img

Follow us on

Friday, Nov 22, 2024

MGNREGA: সীমাহীন দুর্নীতি একশো দিনের কাজে, ২৫ লাখ ভুয়ো জব কার্ডে কত টাকা আত্মসাৎ?

১০০ দিনের কাজে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গে

img

প্রতীকী ছবি

  2023-10-05 16:42:36

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১০০ দিনের কাজের টাকা ব্যাপক নয়ছয়ের অভিযোগ রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। যতই দিল্লিতে আত্মপ্রচারের জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের সাংসদরা ধর্না দিক, রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। 'ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট' (MGNREGA)-এ চূড়ান্ত দুর্নীতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সন্ধান মিলেছে লাখ লাখ ভুয়ো জব কার্ডের। এর পাশাপাশি কয়েক মাস আগে এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও গড়িয়েছিল। অভিযোগ, উত্তর দিনাজপুর জেলায় জেসিবি দিয়ে পুকুর খনন হয়েছে বলে যে জায়গা দেখানো হয়েছে, সেখানে আদতে রয়েছে একটি ভুট্টার ক্ষেত। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। কত টাকা শাসক দল আত্মসাৎ করেছে, সেবিষয়ে জানতে চেয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘২৫ লাখ ভুয়ো জব কার্ডে কত টাকা আত্মসাৎ?’’

১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে হাজার হাজার অভিযোগ

১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির ৩,৩৫৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কীভাবে টাকা নয়ছয় করা হয়েছে, ওই অভিযোগপত্রগুলিতে সেই সংক্রান্ত খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে! শুধু তাই নয়, সারা দেশের মধ্যে একমাত্র রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালেই কেন্দ্রীয় টিম তাদের রাজ্য সফরে এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ পায়।

খবরের শিরোনামে ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরের শিরোনামেও ১০০ দিনের (MGNREGA) কাজে ভুয়ো জব কার্ডের তথ্য উঠে আসতে থাকে। ওই প্রতিবেদনগুলিতে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে মৃত ব্যক্তিদেরও জব কার্ড রয়েছে। বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র 'দ্য সানডে গার্ডিয়ান'-এর ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সংস্করণে এই সংক্রান্ত খবর বের হয়। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়, কীভাবে ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিদেরও জব কার্ড বানানো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। 'দ্য হিন্দু' পত্রিকার ২০২৩ সালের ১৮ জুনের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে একজন প্রাক্তন বিডিওকে ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই গ্রেফতার করেছে। 'হিন্দুস্তান টাইমস'-এর ২০২৩ সালের ১৫ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে ইডি একজন তৃণমূল নেতার বাড়িতে হানা দেয় ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতির তদন্তে। সর্বভারতীয় নিউজ নেটওয়ার্ক 'ইন্ডিয়া টুডে'-র ২২ অগাস্ট ২০২৩ এর প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে সিবিআই ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গে, যারা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসেই সিবিআই গ্রেফতার করে একজন প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের এই সীমাহীন দুর্নীতি (MGNREGA) আজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে গরিব এবং অসহায় মানুষদের জীবন জীবিকার অধিকারকে, এমনটাই বলছেন ওয়াকিবহল মহলের একাংশ। দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতেই শাসক দল এখন টাকা আদায়ের দাবিতে ব্যস্ত।

কীভাবে টাকা নয়ছয় হচ্ছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে?

১) বিগত বছরে সেন্ট্রাল টিমের ভিজিটে যে দুর্নীতিগুলি উঠে এসেছিল, তার উদ্ধারের পরিমাণ সেন্টাল টিম ঠিক করে দিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত কোনও পঞ্চায়েত এই টাকা জমা করেনি।

২) নতুন পুকুর (MGNREGA) মূলত জেসিবি মেশিনে কাটা হয়েছে, পরে লেবারের নামে মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা তোলার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যদিও নারেগার গাইডলাইন অনুযায়ী কোনও মেশিন ব্যবহার করে কাজ করা যায় না। মুষ্টিমেয় কিছু পেটোয়া শ্রমিক বা নিজেদের লোকেদের নামে মাস্টার রোল করা হয়েছে এবং কিছু মানুষকে ভয় দেখিয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানোর পর জোরপূর্বক ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

৩) নারেগা রিপোর্ট দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়, ১০০ দিনের কাজের যারা প্রকৃত লেবার, তারা ১০০ দিনের কাজ পায়নি, কেউ ১০ দিন, ২০ দিন বা ৩০ দিন সারা বছরে কাজ পেয়েছে। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু লেবার যারা দলের কর্মীও বটে, ১০০ দিন কাজ সম্পূর্ণ করেছে। তাদের ব্যাঙ্কে টাকা ঢোকানোর পর টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

৪) বর্তমানে জব কার্ড (MGNREGA) আধার সিডিং বা যুক্ত হওয়ার আগে একই লেবারকে বিভিন্ন জব কার্ডে ঢুকিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।

৫) নারেগার নিয়ম অনুযায়ী একটি পরিবারের একটি জব কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি পরিবারের একাধিক জব কার্ড তৈরি করা হয়েছে এবং ঠিক সেগুলিতেই ১০০ দিনের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

৬) কাজগুলির জায়গায় পার্মানেন্ট ডিসপ্লে বোর্ড নেই। ঠিক যখন সেন্ট্রাল টিম ভিজিটে আসছে, তখনই তড়িঘড়ি রাতারাতি ডিসপ্লে বোর্ড জায়গায় জায়গায় লাগানো হয়েছে।

৭) যে সব নতুন পুকুর কাটা হয়েছে, সেগুলি সব চাষযোগ্য জমির উপরে কাটা হয়েছে। কিন্তু কোনও জমিকেই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণি পরিবর্তন না করেই পুকুর তৈরি করা হয়েছে।

৮) কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামসভা বা সংসদ সভাতে কোনরূপ আলোচনা বা বেনিফিশিয়ারি তৈরি না করেই নিজেদের লোকেদের জায়গায় নারেগা IBS স্কিমগুলি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামসভাতে আলোচনা বাধ্যতামূলক।

৯) নারেগা বিষয়ক গ্রাম পঞ্চায়েতের স্তরে যে কন্ট্রাকচুয়াল ওয়ার্কার কাজ করে, (মূলত প্রতি বছর কন্ট্রাক্ট রিনিউয়াল হয়) তাদের পরের বছর রিনিউয়াল না করার ভয় দেখিয়ে বা চাকরি খাওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কিমগুলিতে দুর্নীতি করতে বাধ্য করা হয়েছে।

১০) নারেগা বিষয়ক জেলায় জেলায় ডেভেলপমেন্ট মিটিংয়ে সরকারি আধিকারিকরা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত অপমান, মাইনে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি, চোখ রাঙানি ইত্যাদি করে জোরপূর্বক শ্রম দিবস জেনারেট করতে বলেছেন। এঁদের দিয়েই লাখ লাখ ভুয়ো মাস্টার রোল এবং কর্মদিবস তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে। আধাআধি ভাগাভাগিও করা হয়েছে সেই টাকা।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

MGNREGA


আরও খবর


ছবিতে খবর