Nabadwip: রাস উৎসবে মেতেছে নবদ্বীপ, কোথায় কী থিম হয়েছে এক নজরে দেখে নিন
নবদ্বীপে রাসযাত্রার মণ্ডপ (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাসযাত্রা (Rash Yatra 2024) উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে নবদ্বীপ। নিত্যনতুন থিম আর বাহারি আলোয় জমজমাট তীর্থের এই শহর। রাস উৎসবে সামিল হতে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করা শুরু করেছেন নবদ্বীপে (Nabadwip)। আলোর রোশনাইয়ে নবদ্বীপ শহর এখন জ্বলজ্বল করছে। একে অপরকে টেক্কা দিতে থিমের ছড়াছড়ি।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রায় আড়াইশো বছর আগে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে নবদ্বীপে শাক্ত মতে রাসযাত্রা (Rash Yatra 2024) শুরু হয়েছিল! এখানে মূলত শক্তির দেবীদের পুজো করা হয়। প্রথম থেকেই শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। এই বিরোধ মেটাতেই উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ১৭৫২-৫৬ সালের মাঝামাঝি শঙ্করনাথ তর্কবাগীশ শক্তিমূর্তি গড়ে রাস পূর্ণিমার পুজো শুরু করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের তরফে আসে অর্থসাহায্য। শঙ্করনাথের ওই পুজোর পরের বছরই ব্যাদড়াপাড়ার ব্রাহ্মণরা শবশিবা মায়ের পুজো শুরু করলেন। কালীমূর্তির নীচে পর পর দু'টি শিব। এক দম নীচে শবরূপী শিব। তাঁর ওপরে সপ্রাণ শিব। একই মূর্তির পুজো হয় আমপুলিয়া পাড়াতেও। নবদ্বীপে রাসের দ্বিতীয় প্রাচীন প্রতিমা হল শবশিবা মাতার। স্থানীয় পুজো উদ্যোক্তাদের কথায়, শবশিবা মাতা কৃষ্ণচন্দ্রের গুরুদেব চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্যের ইষ্টদেবী। এখন যেখানে পুজো হয় সেটি ছিল তাঁর ভিটে। কমবেশি দেড়শো বছর আগে তাঁরা এখান থেকে চলে যান। পুজোর ভার নেন অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু ব্রাহ্মণেরা। চাঁদা তুলে এই পুজো হয়। নবদ্বীপের রাসের বিশেষত্ব তার মূর্তির বৈচিত্র্যে। মঙ্গলকাব্যের দেবী কমলেকামিনীর দেখা মেলে রাস উৎসবে। নবদ্বীপে স্মৃতিশাস্ত্র পড়তে আসা অশ্বিনী কুমার স্মৃতিরত্ন এই পুজোর সূচনা করেন। তাঁর পরিবারের উত্তরসূরীরা বর্তমানে সেই পুজো করছেন। বর্তমানে পুজো এলাকাবাসীর সাহায্যে হয়। পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে নবদ্বীপ তরুণ সঙ্ঘ।
মূলত নবদ্বীপে দুই দিন রাস (Rash Yatra 2024) হয়। শুক্রবার থেকে নবদ্বীপের রাসযাত্রা শুরু হয়েছে। আর আজ শনিবার নবদ্বীপে আড়ং চলবে অর্থাৎ যাকে আমরা বিসর্জন বলে থাকি। এবছরও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে শুভ সূচনা হওয়ার রাসে যে নিয়ম ছিল সেই একই নিয়মে রাস পালিত হচ্ছে। বেশ কিছু বারোয়ারি এবং কিছু প্রাচীন মন্দিরে এই রাস পালিত হচ্ছে। নবদ্বীপে মূলত শক্তির দেবদেবতাকে পুজো করা হয়।
এবছরও মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে নবদ্বীপের রাসযাত্রা। তাদের মধ্যে অন্যতম গৌড় বিষ্ণুপ্রিয়া সঙ্ঘ। প্রতি বছরই সাধারণ দর্শনার্থীদের কাছে চমক দিয়ে থাকে এই বারোয়ারি। এবছর তাদের ভাবনা ভূতের সার্কাস। তাদের এই নতুন থিম (Rash Yatra 2024) সাধারণের মন মাতিয়ে দেবে বলে মত বারোয়ারি কমিটির। অন্যদিকে, প্রাচীন মায়াপুর সাউথমাতা পুজো কমিটির ভাবনা কাঁটাতারের বেড়া। মূলত সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করেন, সেই চিত্রই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মণ্ডপের মাধ্যমে। পাশাপাশি শ্রী শ্রীকৃষ্ণ কালীমাতা এবার ১০০ বছরে পদার্পণ করল। মূলত এখানে মণ্ডপশয্যা না থাকলেও ঐতিহ্যবাহী এক অঙ্গে কৃষ্ণ এবং এক অঙ্গে কালী থাকে। তবে আরেক ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা তেঘরি পাড়া বড় শ্যামা মাতা। প্রতি বছর এখানে হাজার হাজার পাঁঠা বলি হয়। তবে এ বছর ট্রাস্টি বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনওরকম বলি দেওয়া যাবে না। তবে নবদ্বীপে আরেক ঐতিহ্যবাহী পরম্পরা রয়েছে। আগামীকাল ছোট-বড় প্রতিটি রাস কমিটি তাদের নিজেদের মণ্ডপে প্রতিমা পুজো দেওয়ার আগে প্রত্যেকে পোড়ামাতলায় যাবেন। সেখানে পুজো দেওয়ার পর নিজেদের মণ্ডপের প্রতিমাদের পুজো দেবেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।