হ্যাম রেডিও-র হাত ধরেই খোঁজ মিলল বধূর
২১ বছর পর এক ফ্রেমে দম্পতি(বাঁদিকে), হাসপাতালে থাকার সময় বধূ (ডানদিকে)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আট বা দশ বছর নয়। ২১ বছর ধরে প্রতীক্ষা। স্ত্রী ফিরে আসার আশায় ছেলেকে সঙ্গে করে মন্দিরে পুজো দিতেন স্বামী। এক সময় স্ত্রীর বেঁচে থাকার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে, মন্দিরে পুজো দেওয়া বন্ধ রাখেননি তিনি। ঠাকুরের কাছে মনপ্রাণ দিয়ে কোনও কিছু চাইলে খালি হাতে ফিরতে হয় না তা এখন বুঝতে পারছেন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ধারাপাড়া বিধান কলোনির বাসিন্দা গোবিন্দ রায়। কয়েকদিন আগে অচেনা নম্বর থেকে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। আর ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে একজন তাঁর স্ত্রীর খোঁজ দেন। ২১ বছর ধরে যারজন্য অপেক্ষা করে দিন কাটাচ্ছিলেন, অনায়াসে তাঁর খোঁজ মিলতেই হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অবস্থা তাঁর। ফোনের সূত্র ধরে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) থেকে উত্তরপ্রদেশ পাড়ি দেন তিনি। সোমবারই ২১ বছর পর তিনি ফিরে পান স্ত্রীকে।
স্ত্রী যখন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তখন গোবিন্দবাবুর ছেলের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। স্বামী, সন্তানকে ফেলে রেখে তিনি বাড়ি থেকে কোনও কাজে বেরিয়ে গিয়ে আর ফেরেননি। প্রায় ২১ বছর আগে অশন্তি রায় নামে ওই বধূ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। বাড়ির লোকজন থানায় মিসিং ডায়েরি করেছিলেন। কিন্তু, কোথাও তাঁর হদিশ মেলেনি। অবশেষে হ্যাম রেডিও-র হাত ধরে ২১ বছর পর নিজের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেলেন ওই বধূ। পরিবার ও হ্যাম রেডিও সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওই বধূ দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারকেশ্বর মন্দিরে ছিলেন। পরে, কোনওভাবে তিনি বেনারসে চলে যান। সেখানকার পুলিশ তাঁকে একটি ট্রাকের ভিতর থেকে উদ্ধার করেন। গ্রেফতার করা হয় খালাসিকে। আর গাড়ির চালক পালিয়ে যায়। ওই বধূ তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁকে বেনারসের সরকারি মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি এতদিন ছিলেন।
হ্যাম রেডিও পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস বলেন, কলকাতার এক মহিলা কিছুদিন আগে বেনারস গিয়েছিলেন। ওই মেন্টাল হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের মধ্যে তিনি ফল বিতরণ করেন। সেই সময় ওই বধূর বাংলা কথা শুনে তাঁরসঙ্গে আলাপ জমান তিনি। কিন্তু, তিনি বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেননি। কলকাতার ওই মহিলা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা তাঁরসঙ্গে কথা বলি। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) মতো কথায় টান রয়েছে তাঁর। সেই মতো মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকে যোগাযোগ করেই ওই বধূর আমরা হদিশ পাই। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলি। ওই বধূর স্বামী গোবিন্দ রায় বেনারস যান। সোমবারই ওই বধূকে তাঁর স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২১ বছর পর স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে একসঙ্গে ছবি তোলেন তাঁরা। গোবিন্দ রায় বলেন, আমি প্রতিবছরই স্ত্রীর জন্য মন্দিরে পুজো দিতাম। আমরা বহু জায়গায় তাঁর খোঁজ করেছি। কিন্তু, তাঁর হদিশ পাইনি। আমরা তো আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এতদিন পর স্ত্রীকে ফিরে পাব তা ভাবতে পারিনি। আমার ছেলের বয়স এখন প্রায় ২৫ বছর। এতদিন পর মাকে দেখতে পেয়ে ও খুবই খুশি। ভগবানের কাছে মনপ্রাণ দিয়ে কিছু চাইলে তিনি যে নিরাশ করেন না, ২১ বছর পর আমি তা সত্যিই অনুভব করলাম।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।