Ramkrishna Paramhans: রামকৃষ্ণদেবের প্রিয় কামারপুকুরের 'সাদা বোঁদের' ইতিহাস জেনে নিন
ঠাকুর রামকৃষ্ণের প্রিয় ছিল সাদা বোঁদে (সংগৃহীত ছবি)
হরিহর ঘোষাল
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মিষ্টির দোকানে রঙীন বোঁদে দেখে অভ্যস্ত আম বাঙালি। তবে, সাদা বোঁদের চল শুধু কামারপুকুর ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। কামারপুকুরে ঠাকুর রামকৃষ্ণের জন্মভিটেতে গিয়েছেন আর ঠাকুরের প্রিয় সাদা বোঁদে খাননি, এরকম ভক্ত নেই বললেই চলে। তাই, কামারপুকুরের সাদা বোঁদের (Sada Bonde) জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
কামারপুকুরের সাদা বোঁদে কে কবে প্রথম প্রস্তুত করেছিলেন তার সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। আদিতে কামারপুকুরে এই সাদা বোঁদে তৈরি করত কয়েকটি হাতে গোনা পরিবার। জানা গিয়েছে, ১৭৯৩-৯৪ সাল নাগাদ কামারপুকুরে সাদা বোঁদে তৈরি করতেন জনৈক মধুসূদন মোদক। অতীতে কামারপুকুরের স্থানীয় চাষিরা বরবটি চাষ করে পাকা বরবটির বীজের জোগান দিতেন। সেই বরবটির বীজ কলাইকে প্রথমে জলে ধুয়ে তারপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া হত। এর পর সেই শুকনো কলাইকে পিষে বেসন তৈরি করা হত। কামারপুকুরের সাদা বোঁদের প্রধান উপাদান হল রমা কলাইয়ের বেসন এবং আতপ চালের গুঁড়ো। তার সঙ্গে লাগে গাওয়া ঘি বা বনস্পতি ঘি ও চিনির রস।
আরও পড়ুন: আরজি করের ‘সন্দেহজনক’ মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআই-এর
রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্ম ভিটে ছিল কামারপুকুরের মোদক বাড়ির পাশেই। একটি মত অনুসারে, মধুসূদন মোদকের পুত্র দুর্গাদাসের বাল্যবন্ধু ছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ। বালক গদাধর (ঠাকুর রামকৃষ্ণ) তাঁর বন্ধু দুর্গাদাসের বাড়িতে গেলেই সাদা বোঁদে (Sada Bonde) খেতেন। অন্য মতে, গদাধর দুর্গাদাস মোদকের পুত্র সত্যকিঙ্করের দোকান থেকে সাদা বোঁদে কিনে খেতেন। সেই থেকে আজীবন কামারপুকুরের সেই সাদা বোঁদে খেতে খুব ভালোবাসতেন ঠাকুর। রামকৃষ্ণ কথামৃতে কামারপুকুরের সাদা বোঁদের উল্লেখ রয়েছে। কামারপুকুর মঠ ও মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রামকৃষ্ণ সাদা বোঁদে খেতে ভালবাসতেন, এমন কোনও নথি মিশনের কাছে নেই। তবে, সারদা দেবীর সাদা বোঁদে ভীষণ প্রিয় ছিল। তিনি দুর্গাদাস মোদকের পুত্র সত্যকিঙ্কর মোদকের দোকানের বোঁদে খুব ভালবাসতেন। তিনি ভক্তদের সাদা বোঁদে বা জিলিপি খেতে দিতেন। সেই থেকেই কামারপুকুরের সঙ্গে সাদা বোঁদে আর মোদক পরিবারের নাম জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ কামারপুকুরে রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্ম ভিটে অধিগ্রহণ করে নেন। ক্রমে কামারপুকুর ঠাকুরের ভক্তদের জন্য একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয় এবং ভক্তদের মাধ্যমে ঠাকুরের স্নেহধন্য কামারপুকুরের সাদা বোঁদের জনপ্রিয়তা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আতপ চাল এবং রমা কলাই আজও ঢেঁকির সাহায্যে গুঁড়ো করা হয়। আগে ঘি দিয়েই তৈরি হত। এখন সেটি সাদা তেলে তৈরি হয়। সেই থেকে একটি মিশ্রণ তৈরি হয়, যাকে খামি বলে। এটিকে ৪৫ মিনিট মতো মিষ্টির রসে ভিজিয়ে রাখা হয়। তাহলেই তৈরি হয়ে যায় সাদা বোঁদে (Sada Bonde)। গরমে ৫-৭ দিন বাইরে রাখলেও এই মিষ্টি নষ্ট হবে না।
সারা বছর দেশ-বিদেশ থেকে কামারপুকুর-জয়রামবাটিতে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। ভক্তরা ভ্রমণ শেষে এই কামারপুকুরের সাদা বোঁদে (Sada Bonde) সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যান। তাঁরা মনে করেন, তা না করলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কামারপুকুরের বাসিন্দারা সাদা বোঁদে নিয়ে ভীষণ আবেগপ্রবণ। কামারপুকুরের বাসিন্দারা বাড়িতে অতিথি এলে সাদা বোঁদে দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করেন। বিবেকানন্দ মঠে রামকৃষ্ণ পরমহংসের (Ramkrishna Paramhans) ভোগে কামারপুকুরের সাদা বোঁদে দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মিষ্টির খোঁজে ঠাকুরের অনেক ভক্তরাই ছুটে এসেছেন, তার মধ্যে শ্রীম (কথামৃতের লেখক) অন্যতম। এই মিষ্টির চাহিদা এতটাই বেশি, যে মানুষ এসে খালি হাতে ফিরবেন না, এটি নিয়েই যাবেন। এমনকী কামারপুকুরে উৎসব, অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি সবকিছুতেই এই বোঁদের (Sada Bonde) চাহিদা খুব বেশি।
জানা গিয়েছে, কামারপুকুরে মিষ্টির দোকানের সংখ্যা মোট কুড়িটি। তার মধ্যে তিনটি দোকান রামকৃষ্ণ পরমহংসের সমসাময়িক সত্যকিঙ্কর মোদকের বংশধরদের। দোকানগুলি মঠ চত্বর, লাহা বাজার ও কামারপুকুর চটি এই তিনটি অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিটি মিষ্টির দোকানেই এই সাদা বোঁদে পাওয়া যায়। শীতের সময় অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ কামারপুকুরের পর্যটক সংখ্যা সব চেয়ে বেশি হয়। তখন চাহিদা মেটাতে মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকরা সাদা বোঁদের উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। এই সময় প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ টন সাদা বোঁদে (Sada Bonde) তৈরি হয়। বছরের বাকি সময়টা দৈনিক ২-৩ টন সাদা বোঁদে উৎপাদন হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।