img

Follow us on

Thursday, Oct 24, 2024

Raghu Dakat: ল্যাটামাছ পোড়া দিয়ে কালীপুজো, দিতেন নরবলিও, কে ছিলেন এই রঘু ডাকাত?

Kali Pujo: চাষির ছেলে থেকে রঘু ডাকাত হয়ে ওঠার কাহিনি জানেন?

img

রঘু ডাকাত (সংগৃহীত ছবি)

  2024-10-23 17:50:26

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রঘু ডাকাতকে নিয়ে লৌকিক-অলৌকিক গল্পকথার শেষ নেই। মুখে মুখে উড়ে বেড়ানো সে সব জনশ্রুতির খোসা ছাড়িয়ে প্রকৃত ইতিহাসে পৌঁছনো খুব সহজ নয়। ইতিহাসের তথ্যপ্রমাণ বলে, রঘু ডাকাত জন্মেছিলেন অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে, অবিভক্ত বাংলার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। জন্মসূত্রে তাঁর নাম রঘু ঘোষ (Raghu Dakat)।  

কীভাবে ডাকাত হলেন রঘু? (Raghu Dakat)

প্রায় দুশো বছর আগের কথা। সুতানুটি, গোবিন্দপুর, কলিকাতায় তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবপ্রভুরা। আর বাংলার গ্রামদেশে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে নীলকর সাহেবদের দল। নীল চাষে জমির উর্বরতা নষ্ট হত। অন্য ফসল ফলত না আর। কিন্তু সেসব কথা লালমুখোরা শুনবে কেন! যে সব চাষিরা নিজেদের জমিতে নীল চাষে আপত্তি জানাত, তাদের পেয়াদা দিয়ে তুলে আনত তারা। চলত মারধর, অত্যাচার। বাদ যেত না চাষিদের পরিবার পরিজনেরাও। শোনা যায় রঘু ডাকাতের (Raghu Dakat) বাবাও ছিলেন এমনই একজন সাধারণ চাষি। নীল চাষে রাজি না হওয়ায় নীলকরের পেয়াদা এক রাতে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। সাহেবকুঠিতে ভয়ংকর অত্যাচারে অসহায়ভাবে মারা যান রঘুর বাবা। বাবার এই নির্যাতন আর অন্যায় মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি তরুণ রঘু। এই হত্যার বদলা নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই লাঠিখেলায় বেশ পোক্ত ছিলেন রঘু। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের সামনে সেই লাঠিকেই অস্ত্র হিসেবে তুলে নিলেন তিনি। তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল একরোখা আরও একদল মানুষ। গড়ে উঠল লাঠিয়াল বাহিনী। যাদের প্রথম কাজই ছিল নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। দলবল নিয়ে একের পর এক নীলকুঠিতে চড়াও হন রঘু ঘোষ। লুটপাট চালান, জ্বালিয়ে দেন নীলকরদের ঘরবাড়ি। ধীরে ধীরে এলাকার অত্যাচারী জমিদার-মহাজনদের ত্রাস হয়ে ওঠেন রঘু।

কাদের লুট করত রঘুর বাহিনী?

শুধু নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিশোধ নেওয়াই নয়, ছোট-বড় যে কোনও শোষণযন্ত্রের কাছেই রঘু ডাকাত (Raghu Dakat) ছিল মূর্তিমান যম। সদলবলে বড়লোকদের বাড়িঘর টাকাপয়সা লুট করা শুরু করেছিল তারা। সেসময় যারাই সাধারণ মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত করত, তাদের বাড়িতেই হানা দিত রঘু ঘোষের দল। জ্বালিয়ে দেওয়া হত জমির বেনামি দলিল, পুড়িয়ে দেওয়া হত অন্যায়ভাবে হস্তগত করা গরিবের ধন-সম্পদের খতিয়ান। প্রায় কপর্দকশূন্য করে ছেড়ে দেওয়া হত তাদের। কখনও কখনও পিটিয়ে মারা হত অত্যাচারী শোষক জমিদার জোতদারদের। আর লুণ্ঠিত টাকা পয়সার সবটাই ভাগ-বাটোয়ারা করে দেওয়া হত সাধারণ গরিব প্রজাদের ভিতর।

দিনে দিনমজুর, রাতে ডাকাতি!

হুগলির যে সাতটা গ্রাম নিয়ে সপ্তগ্রাম বন্দর, তার অন্যতম গ্রাম বাসুদেবপুর। সপ্তগ্রাম থেকে পাণ্ডুয়ার দিকে যেতে পূর্ব দিকে নেমে গিয়েছে এক পায়ে চলা পথ, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এই পথ এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে সুদূর গঙ্গাতীরে, ত্রিবেণীতে। এটা সেই সময়ের কথা যখন গোরুর গাড়ি ভিন্ন যানবাহন ছিল না। সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিতেন ক্রোশের পর ক্রোশ পথ। ত্রিবেণীতে গঙ্গা স্নানের সংকল্প নিয়ে সে সময় বহু পুণ্যার্থী মানুষের যাতায়াত ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই সুঁড়িপথে। এ পথের উত্তর পাড়ে বাগহাটি গ্রাম, এই বাগহাটি জয়পুর গ্রামেই সেসময় আস্তানা গেড়েছিল রঘু ডাকাতের দল। তারা দিনের বেলা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো ক্ষেতমজুরের কাজ করত, আর সূর্যাস্তের পর রাতে এলাকার ধনী ও প্রভাবশালীদের বাড়িতে ডাকাতি (Raghu Dakat) করতে বের হত।

ল্যাটামাছ পোড়া দিয়ে কালীর পুজো করতেন রঘু

বাংলার ডাকাতদের (Raghu Dakat) অধিকাংশই মা কালীর পরম ভক্ত ছিলেন। অমাবস্যার রাতে ভক্তি সহকারে কালীপুজো করে, সিঁদুর আর বলির রক্ত মেশা তিলক পরে তবেই লুটপাটে বের হতেন তাঁরা। বাগহাটির জয়পুরের বাসিন্দা বিধুভূষণ ঘোষ সম্পর্কে রঘু ডাকাতের ভাই। দুই ভাই মিলেই দল চালাতেন সে সময়। পুলিশের ভয়ে সেসময় দুভাই গা ঢাকা দিয়েছিলেন দেবীপুরের ঘন জঙ্গলে। সেই বনের মধ্যেই তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন আরাধ্যা মা কালীর মন্দির। রঘু ডাকাতের দলবল জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া আসা করা ধনী মানুষজনদের টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে তাদের বেঁধে নিয়ে যেতেন মায়ের মন্দিরে। এরপর অমাবস্যা বা বিশেষ দিনে পুণ্যতিথি দেখে ঢাকঢোল পিটিয়ে পুরোহিত ডেকে হত নরবলি। এতেই নাকি তুষ্ট হতেন করাল বদনা মা কালী। এক চূড়াবিশিষ্ট সেই ডাকাত কালীমন্দির আজও আছে। লোকশ্রুতি বলে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে রঘু এই কালীমূর্তি খুঁজে বের করেছিলেন এক পুকুরের তলা থেকে। দেবী নিজেই রঘুর পুজো চেয়েছিলেন। এই কালীই বর্তমানে রঘু ডাকাতের কালী নামে জনপ্রিয় ও সিদ্ধেশ্বরী কালী হিসেবে এখনও ভক্তদের পুজো পান। ল্যাটামাছ পোড়া দিয়ে কালীর পুজো করতেন রঘু। আজও দেবীর প্রসাদে একইরকমভাবে ব্যবহার করা হয় পোড়া ল্যাটামাছ।

রামপ্রসাদ ও রঘু ডাকাত

কার্তিকের অমাবস্যা তিথি। কিন্তু, সেদিনই পথঘাট আশ্চর্য নিঝুম, জনমানবশূন্য। রঘু পড়লেন মহা বিপাকে। মায়ের বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে, এদিকে বলির দেখা নেই। ঠিক সেদিনই নিজের বাড়ি হালিশহরে ফিরছিলেন সাধকশ্রেষ্ঠ রামপ্রসাদ (Ramprasad)। তাড়াতাড়ি ত্রিবেণীর গঙ্গাঘাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দৈবদুর্বিপাকে রঘু ডাকাতের কুখ্যাত জঙ্গলে পা রাখেন তিনি। রঘু ডাকাতের বাহিনী বলির জন্য প্রস্তুত করে রামপ্রসাদকে। হাসিমুখে মায়ের ইচ্ছে জ্ঞান করে ডাকাতদলের সব অত্যাচার সহ্য করেন তিনিও। সামনে রক্তজবায় সাজানো হাড়িকাঠ, খাঁড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জল্লাদ। কিন্তু মরে গেলে মা'কে তো আর গান শোনানো হবে না। তাই মৃত্যুর আগে মা কালীর সামনে একটি গান গাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন রামপ্রসাদ। অনুমতি দেন রঘু। গান শুনে ভাবান্তর হয়েছিল  রঘু ডাকাতের। জনশ্রুতি মতে, সেদিন যূপকাষ্ঠে রামপ্রসাদের বদলে আরাধ্যা দেবী কালীকেই দেখেছিলেন রঘু। তক্ষুনি রামপ্রসাদকে সসম্মানে মুক্তি দেন তিনি। ক্ষমা চান কবির কাছে। আর এরপর থেকেই মা সিদ্ধেশ্বরীর সামনে নরবলি দেওয়ার প্রথা এক্কেবারে বন্ধ করে দেন রঘু ডাকাত। চালু হয় পাঁঠাবলির রীতি।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

West Bengal

bangla news

Bengali news

Kali Puja

raghu dakat


আরও খবর


ছবিতে খবর