জনপদ অন্যত্র সরিয়ে বক্সা অভয়ারণ্যে বাঘ ছাড়ার পরিকল্পনা বন দফতরের
বক্সায় বাঘেদের অভয়ারণ্য। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শতবর্ষ পুরনো জয়ন্তীর (Alipurduar) জনপদ। সব ঠিকঠাক এগোলে ২০২৫ সালের মার্চের আগেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি জয়ন্তী গ্রামের কোনও অস্তিত্ব আর থাকবে না। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প রক্ষায় স্থানীয়দের সরাতে উদ্যোগী বন দফতর, দ্রুত ছাড়া হতে পারে বাঘ! বাঘের অভয়ারণ্যকে রক্ষা করতে স্থানীয়দের বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করে অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করেছে বন দফতর। রাজি হয়েছেন এলাকার মানুষও। বাঘ ছাড়ার জন্য বন দফতর গত তিন বছরে কয়েক দফায় প্রায় হাজারের উপর হরিণ ছেড়েছে। এবার জনপদকে অভয়ারণ্য থেকে দূরে সরিয়ে বাঘেদের থাকার অনুকূল পরিবেশ নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। এলাকার মানুষও এই পরিবেশ এবং জন্তুদের রক্ষায় সহমত জানিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে বক্সায় দ্রুত পর্যটকরা বাঘ দেখতে পারবেন।
বড় বড় সব সরকারি-বেসরকারি ডলোমাইট খননকারী কোম্পানি ছিল এখানে (Alipurduar)। এক সময় এখানে রেলপথও ছিল। ডলোমাইট কারখানা ছিল। আজ আর সে সবের কিছুই নেই! তাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া সুন্দরী জয়ন্তী, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকা থেকে সরে যাবে। সোমবার এই মর্মে জয়ন্তীর বেশির ভাগ মানুষের সই করা ‘জয়ন্তী ভিলেজ রিলোকেশন ফর্ম’ জমা হয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প অফিসে। বিষয়টি নিয়ে ২৬ অগাস্ট জয়ন্তীতে বৈঠক করে বন দফতর।
ওই বৈঠকে জয়ন্তী গ্রামকে (Alipurduar) বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় বন দফতর। জয়ন্তীর বেশির ভাগ মানুষ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছেন বলে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এর জন্য জয়ন্তীর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। জয়ন্তীকে সরিয়ে নিতে খরচ হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। তবে এর সবটাই দেবে কেন্দ্র। এছাড়া রাজ্য সরকার প্রত্যেক পরিবারকে ৫ ডেসিমেল করে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসিমারার গুদাম ডাবরি এলাকায়, জয়ন্তী থেকে সরে যাওয়া পরিবারদের জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
বিষয়টি নিয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন (Alipurduar) বলেন, “ যে কোনও টাইগার রিজার্ভ থেকে বনবস্তিবাসীদের সরানোর জন্য এই প্যাকেজ গোটা দেশেই চালু রয়েছে। জয়ন্তী সহ বক্সাতে দুই একটি গ্রামের লোকেদের সাথে এই বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা বন ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে সরে যেতে চাইলে এই প্যাকেজ পাবেন।” সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী জয়ন্তীতে লোকসংখ্যা প্রায় ৭০০ জন। প্রায় ২০০ পরিবারের এই জনসংখ্যা দিন দিন কমছে। এই সব পরিবারের বেশির ভাগই জয়ন্তী থেকে সরে যেতে চাইছেন।
জয়ন্তীর (Alipurduar) স্থানীয় বাসিন্দা তপন দত্ত বলেন, “ জয়ন্তী দিন দিন শশ্মানে পরিণত হচ্ছে। এক সময় বাইরে থেকে মানুষ জয়ন্তীতে কাজ করতে আসতেন। এখন উল্টোটাই ঘটছে। জয়ন্তী নদী যে কোনও দিন এই জনপদকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেই কারণে আমরা বন দফতরের প্যাকেজে রাজি হয়ে, এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য লিখিতভাবে মত দিয়েছি।” জয়ন্তীর আরেক বাসিন্দা মনি কুমার লামা বলেন, “বনের ভিতর কোনও সুযোগ-সুবিধা নেই। আমাদের জীবন এভাবে কাটল। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম এভাবে কেন থাকবে! বন দফতরের প্রচণ্ড কড়াকড়ি। এলাকায় কোনও কাজ নেই। নেই হাসপাতাল ও ভালো স্কুলও। ফলে শুধু পারিবারিক ভিটের আবেগে ভর করে আর এখানে থেকে কোআও লাভ নেই। সেই কারণে বন দফতরের প্যাকেজে আমরা রাজি হয়ে গেছি ।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।