Junior Doctors Protest: তিন দাবিতে মান্যতা দিলেও মৌখিক আশ্বাসে ভরসা নেই, জুনিয়র ডাক্তারদের কোন কোন দাবি এখনও পূরণ হল না?
দাবি পূরণ হলে তবেই আন্দোলন থামবে, স্পষ্ট কথা জুনিয়র ডাক্তারদের। সংগৃহীত চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে ৩৮ দিন আন্দোলনের পর জুনিয়র ডাক্তারদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হল সরকার। আরজি কর কাণ্ডে আন্দোলনরত পড়ুয়া চিকিৎসকদের চাপে কার্যত মাথা নত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকে ভয় দেখিয়ে দমাতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হলেন। সোমবার গভীর রাতে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থকে বদলি করা হবে। সরানো হবে শিক্ষা অধিকর্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তাকেও। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজ, মঙ্গলবার বিকেল ৪টের মধ্যে সরকারি নির্দেশ আসবে। সরকার বৈঠক সদর্থক বললেও, জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের তিন দাবি পূরণের কথা মুখ্যমন্ত্রী মৌখিক ভাবে বললেও ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা। দাবি যতক্ষণ না বাস্তবায়িত হচ্ছে ততক্ষণ আন্দোলন থেকে সরছেন না তাঁরা।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর মুখের কথায় চিঁড়ে যে ভেজার নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদারের কথায়, “যতক্ষণ না অবধি এর বাস্তবায়ন ঘটছে, ততক্ষণ অবধি আমরা আমাদের আন্দোলন, অবস্থান, কর্মবিরতি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। আগে বাস্তবায়ন হবে, সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার শুনানি হবে, তারপর আমরা প্রত্যেকটা কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা সকলে বসে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেব। তার আগে নয়।” জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, আন্দোলনের ৩৮তম দিনে এসে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করলেন। তাঁর কথায়, “সুপ্রিম কোর্টে যেমন মামলা চলছে, তেমনই রাজ্য সরকারের কাছেও আমাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। বারবার আমরা তাই আলোচনায় বসতে চেয়েছি। আমাদের সদিচ্ছার কোনও অভাব ছিল না। ৯ তারিখের ঘটনা ও পরবর্তী ঘটনাক্রমে বাধ্য হয়েছেন উনি বলতে যে, সিপিকে সরানো হবে। ডিসি নর্থকেও সরানোর কথা বলেন।”
মুখ্যমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা বললেও জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে যত টাকাই দেওয়া হোক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আন্দোলনের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ বলেন, “প্রথম থেকে যে স্বচ্ছতার কথা আমরা বলেছি, সেটাই আমাদের শক্তি। আজ সরকার বাধ্য হয়েছে আমাদের দাবি মেনে নিতে। তবে এখনও বহু দাবি মানা বাকি। এখনও কোনও অর্ডার বেরোয়নি। তাই অর্ডার না বেরোনো অবধি আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা কোনও আপস করতে আসিনি। আমরা বিচার চাই। সেই বিচারের দাবিতে আমাদের লড়াই চলছে চলবে।”
আরও পড়ুন: আরজি কর-কাণ্ডে এবার ‘আকাশ দখল’, বিশ্বকর্মা পুজোয় কালো ঘুড়ি উড়িয়ে প্রতিবাদ
সোমবার হল বৈঠক। পাঁচ দফা দাবিতে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন। কিন্তু, সেই বৈঠকেও জুনিয়র ডাক্তারদের সব দাবি মানা হল না। আরজি কর কাণ্ডের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি, থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সরব হন জুনিয়র ডাক্তাররা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য সচিবকে সরানোর দাবি জানান। বৈঠকে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে বদল করা হবে। তবে স্বাস্থ্য সচিবকে সরানো হচ্ছে না। স্বাস্থ্য সচিবকে না সরানোয় আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা যে খুশি নন, তা তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, আরজি কর কাণ্ডের পর কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। আরজি করে ঘটনার পর সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন এসএসকেএমের জুনিয়র ডাক্তার অভীক দে। তাঁকে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট বলেছিলেন ডিসি সেন্ট্রাল। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও ডিসি নর্থকে সরানো হলেও ডিসি সেন্ট্রালের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এর পরই, আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা জানালেন, তাঁদের স্বাস্থ্য ভবন সাফাই অভিযান সম্পূর্ণ হয়নি। সব দাবি মানা হয়নি। ফলে, তাঁদের আন্দোলনও থামছে না। তাঁদের কর্মবিরতিতেও ছেদ পড়ছে না।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।