Jahar Sarkar: আরজি করকাণ্ডে তৃণমূল সাংসদের পদত্যাগ, কে জানেন?
আরজি করকাণ্ডের প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আরজি করকাণ্ডে লাগামছা়ড়া আন্দোলনের জেরে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে শাসকদল। এই ঘটনার প্রতিবাদে এর আগে সুর চড়িয়েছেন সাংসদ শান্তনু সেন, সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁদের বক্তব্য শাসক শিবিরের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছিল। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে (RG Kar Protest) এবার রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন জহর সরকার (Jahar Sarkar)। বিশিষ্ট এই আমলা তিন বছর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হয়েছিলেন। এবার এই প্রথম শাসকদলের কোনও সাংসদ ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধু তা-ই নয়, রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই ঘটনা রাজ্যের শাসকদলকে জোর ধাক্কা দিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে লেখা চিঠিতে জহর লিখেছেন, "আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর (RG Kar Protest) হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এককথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।" আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লাগানো নিয়ে সরব হয়েছেন জহর। তিনি লিখেছেন, "আমার বিশ্বাস, এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ করছেন। তাই, রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা সমীচীন হবে না। এঁরা কেউ রাজনীতি পছন্দ করেন না। শুধু একবাক্যে বিচার ও শাস্তির দাবি তুলেছেন।”
আরও পড়ুন: চিনা রাষ্ট্রদূতের মুখে জামাত প্রশস্তি, বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা বেজিংয়ের!
এর আগে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলার জন্য দলের অনেক নেতা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন বলেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জহর। তিনি লিখেছেন, "আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম। কিন্তু আমার রাজ্যে দুর্নীতি আর দলের একাংশের নেতাদের অন্যায় দাপট দেখে আমি হতাশাগ্রস্ত হলাম।” এরপর রাজ্যের দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ চিঠিতে টেনে এনেছেন তিনি। লিখেছেন, "মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবাই দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির আস্ফালন। আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের (RG Kar Protest) প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।”রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন,"পশ্চিমবঙ্গে সাংসদ নির্বাচিত করে আপনি আমাকে প্রভূত সম্মানীত করেছেন। বিভিন্ন সমস্যা সরকারের দৃষ্টিগোচর করবার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি অনেক চিন্তা করে দেখেছি, সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করব। রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করব।”
আরজি কর কাণ্ডে (RG Kar Protest) প্রথমে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় সোচ্চার হয়েছিলেন। তিনি ধর্নাতেও বসেছিলেন। এবার প্রশ্ন উঠছে, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদেই দলের একজন সিনিয়র সাংসদ সদস্যপদ ছাড়ছেন, এবার কি সুখেন্দু সেই পথে হাঁটবেন? এই প্রসঙ্গে সুখেন্দু বলেন, "জহর সরকারের খবর পেয়েছি। কিন্তু, আমি সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আমি এর বিরোধিতাও করছি না। সমর্থনও নয়। আর আমি কখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সকলেই জানতে পারবেন। যেমন প্রতিবাদ করেছিলাম বিবেকের ডাকে। আমি নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে আছি। আমি নিজের ঢাক কখনও পেটাইনি। পেটাই না।” আরজি কর- কাণ্ডে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সুখেন্দুর সংযোজন, "আমি আমার মতো করে নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে আছি। একটা বিন্দু হিসেবে। একজন নাগরিক হিসেবে আমার সামান্য যা করণীয় করছি। সাংসদের কাছে মানুষের একটা প্রত্যাশা থাকে, যে তিনি কোনও অন্যায়ের সঙ্গে থাকবেন না।"
বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ম্যাডাম চেয়ারপার্সন তো তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করার জন্য নন। তাঁকে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে দিতে হবে। তবে বিনীত গোয়েলকে জুনিয়র ডাক্তাররা শিরদাঁড়া উপহার দিয়েছেন। জহর সরকারের মধ্যে আমরা যে মানসিকতা দেখলাম তাতে ভালো লাগল। তিনি প্রাক্তন আমলা। স্পষ্টবাদী।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।