img

Follow us on

Friday, Nov 22, 2024

Victoria Memorial: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে এক বাঙালির নাম! জানেন কে তিনি?

Kolkata: তাজমহলের আদলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি করতে কতদিন সময় লেগেছিল জানেন?

img

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (সংগৃহীত ছবি)

  2024-08-09 18:00:11

হরিহর ঘোষাল

১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি প্রয়াত হন রানি ভিক্টোরিয়া। ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন কলকাতা ছিল ভারতের রাজধানী। ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়া তখন আবার ভারতেরও সম্রাজ্ঞী। তাঁর রাজত্বকাল ১৮৫৭ থেকে ১৯০১-এর ২২ জানুয়ারি। সেই বিশেষ দিনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বলা বাহুল্য, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রাজত্বকালও শেষ হয়। রানির (Victoria Memorial) প্রয়াণের পর কলকাতায় তড়িঘড়ি এক বৈঠক ডাকেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন। প্রয়াত রানিকে বিশেষভাবে সম্মান জানানোর প্রস্তাব রাখেন তিনি। প্রস্তাব ওঠে তাক লাগানো এক স্মৃতিসৌধ তৈরির। এশিয়াটিক সোসাইটিতে তিনি সে কথা বলেনও। শুরু হয় প্রস্তুতি।

তাজমহলের আদলে ভিক্টোরিয়া (Victoria Memorial)

স্মৃতিসৌধ বানাতে কলকাতায় (Kolkata) জমি খোঁজা শুরু হয়। যে জমিতে আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial) অবস্থান করছে, অতীতে সেটি ছিল প্রেসিডেন্সি জেলের জমি। প্রধানত রাজনৈতিক বন্দিদেরই এই জেলে রাখা হত। তবে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির প্রস্তাবের পর প্রেসিডেন্সি জেল সেই জমি থেকে আলিপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। ভিক্টোরিয়াকে হঠাৎ দেখলে তাজমহল বলে ভুল হয়। আসলে তাজমহলের অনুসরণেই এই স্মৃতিসৌধটি তৈরি করা হয়েছিল। বেলফাস্ট সিটি হলের স্থাপত্যশৈলীর আদলে ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের নকশা প্রস্তুত করেন স্যার উইলিয়াম এমারসন। তাঁকে ইতালীয় রেনেসাঁ স্থাপত্যশৈলীতে স্মৃতিসৌধের নকশা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর প্রয়োগ তাঁর পছন্দ ছিল না। তাই ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর সঙ্গে মুঘল শিল্পকলা যুক্ত করে মূল সৌধের নকশা প্রস্তুত করেন এমারসন। এছাড়াও ভিক্টোরিয়াতে মিশরীয়, ইসলামিক, ভেনেটিয়ান এবং ডেকানি সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট। রানির নামে সেই সৌধের নাম রাখা হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।

স্মৃতিসৌধ করতে লেগেছিল ১১ বছর

ইংল্যান্ডের রানি ভিক্টোরিয়ার নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (Victoria Memorial) তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯০১ সালে, যেখানে থাকবে প্রচুর গাছ এবং ফুলের বাগান। ভাইসরয়ের ইচ্ছে ছিল, তাক লাগানো সেই স্মৃতিসৌধ দেখতে পর্যটকরা কলকাতায় ভিড় জমাবেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাজমহলকে টেক্কা দেওয়ার। তবে তাজমহলকে টেক্কা দিতে না পারলেও জনপ্রিয়তায় তাজের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলছে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজা পঞ্চম জর্জ। রানির স্মৃতিসৌধ বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির প্রস্তাব করা হয় ১৯০১ সালে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তার নকশা তৈরি সহ অন্যান্য কাজ এগোতে থাকে। ১৯০৬ সালে শুরু হয় সৌধ নির্মাণের কাজ। সৌধটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজা পঞ্চম জর্জ। বোন ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তাঁরই রাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বাবা সপ্তম এডওয়ার্ড বেঁচে থাকা পর্যন্ত তিনি রাজা হতে পারেননি। পঞ্চম জর্জ যখন ভারতে এসেছিলেন, ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের জাতিগত বিদ্বেষ দেখে অত্যন্ত বিরক্ত হন। ভারতীয় রাজনীতি এবং প্রশাসনিক কাজে ভারতীয়দের অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেন। তাঁর রাজত্বকালেই ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় ২০ বছর। রানি ভিক্টোরিয়া প্রয়াত হন ১৯০১ সালে। তাঁর স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৯০৬ সালে। অফিশিয়ালি নির্মাণকাজ শুরু হয় তার প্রায় চার বছর পর অর্থাৎ ১৯১০ সালে। নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ১১ বছর। সব মিলিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নির্মাণ শেষ হয় ১৯২১ সালে। এর নকশা করেছিলেন স্যার উইলিয়ম এমার্সন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্ট-এর প্রেসিডেন্ট। সৌধ-সংলগ্ন বাগানটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও স্যার জন প্রেইন। সৌধ নির্মাণের বরাত দেওয়া হযেছিল কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোং-কে। এই সংস্থার যুগ্ম মালিক ছিলেন স্যার থমাস অ্যাকুইনাস এবং স্যার রাজেন মুখোপাধ্যায়। সৌধ নির্মাণের পর রাজেন মুখোপাধ্যায়কে নাইট উপাধি দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।

কত খরচ?

ভিক্টোরিয়া (Victoria Memorial) স্মৃতি সৌধ তৈরির জন্য পাথর আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে। বিশালাকার স্মৃতসৌধটির উচ্চতা প্রায় ৫৬ মিটার। মধ্যভাগে রয়েছে একটি বিশালাকার গম্বুজ এবং চার ধারে রয়েছে চারটি ছোট গম্বুজ। দেশের টাকায় রানির স্মৃতিসৌধ তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন ব্রিটিশ ভাইসরয়। অথচ সেটি তৈরির খরচ প্রধানত বহন করতে হয়েছিল দেশের মানুষকে। তুলনায় ব্রিটিশদের খরচ ছিল অনেক কম। স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য লর্ড কার্জন ভারতীয় রাজা, জমিদার, ধনী-অভিজাত ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থদানের আবেদন জানান। আদতে তা ছিল ভাইসরয়ের আদেশ। সেই আদেশ খণ্ডন করার সাহস কারও ছিল না। সেই সময় স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে খরচ পড়েছিল প্রায় ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কালো রং

শ্বেত পাথরের তৈরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে (Victoria Memorial) একবার সম্পূর্ণ কালো রং করে দেওয়া হযেছিল। সালটা ছিল ১৯৪৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল সেই সময়। এমনকী জাপানি সৈন্যদের আক্রমণের ভয়ে ভিক্টোরিয়ার ছবি প্রকাশও বন্ধ করে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। শ্বেত পাথরের সাদা ইমারত বহু দূর থেকেও দেখা যায়। ফলে সে সব স্থান বোমায় উড়িয়ে দেওয়া সহজ। সে কারণেই সতর্কতা স্বরূপ স্বরূপ ভিক্টোরিয়ার রং কালো করে দেওয়া হয়। আগাগোড়া শ্বেত পাথরের তৈরি এই স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে একটি জাতীয় সংগ্রহশালা এবং কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

Kolkata

Delhi

West Bengal

Victoria memorial

bangla news

Bengali news

rajen mukherjee


আরও খবর


ছবিতে খবর