Police Investigation: আরজি করকাণ্ডে পুলিশি তদন্ত নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছে চিকিৎসক মহল?
প্রশ্নের মুখে পড়ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, সংগৃহীত চিত্র।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
দিনের বেলায় রোগীর ভিড়, ট্রলির আওয়াজ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যস্ততার ছবিটা সূর্যাস্তের পরেই দ্রুত বদলে যায়! রাত বাড়লেই একেবারে ভিন্ন ছবি! রাতের অন্ধকারে যেন এক অজানা হাসপাতাল চত্বর! এবার এমনই কথা জানালেন আরজি কর হাসপাতালের (R G Kar Hospital) এমবিবিএস পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালের একাধিক কুকীর্তি জানার জেরেই নিগৃহীতার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল। ঘটনার পর থেকেই পুলিশের তদন্ত নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠছে। আরজি করকাণ্ডে বারবার প্রশ্নের মুখে পুলিশি তদন্ত। মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় একের পর এক অভিযোগ উঠছে। আর সব চেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা। রাজ্যের চিকিৎসক মহলের একাংশের অভিযোগ, প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করার একাধিক পথ থাকলেও পুলিশ কেন দেরি করছে! আর এখানেই অভিযোগ উঠছে, ক্ষমতাবান ব্যক্তির সম্পর্ক থাকার জেরেই কি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে একাধিক প্রশ্ন?
যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তদন্তে কোনও ত্রুটি থাকবে না। দ্রুত সকলের সঙ্গে কথা বলা হবে। সব রকম পদক্ষেপ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রবিবারের মধ্যে ঘটনার সম্পূর্ণ কিনারা করতে না পারলে কলকাতা পুলিশ তদন্তের (Police Investigation) দায়িত্ব থেকে সরে যাবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছে, ঘটনার পরে ১০দিন পেরিয়ে গেলে একাধিক তথ্য ও প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দশ দিন পরে অন্য তদন্তকারী সংস্থা দায়িত্ব নিলে কতটা তথ্য জোগাড় করতে পারবে, সে নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে।
আরজি কর হাসপাতালের একাংশ জানাচ্ছে, রাতের হাসপাতাল চত্বরে চলে একাধিক বেআইনি কাজ। নানান নিষিদ্ধ ওষুধ পাচার থেকে যৌন কেলেঙ্কারির মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। রাতে কর্তব্যরত একাধিক চিকিৎসকের নজরেও পড়ে সেই ঘটনা। কলেজের ইন্টার্ন থেকে স্নাতকোত্তর ট্রেনি চিকিৎসক, রাতে পরিষেবার দায়িত্বে থাকা একাধিক পড়ুয়ার চোখের সামনেই ঘটে এমন নানান অবৈধ ঘটনা। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছে, মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে এমন নানান ঘটনার অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। তাই অবাধে চলত বেআইনি কাজ।
কলেজের এমবিবিএস-র শেষ বর্ষের পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছে, আরজি কর হাসপাতালে (R G Kar Hospital) শাসক দলের একাধিক নেতার আত্মীয়রা পড়াশোনা করেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে এই সব বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও রকম প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়েনি বলেও তাঁরা অভিযোগ করছেন। পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছে, মাস দুয়েক আগে থেকেই প্রভাবশালী বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের সঙ্গে নিগৃহীতার বচসা শুরু হয়। নিগৃহীতা একাধিকবার তাদের কাজের প্রতিবাদ জানান। তাকে নানা রকম হেনস্থা ও হুমকির সম্মুখীন হতে হয় বলেও অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন মহলে জানানোর পরেও কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান, নিগৃহীতা তাঁর বাবা-মাকে বারবার জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে নাইট ডিউটি করতে তাঁর ভালো লাগে না। তাঁর মুখ বন্ধ করতেই এমন ভয়ানক অপরাধ ঘটল বলেও মনে করছেন আরজি কর হাসপাতালের অন্দর মহলের অনেকেই।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছে, মৃতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যথাযথ ভাবে বিশ্লেষণ করলেই নানান প্রশ্নের জট খুলে যাবে। ঘটনার পরে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয় বলেই স্পষ্ট জানাচ্ছে চিকিৎসকদের একাংশ (R G Kar Hospital)। চিকিৎসক সূবর্ণ গোস্বামী জানান, মৃতার দেহ থেকে ১৫০ গ্রাম রক্ত মিশ্রিত সিমেন স্যাম্পেল পাওয়া গিয়েছে। ফলে, স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, একাধিক ব্যক্তি ওই মহিলা চিকিৎসককে নিগ্রহ করেছে। আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত আরেক চিকিৎসক-শিক্ষক বলেন, ঘটনার রাতে সেমিনার রুমের আশপাশে জনা চারেক ইন্টার্ন যাতায়াত করেছে। তার প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু তারপরেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। এই অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্যের চিকিৎসক মহলের একাংশ পুলিশের তদন্ত (Police Investigation) নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।