বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষণায় সাফল্য, কী আবিষ্কার হল জানেন?
বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ এবং গবেষণাগার। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নতুন একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করল বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ (Visva-Bharati)। এই ব্যাকটেরিয়া মূলত ধান চাষের অত্যন্ত সহায়ক৷ ব্যাকটেরিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে। এখনও পর্যন্ত লিভিং কোনও কিছুর নাম কবি ও কবিপুত্রর নামে হয়নি। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইক্রোবায়োলজিস্টস অফ ইণ্ডিয়া (এএমআই)। কৃষিকাজকে সমৃদ্ধ করতে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃষি গবেষণার উপর জোর দিয়েছিলেন৷ তাই তিনি শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ এমনকী, নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কৃষিবিদ্যা পাঠ নিতে বিদেশেও পাঠিয়েছিলেন৷ পরবর্তীতে বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য হন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁর হাত ধরে শুরু হয় কৃষি গবেষণার নানা কাজ।
কৃষিক্ষেত্রে ফলন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। এই তিনটি উপাদানকে একত্রে বলে এনপিকে৷ মাটি থেকে উদ্ভিদ এই উপাদান সংগ্রহ করে৷ কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রে মাটিতে এর জোগান কম থাকলে বাজার থেকে উপাদানগুলি কিনে দিতে হয় চাষিদের৷ বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ একটু নতুন প্রজাতির উপকারী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছে। নাম 'প্যান্টোইয়া টেগোরী' ( Pantoea Tagorei )। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অণুজীববিদ্যার অধ্যাপক ডঃ বুম্বা দাম তাঁর ৫ পড়ুয়া রাজু বিশ্বাস, অভিজিৎ মিশ্র, অভিনব চক্রবর্তী, পূজা মুখোপাধ্যায় ও সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন৷ মূলত ধান চাষের অত্যন্ত সহায়ক অণুজীব। এছাড়া, লঙ্কা ও মটর চাষের পক্ষেও উপকারী এই ব্যাকটেরিয়া। এটি মাটি থেকে অতি সহজেই পটাশিয়াম সংগ্রহ করে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে৷ ৬ জনের এই দল গবেষণা করতে করতে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি, পরে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া কয়লাখনি অঞ্চলের মাটি থেকে এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান৷ কৃষিক্ষেত্রে তাঁদের ভাবনা, অবদানকে স্মরণ করে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে ব্যাকটেরিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati) এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইক্রোবায়োলজিস্টস অফ ইণ্ডিয়া (এএমআই)।
বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ বুম্বা দাম বলেন, "এই ব্যাকটেরিয়া চাষের পক্ষে খুবই উপকারী। আমরা আগে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করে দেখেওছি৷ সদ্য শান্তিনিকেতন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। তাই আমরা এই ব্যাকটেরিয়ার নাম গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রেখেছি। লিভিং কোনও অর্গানিজমের নাম টেগরের নামে। আমার গবেষক পড়ুয়ারাও (Visva-Bharati) খুব মন দিয়ে কাজ করেছে এক্ষেত্রে।" গবেষক পড়ুয়াদের মধ্যে রাজু বিশ্বাস ও অভিজিৎ মিশ্র বলেন, "এটা বিশ্বভারতীর আবিষ্কার। এই ব্যাকটেরিয়া ব্যাবহারের ফলে চাষিরা উপকৃত হবে৷ সারের খরচ অনেকগুণ কমবে৷ এই ব্যাকটেরিয়া মাটি থেকে সহজেই পটাশিয়াম সংগ্রহ করে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে৷ আমরা ঝরিয়ার কয়লা খনি অঞ্চল থেকে এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছি।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।