IAS Lalithalakshmi: পিএমও-র আগ্রহের কথা জেনে আপত্তি করার সাহস দেখায়নি নবান্ন...
আইএএস অফিসার ভি ললিতালক্ষ্মী
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় ভাবধারায় বড় হয়েছেন। দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্যের বাসিন্দা, বাঙালি আমলাকে বিয়ে করে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। নিজেও তিনি ২০০৮ ব্যাচের আইএএস অফিসার। অবসরে মীরার ভজন গান। করেন পুরাণ, উপনিষদ, মহাকাব্য চর্চা। সেই সব ভালো লাগা থেকেই ওঙ্কারনাথ মিশন আয়োজিত রামোৎসবে অংশ নিতে গিয়েছিলেন তিনি। ‘প্রশাসনে রামায়ণ’-এর বিষয়ে তাঁর আধ ঘণ্টার ভাষণ ছিল। আর তা এতটাই ব্যতিক্রমী ছিল যে, মাত্র তিনশো দর্শকের সামনে দেওয়া রামায়ণের ব্যাখ্যা কয়েক দিনেই ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও দেখেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মুগ্ধ হন তিনিও। খোঁজ পড়ে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস অফিসার ভি ললিতালক্ষ্মীর (IAS Lalithalakshmi)। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তাঁকে চলে যেতে হচ্ছে সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা পিএমও-র ডিরেক্টর হয়ে। যে বাংলায় আমলাদের দিল্লি যেতে হাজারো বাধা দেওয়া হয়, সেখানে পিএমও-র আগ্রহের কথা জেনে আপত্তি করার সাহস দেখায়নি নবান্ন।
এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের প্রশাসন এবং আমলা মহলে বেশ চর্চা চলছে। অনেকের মতে, ২০১৪ সাল থেকে ললিতালক্ষ্মী (IAS Lalithalakshmi) এবং তাঁর আমলা স্বামীর কার্যত এ রাজ্যে বনবাস চলছিল। কারণ তাঁরা ‘চটি-আমলা’ ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী এমন অফিসারকে খুঁজে সরাসরি পিএমও-তে নিয়ে যাওয়ায় জুনিয়র আমলাদের অনেকেই খুশি। গরু-কয়লা-চাকরি চুরির রাজ্যে আমলা হিসাবে কাজ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের যে সব জুনিয়র আমলাদের সর্বভারতীয় স্তরে হাসি-মস্করার শিকার হতে হয়, তাঁরা এই ঘটনায় আশার আলো দেখছেন।
তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে ললিতাদেবীর (IAS Lalithalakshmi) কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর বিষয়। এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। আমলার জীবনে বদলি থাকেই। যখন আইএএস হই তখন স্বপ্ন ছিল একদিন নর্থ ব্লক-সাউথ ব্লকে বসে কাজ করব। সেই সুযোগ এসেছে। এই ঘটনা রাজ্যের আমলাদের দেশের প্রশাসনিক তন্ত্রের উপর আস্থা বাড়াবে।” তবে ললিতাদেবী যাই বলুন না কেন, তাঁর পিএমওতে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা এখন রাজ্য প্রশাসনে সবার মুখে মুখে।
জানা যাচ্ছে, ওঙ্কারনাথ মিশনের রামোৎসবে অযোধ্যা সাহিত্য উৎসবে উদ্যোক্তারা তাঁকে রামায়ণের উপর বলতে অনুরোধ করেছিলেন। ললিতাদেবী (IAS Lalithalakshmi) নিজেই ‘রামায়ণে প্রশাসন’ বিষয় নির্বাচন করেন। মাত্র ৩০০ দর্শকের সামনে যজুর্বেদ, ঈষপোনিষদ, বাল্মিকী, তুলসীদাস থেকে রামায়ণের আধুনিক ব্যাখ্যাকারদের তত্ত্ব থেকে তিনি উপস্থাপন করেন রঘুপতি রামের আমলে প্রশাসন কেমন ছিল। তিনি ব্যাখ্যা করেন গান্ধীজি যে রামরাজ্য চেয়েছিলেন, সেই রামরাজ্য রামায়ণে কীভাবে বর্ণিত আছে। ৩০ মিনিটের সেই প্রবচন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যায় নরেন্দ্র মোদীর মোবাইলেও। তিনি পিএমও-র আধিকারিকদের ললিতালক্ষ্মীর খোঁজ করতে বলেন। জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু সিনিয়র আমলা দিল্লিকে জানান যে, এমন কোনও অফিসারের কথা তাঁদের জানা নেই। শেষ পর্যন্ত আরও খোঁজখবর নেয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। বিস্তারিতভাবে জানেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির কলকাতা ক্যাম্পাসের ডিরেক্টর ভি ললিতালক্ষ্মীর (IAS Lalithalakshmi) সম্পর্কে। শোনা যাচ্ছে, এ সব যখন চলছে তার বিন্দু-বিসর্গও টের পাননি রামায়ণের ব্যাখ্যাকার আমলা।
হঠাৎ একদিন পিএমও-র এক সিনিয়র কর্তা ফোন করে তাঁকে তাঁর কাজ সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন দিতে বলেন। বলা হয়, রামায়ণে প্রশাসন বিষয় নিয়েও তাঁর কথা শোনা হবে। পিএমওতে গেলে সিনিয়র কর্তারা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ললিতাদেবীর (IAS Lalithalakshmi) কথা শোনেন। পিএমও-র কর্তারা জানতেন, কীভাবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় উত্তর ২৪ পরগনার এডিএম থাকাকালীন নির্বাচনে কারচুপি করতে উদ্যত এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় আমলা দম্পতিকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ১২ বছর কার্যত গুরুত্বহীন দফতরে রেখে একপ্রকার নির্যাতন চালানো হয় ললিতা ও তাঁর বাঙালি আইএএস স্বামীর উপর। ১০-১১ বার কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে আসতে চাইলেও তাঁকে যে ছাড়া হয়নি তাও পিওমও-র কর্তারা জানতেন।
ঘণ্টাখানেকের সাক্ষাৎকারের পর পিএমও-র শীর্ষ কর্তারা জানতে চান, ললিতাদেবীর (IAS Lalithalakshmi) দিল্লি আসতে অসুবিধা আছে কি না? ফোন আসে নবান্নে। জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ললিতাদেবী সাউথ ব্লকে কাজ করুন। ছাড়পত্র চায়। যে নবান্ন ১০-১১ বার ললিতাদেবীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল, সেই নবান্ন তড়িঘড়ি এনওসি দিয়ে দেয়।
ঘটনাচক্রে সাক্ষাৎকার পর্বে পিএমও-র এক কর্তা হালকাচ্ছলে ললিতাদেবীকে (IAS Lalithalakshmi) প্রশ্ন করেন, আপনি রামায়ণের ব্যাখ্যা করতে অযোধ্যা গিয়েছিলেন। রামরাজত্ব নিয়ে প্রবচন দিয়েছেন। আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের আমলামহলের কেউ এখনও ‘ভক্ত’ বলে ব্যঙ্গ করেননি? হাসির রোল ওঠে সেখানেই। আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ডিরেক্টর পদে যোগ দিচ্ছেন ললিতালক্ষ্মী। এ বছরই শেষ লগ্নে অযোধ্যায় প্রভু রামলালা গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা পাবেন। রামায়ণে প্রশাসনও প্রতিষ্ঠা পাবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।