Naxalbari: ১ গ্রামের দাম ১৭ কোটি! তৃণমূল নেতার বাড়িতে মিলল তেজস্ক্রিয় মৌল ‘ক্যালিফোর্নিয়াম’, আর কী কী উদ্ধার?
তৃণমূল নেতার বাড়িতে চলছে তল্লাশি (বাঁদিকে), অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা (ডানদিকে) (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হল প্রাণঘাতী তেজস্ক্রিয় মৌল। দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়ির তৃণমূল নেতা (TMC Leader) ফ্রান্সিস এক্কার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে 'ক্যালিফোর্নিয়াম' নামে বহুমূল্য ওই তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক। দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে নকশালবাড়ির (Naxalbari) বেলগাছি চা বাগান থেকে ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করল সেনাবাহিনী। শাসক দলের নেতার বাড়িতে এই ধরনের তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক কী করে এল তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলগাছি চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন ধৃত তৃণমূল নেতা (TMC Leader) ফ্রান্সিসের স্ত্রী অমৃতা এক্কা। গত মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তিনি। অপ্রচলিত শক্তি বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর বাগানের কাজ ছেড়ে দেন অমৃতা। স্বামী ফ্রান্সিস স্ত্রীর সুবাদেই বাগানে থাকেন। সূত্রের খবর, নেপালে ফ্রান্সিসের যাতায়াত ছিল। সম্প্রতি তাঁর চালচলন-পোশাকে নাকি বড় পরিবর্তন হয়েছিল। যা চোখে পড়েছিল প্রতিবেশীদেরও। তবে, তিনি তৃণমূল নেতা হওয়ায় কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র, আজ সংসদে বিবৃতি দেবেন জয়শঙ্কর
তিনদিন আগে আচমকা বাগানের চার্চ লাইনে ফ্রান্সিসের (TMC Leader) বাড়ির সামনে বেশ কিছু গাড়ির কনভয় এসে দাঁড়ানোয় সবাই চমকে ওঠেন। আপাদমন্তক ঢাকা ‘হ্যাজমাত স্যুট’ পরা বেশ কিছু লোকজন এবং প্রচুর পুলিশ দেখে কেউই আর এগিয়ে আসার সাহস পাননি। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে গোটা বাড়িতে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালায় সেনা ও এনডিআরএফ। বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি করে পানিঘাটা ফাঁড়ির পুলিশ। অপারেশন শেষে উদ্ধার হওয়া সমস্ত সামগ্রী সহ ফ্রান্সিসকে নিয়ে চলে যায় সেনা। ভোরে তাঁকে পানিঘাটা ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কার্শিয়াংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় বলেন, “সেনাবাহিনী ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে আমাদের হাতে দিয়েছে। একটি অভিযোগও দায়ের করেছে। যে সমস্ত সরঞ্জাম ধৃতের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি সেনাবাহিনী নিয়ে গিয়েছে।” তবে, এই ক্যালিফোর্নিয়াম এবং ডিআরডিও-র নথি আসল না নকল সেটা সেনাবাহিনী পরীক্ষার পরই বলতে পারবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ফ্রান্সিসের (TMC Leader) বাড়ি থেকে রেডিওঅ্যাক্টিভ বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যালিফোর্নিয়াম (Californium) এবং প্রচুর ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (DRDO) প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে। দেশের নামীদামি বিজ্ঞানীরা এখানে দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে বিভিন্ন গবেষণা করেন। সেই সমস্ত গবেষণাপত্র পাচারের অভিযোগ রয়েছে ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে। সেই নথি কীভাবে তাঁর হাতে এল, সেই চর্চা শুরু হয়েছে এলাকায়। তবে, গবেষণাপত্রগুলি আসল না নকল তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না সেনা। সেনা সূত্রে খবর, আন্তর্জাতিক বাজারে মাত্র এক গ্রাম ক্যালিফোর্নিয়ামের মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, ডিআরডিও'র প্রচুর নথি এবং ক্যালিফোর্নিয়াম নামক রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থ ভর্তি কনটেনার পাওয়া গিয়েছে ফ্রান্সিসের কাছে। মাস তিনেক আগে বিহার থেকেও এই ক্যালিফোর্নিয়াম সহ তিনজন ধরা পড়েছিল। এই চক্রের সঙ্গে ফ্রান্সিসের যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেনাকর্তারা বলছেন, “গবেষণাগারে কিউরিয়াম এবং আলফার মিশ্রণে ল্যাবরেটরিতে ক্যালিফোর্নিয়াম তৈরি করা হয়। এটা মানুষের দ্বারা তৈরি একটি সিন্থেটিক পদার্থ। আন্তর্জাতিক বাজারে যার এক গ্রামের দাম কয়েক কোটি টাকা। ভারতে সাধারণ মানুষের এই রেডিওঅ্যাক্টিভ ব্যবহার নিষিদ্ধ। মূলত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে এগুলি ব্যবহৃত হয়।” এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন বায়ুসেনা কর্তা আরকে দাস। তিনি বলেন, “ক্যালিফোর্নিয়াম অত্যন্ত সেন্সিটিভ, ডেঞ্জারাস। একটা সাধারণ মানুষের (TMC Leader) বাড়িতে কীভাবে এল, সেই প্রশ্ন তো উঠবেই। এই রাসায়নিক খুব গোপনভাবে ব্যবহার হয়। এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তার গাফিলতি সামনে আসছে। এটা দেশের জন্য চিন্তার বিষয়।”
কয়েকদিন আগেই বিজেপি নেতা অর্জুন সিং দাবি করেছিলেন, রাশিয়া থেকে রাসায়নিক আনা হয়েছে তাঁকে খুন করার জন্য। এই ঘটনার পর ফের মুখ খুললেন অর্জুন সিং। তিনি বলেন, “অসাধু চক্রের সঙ্গে যে তৃণমূলের (TMC Leader) যোগ আছে, সেই প্রমাণ আগেই মিলেছে। এবার সেটাই আরও একবার প্রমাণিত হল।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।