Ashwini Vaishnaw: রাজ্যের গাফিলতিতেই রেল-মেট্রোয় বিরাট লোকসান, ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যবাসী, কী বললেন রেলমন্ত্রী?
কলকাতা মেট্রো। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মমতা সরকারের দোষেই প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে কলকাতা মেট্রোতে (Rail Project)। সরকারের উদাসীনতার কারণেই একাধিক মেট্রো প্রকল্প লোকসানের শিকার হচ্ছে। রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ সমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্নের উত্তরে উত্তর দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। সেই সঙ্গে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) জানিয়েছেন, রাজ্যে একাধিক রেল প্রকল্পের কাজও থমকে রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য অনেক প্রজেক্টের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এই পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা সরকারের গাফিলতির কথা তুলে ধরেছেন রেল মন্ত্রী। উল্লেখ্য আগেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের একাধিক জনমুখী সুবিধা পৌঁছে দিতে টালবাহানার অভিযোগের কথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
রেলের (Rail Project) তরফ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) সংসদে লিখিত প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যে দেখা গিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কলকাতা মেট্রোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪৮৭.৩৭ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২৪.২৪ কোটি, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬৫.১১ কোটি টাকা। ক্ষতির কারণ হল রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রতি উদাসীনতা। অশ্বিনী জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে তেঘরিয়া পর্যন্ত লাইনে কাজের ক্ষেত্রে হলদিরাম (তেঘরিয়া) পর্যন্ত ব্যয় ৫০:৫০ অনুপাতে রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করা হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে রাজ্য সরকার কোনও সায় দেয়নি।”
মেট্রো (Rail Project) প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী আরও বলেন, “নিউ গড়িয়া থেকে দমদম এয়ারপোর্ট লাইনে ৩২ কিমি মোট রাস্তায় ৯.৮ কিমি লাইনের কাজ হলেও ২২.২ কিমি কাজ অত্যন্ত বিলম্বিত হচ্ছে। কাজের গতিতে ধীর, তার কারণ হল ট্র্যাফিক অন্যত্র সরানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি রাজ্য সরকার। একই চিত্র দেখা গিয়েছে জোকা থেকে বিবাদী বাগ পর্যন্ত ১৪ কিমি রাস্তার কাজেও। সব জায়গায় জমি জট একটি বড় সমস্যা। যেমন-নোয়াপাড়া থেকে বারাসত পর্যন্ত মোট রাস্তা হবে ১৮ কিমি। এখানেও ১৫.১৬ কিমি রাস্তার কাজে দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে মাইকেল নগর থেকে বারাসত পর্যন্ত ৮.১২ কিমি রাস্তা জমি জটের জন্য থমকে রয়েছে। অপর দিকে কলকাতা পুরসভা থেকে দেওয়া জলের পাইপলাইন রাজ্য সরকার অন্যত্র সরাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য বরানগর থেকে বারাকপুর লাইনে কাজে দেরি হচ্ছে। ফলে রাজ্য সরকার কোনও রকম ভাবে কাজের অগ্রগতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। তাতেই লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন।”
রেল প্রকল্পে (Rail Project) ক্ষতি প্রসঙ্গে অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন সেই সময় ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউপিএ ২ সরকারের সময়ের তুলনায় ২০২৪-২৫ চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গের জন্য রেলের প্রকল্পে তিনগুণ বাজেটে অর্থ বরাদ্ধ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে রেল প্রকল্পের বাজেট ছিল প্রতিবছর ৪৩৮০ কোটি টাকা। এখন এনডিএ জোট সরকার শুধুমাত্র ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বাজেট বরাদ্ধ হয়েছে ১৩,৯৪১ কোটি টাকা।”
আরও পড়ুনঃ ‘চিকেন্স নেক’ কবজা করে ভারতে নাশকতার ছক ছিল বাংলাদেশি জঙ্গিদের! জেরায় মিলল তথ্য
নবদ্বীপ ঘাট-নবদ্বীপ ধাম নিউ লাইন (Rail Project) প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, “বাংলায় রেল প্রকল্পের জন্য মোট জমির প্রয়োজন ৩০৪০ হেক্টর। তার মধ্যে জমি অধিগৃহীত হয়েছে ৬৪০ হেক্টর। মোট প্রয়োজনের মাত্র ২১ শতাংশ হাতে এসেছে। এখনও ২৪০০ হেক্টর বা ৭৯ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি রাজ্য সরকার। নবদ্বীপ ঘাট-নবদ্বীপ ধাম নিউ লাইনের মোট ১০৬.৮৬ হেক্টর জমি দরকার, কিন্তু এখনও প্রায় ১০৬.৬৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে। পাশাপাশি চন্দনেশ্বর-জলেশ্বর নিউ লাইনে মোট জমি প্রয়োজন ১৫৮ হেক্টর। ১ ছটাক জমিও এখনও অধিগ্রহণ করতে পারনি মমতা সরকার।”
বালুরঘাট-হিলি রেল প্রকল্পের (Rail Project) কথা তুলে ধরে অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও বলেন, “অপর দিকে নৈহাটি-রানাঘাট থার্ড লাইনে মোট জমির প্রয়োজন ৮৭.৮৩ হেক্টর। অধিগ্রহণ হয়েছে মাত্র ০.০৯ হেক্টর। যার মধ্যে ৮৭.৭৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে। আবার বালুরঘাট-হিলি নিউ লাইনে মোট জমির প্রয়োজন ১৫৬.৩৮ হেক্টর। অধিগ্রহণ হয়েছে ৬৭.৩৮ হেক্টর। এখনও ৮৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। একই ভাবে সাঁইথিয়া এবং সীতারামপুরে বাইপাসে মোট জমির প্রয়োজন ২২.২৮ হেক্টর। অধিগ্রহণ হয়েছে ২.২২ হেক্টর। ২২.০৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ এখনও বাকি। ফলে রাজ্যের রেল প্রকল্পগুলিও বিরাট মাত্রায় ঝুলে রয়েছে। রাজ্য সরকারের কোনও মাথা ব্যাথা নেই।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।