SSC scam: সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পার্থ জানিয়েও দেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি...
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় (ফাইল ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এসএসসি কেলেঙ্কারিতে (SSC scam) ইডি’র (ED) হাতে গ্রেফতারির সময় অ্যারেস্ট মেমোয় (Arrest Memo) মুখ্যমন্ত্রী মমতা (Mamata) বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। যা নিয়ে তোলপাড় তৃণমূলের অন্দরের রাজনীতি। শুধু নাম লেখাই নয়, গ্রেফতারির রাতে ২টো থেকে সকাল পর্যন্ত অন্তত চার বার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনও করেছিলেন পার্থবাবু। এখানেই শেষ নয়। পরের দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েও দেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।
ইডির জেরার মুখে পার্থবাবু যে দিব্যি সচেতন রয়েছেন তা তদন্তকারী সংস্থা আদালতেই জানিয়েছে। তল্লাশি ও জেরা পর্বে পার্থবাবুর আইনজীবীও সঙ্গে ছিলেন। ফলে অ্যারেস্ট মেমোয় মুখ্যমন্ত্রীর নাম জুড়ে দেওয়া নেহাৎই কাকতালীয় নয় বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পক্ষ। পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, স্ত্রী ও মা মারা যাওয়ার পর নাকতলার বাড়িতে একাই থাকতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর মেয়ে-জামাই বিদেশে থাকেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া তাঁর নিকটতম আর কেই বা আছেন? মুখ্যমন্ত্রীর ডাকেই তো তিনি চাকরি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি দলের মহাসচিব, ফলে দল এসএসসি কেলেঙ্কারির পর তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইলেও তিনি তো দল ছাড়তে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলে তাঁর একমাত্র যোগসূত্র রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অ্যারেষ্ট মেমোয় তাঁর নাম সেই কারণেই দিয়েছেন বলে পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: হুইল চেয়ারে আইসিসিইউ রোগী! পার্থকে দেখে বিস্মিত হৃদরোগ চিকিৎসকদের একাংশ
অনেকে আবার এরমধ্যে রাজনীতিও খুঁজছেন। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিক্ষক নিয়োগ (Teacher Recruitment) নিয়ে বিধায়কদের মধ্যে যে কোটা ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল তা এখন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। কয়েক জন বিধায়কের প্যাডে সই করা চাকরি প্রার্থীদের নামের তালিকা আদালতে পর্যন্ত জমা পড়েছে। পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ নিয়ে যা হয়েছে তা দলের সর্বোচ্চস্তরের সিদ্ধান্ত ছিল। গত নভেম্বরে যখন প্রথম কলকাতা হাইকোর্ট এ নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে তখনই পার্থবাবু অশণি সঙ্কেত দেখেছিলেন। দলও সেই সময় থেকে পার্থবাবুর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকে। এমনকি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পার্থবাবুর ভূমিকা সেভাবে চোখে পড়েনি।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রের খবর, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে পার্থবাবু দলের অন্দরে বার্তা দেন, যদি এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে দল তাঁর পাশে না দাঁড়ায় তা হলে তিনিও মুখ খুলতে বাধ্য হবেন। এর পর দলের তরফে আইন মন্ত্রী মলয় ঘটককে বিষয়টি নিয়ে তৎপর হতে বলা হয়। ঘটনাচক্রে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের উপর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ গিয়ে বিচারপতি রণজিৎ বাগ কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দেয়। সেই কমিটির সামনে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা সচিব জানিয়ে দেন, সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও সিবিআই তদন্ত বজায় রাখে।
আরও পড়ুন: কেন অমর্ত্য সেন নিচ্ছেন না বঙ্গবিভূষণ? বিদেশে থাকার জন্যই কি, না অন্য কারণ?
পার্থবাবু ক্রমেই বুঝতে পারছিলেন চাকরি চুরির মামলায় তাঁর পরিণতি ভাল হবে না। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেও রেখেছিলেন, যদি দলের সমর্থন না থাকে, তা হলে মুখ খুলতে বাধ্য হব। তাঁর কাছেও যে নবান্ন (Nabanna) থেকে পাঠানো তালিকা রয়েছে সে কথাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অনেককেই। গ্রেফতারির পর অ্যারেস্ট মেমোয় মমতার নাম লিখে মহাসচিব শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়েই নেননি, উল্টে পাল্টা চাপও তৈরি করেছেন। যার মোদ্দা কথা হল, শিক্ষক নিয়োগের কোটা পদ্ধতিতে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত ছিল দলগত, তাই গ্রেফতারির নথিতেও সেই দাগ যেন রেখে গেলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, জেনে বুঝে কেউ ভুল করলে শাস্তি পেতে হবে। তবে অজান্তে ভুল করলে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। অ্যারেস্ট মেমোয় মমতা জেনেবুঝে ভুল, নাকি অজান্তে ভুল তা ইডি যখন তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে তখনই স্পষ্ট হবে।