঘটনার পর কোনওক্রমে জীবন হাতে করে বালেশ্বরে থেকে বাসে কলকাতায় ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ট্রেন ঠিক সময়েই চলছিল, বিকাল ঠিক ৬ টা নাগাদ ট্রেনের মধ্যে তীব্র ঝাঁকুনি হয়, আর তারপর কিছুই বুঝতে পারলাম না। জ্ঞান ফিরতে দেখি, কামরার বাকি যাত্রীরা আর্তনাদ করছে। কামরার চারপাশ অন্ধকার, কামরার আশে পাশে অনেক রক্ত। অনেকেই যে চাপা পড়ে আছেন, তা তিনি দেখতে পান। সিটের সঙ্গে লাগানো একটি লোহার স্ক্রুপ লেগে পায়ে দারুণ আগাত পেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বাম হাত এবং পীঠের ডান দিকের অংশে অনেকটা করে কেটে গেছে বলে জানান। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর অনেক কষ্ট করে ট্রেনের কামরা থেকে বের হতে পেরেছিলেন সুকান্ত হালদার। তিনি বলেন, কামরা থেকে বের হয়ে বুঝতেই পারছিলাম না কী হল? সুকান্ত আরও বলেন, লাইনচ্যুত হয়ে একটা রেলের কামরা আরেকটা কামরার উপর উঠে গিয়েছিল। এতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। অত্যন্ত হতাশায় বলেন, জানিনা কামরার বাকি যাত্রীদের কী হয়েছে!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।