ইডির দাবি, "...নিজের পছন্দমাফিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক্তিয়ার এই মুহূর্তে তাঁর নেই। আসলে, অসুস্থ হওয়ার নাটক করছেন পার্থ।"
পার্থ চট্টোপাধ্যায়
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পার্থর শুনানিতে প্রভাবশালী তত্ত্ব। হাসপাতালে পার্থ ডনের মত আচরন করছেন। ইডিকে ধমকাচ্ছেন। সওয়াল ইডির আইনজীবীর। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম থেকে সরাতে চেয়ে ইডির আর্জি, শুনানি শুরুতেই কলকাতা হাই কোর্টে ইডি আইনজীবীর সওয়াল। এসএসকেএম হাসপাতালে গেলে ইডি অফিসারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছে না ইডির সঙ্গে।
শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তোলা হয় ব্যাঙ্কশাল আদালতে। তাঁকে দু’দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু ইডি সূত্রের খবর, পার্থকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করার যে নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত, তাতে তারা ‘অসন্তুষ্ট’। নিয়ম মেনে শুনানি হয়নি বলে তাদের অভিযোগ। তাই নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ওই দিন রাতেই প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়। রবিবার সকালে শুরু হয় শুনানি।
ইডির দাবি, আইনজীবী সওয়াল করেন স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশেই তদন্ত হচ্ছে। দু'দিন আগে ২১ কোটির বেশি টাকা এবং ২০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। নিম্ন আদালতে জামিন বাতিল হয়েছে। সোমবার ফের আদালতে তোলা হবে মামলা। এই নির্দেশের পর এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশ হয়। সেখানে ইডির কথা শোনাই হয়নি। অথচ, নিম্ন আদালতে তাঁকে তোলার আগে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁরা ফিট সার্টিফিকেট দেয়। তারপরও চিকিৎসায় বাধা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু বার বার নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালেই কেন? এই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে দুর্নীতি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।’’
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সুস্থ বলে জানিয়েছে আদালত। ইডির দাবি, "...নিজের পছন্দমাফিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক্তিয়ার এই মুহূর্তে তাঁর নেই। আসলে, অসুস্থ হওয়ার নাটক করছেন পার্থ।"
এসএসকেএম রাজ্যের প্রভাবশালীদের জন্য সেফ জোন। মদন-অনুব্রতর উদাহরণ টেনে মন্তব্য বিচারপতির। মন্ত্রী পার্থের আইনজীবীকে এমনই বললেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। পার্থর আইনজীবী দেবাশিস রায়ের দাবি, ইডি আইনজীবী আদালতকে সঠিক তথ্য দেয়নি। ইডি হাসপাতাল পরিবর্তন নিয়ে আলাদা আবেদন জানিয়েছিল। সেটা আগামিকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারক শুনানির জন্য রেখেছেন।
এসএসসি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, এসএসকেএমে ভর্তি হওয়া যাবে না। ঘটনাচক্রে গ্রেফতারির পর সেই এসএসকেএমেই ভর্তি হন পার্থ। যা নিয়ে বাদানুবাদে জড়ালেন দু’পক্ষের আইনজীবীরা। ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘ওঁকে (পার্থ) সর্বোত্তম হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি আমরা। এমস কল্যাণীতে নিয়ে যাব। সঠিক পরীক্ষা হবে।’’ তাঁর আগে, শুনানি চলাকালীন ইডির আইনজীবী শ্রীরাজুকে বিচারপতি চৌধুরী বলেন, ‘‘কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি ও জেনারেল মেডিসিন দিল্লির এমসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে করানো হোক।’’ পাল্টা ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘দিল্লি কেন, কল্যাণী এমসেও হতে পারে।’’
ইডি আইনজীবীর দাবির প্রেক্ষিতে বিচারপতি চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কল্যাণী এমসের উপর আমার ভরসা নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আপনি ভুবনেশ্বর এমসে থেকে দেখুন।’’ যার পরে ইডির আইনজীবী জানান, তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। তাহলে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যেতে অনুমতি দিচ্ছেন না কেন? প্রশ্ন ইডির।
বিচারপতি জানান, আমি বলতে পারি না তাই এইমসের ডাক্তার বলবে। কাল দুটোর মধ্যে ব্যবস্থা করুন। নির্দেশ কোর্টের। তাদের পরীক্ষার ফল এসএসকেএম এর রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। আপনারা কেন্দ্রীয় সংস্থা এই ব্যবস্থা করতেই পারেন। পরীক্ষা করে বেলা তিনটের সময় ফিরিয়ে দেব। সওয়াল ইডির। তবু ডাক্তারকে আনতে পারবেন না। কটাক্ষ পার্থর আইনজীবীর।
শেষে বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি কোথাও নিয়ে যেতে দেব না। সেখানকার চিকিৎসকেরা এখানে আসুন। আপনিও কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেলকে বলুন।’’ খবর লেখা পর্যন্ত, রায়দান সাময়িক স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি।