১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন সিধু ও কানুর নেতৃত্বে ভাগনাদিহির মাঠে সমবেত হন হাজার হাজার সাঁওতাল ভাই-বোনেরা। এরপর কলকাতা অভিমুখে গণযাত্রা শুরু করেন তাঁরা।
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন হল সাঁওতাল বিদ্রোহ। সিপাহী বিদ্রোহের ঠিক দুবছর আগে এই আন্দোলন দানা বাঁধে। ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী, অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর মহাজনদের শোষণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য গড়ে তোলাই ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য । নিজেদের স্বাধিকার ছিনিয়ে নিতে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন সিধু ও কানুর নেতৃত্বে ভাগনাদিহির মাঠে সমবেত হন হাজার হাজার সাঁওতাল ভাই-বোনেরা। এরপর কলকাতা অভিমুখে গণযাত্রা শুরু করেন তাঁরা। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক সংগ্রামের জন্য সেই প্রথম মিছিল বা গণযাত্রার সূচনা হয়। তাই এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর ৩০ জুন পালিত হয় হুল দিবস।
হুল দিবস (Hool Divas) ওরফে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য দিন। ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায় সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল-এর সূচনা হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন সিধু (সিধো) ও কানু (কানহু)। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে একই পরিবারের ৬ ভাইবোন সিধু-কানু-বিরসা-চাঁদ-ভৈরব এবং দুই বোন ফুলমণি এবং ঝানু মুর্মুর সংগঠিত আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল।
আরও পড়ুন: বিচারপতির পাশাপাশি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারকও, জন্মবার্ষিকীতে আশুতোষ-স্মরণ
ইংরেজ আমলে স্থানীয় মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীদের শোষণ ও নিপীড়ন এবং ব্রিটিশদের অত্যাচারের শিকার হয়ে তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই এই আন্দোলনের সূচনা। স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে সাঁওতালরা। কিন্তু বিশ্বাস ভঙ্গ করেন কয়েকজন। ব্যক্তিস্বার্থে ভেসে গিয়ে ইংরেজদের ফাঁদে পা দেন কয়েকজন সাঁওতাল। ব্যার্থ হয় বিপ্লব। ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতার হন সিধু। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে ১৮৫৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভগনডিহির সন্নিকটে পাঁচকাঠিয়া বটবৃক্ষে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় কানুকে। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব।"
ব্যর্থ হলেও পরোক্ষে সাঁওতাল বিদ্রোহই সিপাহী বিদ্রোহের ভিত গড়ে দেয়। নীপিড়িত মানুষ বুঝতে পারে লড়াই করে বড় শক্তিকেও নাড়িয়ে দেওয়া যায়। অধিকার চাইলে পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়।