Lalbazar: ‘পুলিশ তোমার ডিএ বাকি, চটি কিনে দেব নাকি’, জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযানে উঠল পুলিশ-বিরোধী স্লোগান...
বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে একটানা ধর্নায় ডাক্তাররা। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গানে-স্লোগানে কলকাতার রাজপথে রাত জাগলেন চিকিৎসকরা। বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে একটানা ধর্নায় ডাক্তাররা। সোমবার এ এক অন্য রাত দেখল বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট। স্টেথো সরিয়ে সারা রাত গানে-গানে প্রতিবাদের (RG Kar Rally) ঝড় তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। উঠেছে স্লোগানও। অন্যদিকে, রাতভর চেয়ার পেতে ঠায় বসে উর্দিধারী পুলিশও। সোমবার রাতভর ধরনার পর মঙ্গলবার সকালেও রাস্তাতেই বসে তাঁরা।
রাত তখন প্রায় ৩টে ৪৫ মিনিট। হঠাৎই জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করেন আন্দোলনকারী (RG Kar Rally) চিকিৎসকরা। ভোরের আলো ফোটার আগে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট শুনছে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্যবিধাতা..’। জাতীয় সঙ্গীত শুনেই ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ান পুলিশ কর্মীরা। জাতীয় সঙ্গীত শেষ হতেই আন্দোলনকারীদের বলতে শোনা যায়, ‘‘এতদিনে পুলিশ সোজা হয়ে দাঁড়াল।’’ এরপরে আন্দোলনকারীরা পুলিশকর্মীদের দিকে জলের বোতল, বিস্কুট বাড়িয়ে দেন। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, পুলিশও মানুষ, ডাক্তারও মানুষ। সেই মনুষ্যত্বের কারণেই পাশে থাকার চেষ্টা। রাত পেরিয়ে মঙ্গলবার সকাল। এখনও পথে বসে জুনিয়র ডাক্তাররা। কেউ কেউ গাইছেন, 'পথে এবার নামো সাথি পথে হবে এ পথ চেনা...'। তবে কি পথই দেখাবে পথ?
আরও পড়ুন: সন্দীপ একা নন, সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার তাঁর নিরাপত্তারক্ষী, ২ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীও
সোমবার ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান মাঝপথেই বন্ধ করে দেয় কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের অনেক আগেই বসানো হয় ব্যারিকেড। শান্তির মিছিলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, তবে তাতে বাধা আসলে ডাক দেওয়া হয় ধর্নার। বিকেল থেকেই অবস্থান-বিক্ষোভে (RG Kar Rally) বসেন জুনিয়র ডাক্তাররা। উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক অভিনেতা কিঞ্জল নন্দও। তিনি সামান্য কিছু মুহূর্তের জন্য লাইভেও আসেন। কিঞ্জলের সেই ভিডিওতে দেখা গেল, জুনিয়র ডাক্তারদের উৎসাহে একচুলও ভাটা পড়েনি। মধ্যরাতেও তাঁরা সোচ্চার নিজেদের দাবিতে। পুলিশ বিরোধী স্লোগান চলছে তখনও। রব উঠছে, ‘পুলিশ তোমার ডিএ বাকি, চটি কিনে দেব নাকি’। এমনকী ‘হায় হায়’ রবও ওঠে কলকাতা পুলিশের নামে।
সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারি খুশি আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, সন্দীপের গ্রেফতারি আরজি করে দুর্নীতি মামলায়। ডাক্তারি পড়ুয়া ধর্ষণ-খুন মামলার কালপ্রিটদের গ্রেফতার করার দাবিতে আমরা অনড়। কোনওভাবেই অবস্থান প্রত্যাহার নয়। সোমবারই তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৩৬ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা অবধিও টানা ডিউটি করেন তাঁরা। ফলে এই অবস্থান চলবে। সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সকাল। এরপর রাতে সৃজিত মুখোপাধ্যায় সকলের কাছে সাহায্য চান, যাতে একটি মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা করা যায়, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের জন্য। অনেক সাধারণ মানুষই ক্রমাগত পোস্ট করতে থাকেন, লালবাজারের সামনে বাড়ি যাদের, তাঁরা যেন বিক্ষোভরত জুনিয়র ডাক্তারদের, বিশেষ করে মহিলাদের, তাঁদের বাড়ির বাথরুম ব্যবহার করতে দেন। ভোররাতেও ডাক্তারদের অবস্থান-বিক্ষোভ থেকে ছবি শেয়ার করে নিয়েছেন চিকিৎসক-নেতা কিঞ্জল। যাতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার মাঝেই কেউ শুয়ে পড়েছে। কেউ আবার দল বেঁধে বসে রয়েছে, চোখে-মুখে ক্লান্তি থাকলেও, প্রত্যয় স্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে, এত সহজে হার মানবেন না তাঁরা। একদলকে সজাগ দৃষ্টিতে পাহাড়া দিতেও দেখা গেল।
সোমবার দুপুর ২টোয় কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল (RG Kar Rally) করে লালবাজারের (Lalbazar) উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে এই কর্মসূচি। লালবাজারের সামনে ফিয়ার্স লেনেই আটকে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই সারা রাত অবস্থান বিক্ষোভ চলে। ত্রিপল, বড় প্লাস্টিক ইত্যাদি কিনে এনে, রাস্তায় পেতে শুয়ে পড়েন তাঁরা। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া। আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়েছিলেন টলিউড অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল, দেবলীনা দত্ত এবং সুদীপ্তা চক্রবর্তী। জুনিয়রদের মনোবল বাড়াতে পৌঁছে যান সিনিয়র ডাক্তাররা। এমনকী, অবস্থান-বিক্ষোভে হাজির হয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।