কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালের ডায়ালিসিস কাণ্ডে শাসকদল ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আক্রান্তদের!
কল্যাণী জে এন এম হাসপাতাল। ফাইল ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অভিযোগ জানানোর পর কেটে গিয়েছে ন'মাস! বারবার ই-মেল ও চিঠি পাঠানোর পরেও সরকারের তরফে তেমন কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং শাসকদলের নেতারা হুমকি দিচ্ছেন! এমনই অভিযোগ আক্রান্তদের পরিবারের। তারা জানাচ্ছে, শাসকদলের এক চিকিৎসক নেতা হুমকি দিয়েছেন, কোথায় কোথায় গিয়ে, কী করার জন্য (Dialysis) এইচআইভি হয়েছে, তা প্রকাশ করা হবে! অভিযোগের সুরাহা তো হচ্ছে না, বরং সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। এমনই সংকটে দিন কাটাচ্ছেন অসহায় ওই আক্রান্তরা।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগ ওঠে, কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে পিপিপি মডেলে তৈরি ডায়লিসিস (Dialysis) সেন্টারে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে গিয়ে পাঁচজন রোগী এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, এইচআইভি রোগীর জন্য ব্যবহৃত সিরিঞ্জ অন্য রোগীর জন্য ব্যবহার করার জেরেই এই বিপত্তি! রোগীর পরিজন ই-মেল মারফত হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও কোনও সুরাহা হয়নি।
সরকারি হাসপাতালের ডায়ালিসিস সেন্টার থেকে ডায়ালিসিস (Dialysis) করাতে গিয়ে এইচআইভি সংক্রমণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই শাসকদলের আক্রমণ শুরু হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। এমনকী প্রকাশ্যে সামাজিক হেনস্থাও করা হচ্ছে। যেহেতু এইচআইভি সংক্রমণ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের জেরে হতে পারে, তাই তৃণমূল নেতাদের একাংশ তাদের নানান কুৎসিত ইঙ্গিত করছেন। এমনকী তৃণমূলের এক চিকিৎসক নেতা সংবাদ মাধ্যমে জানান, "ডায়ালিসিস করানোর পরে কোথায় গিয়ে কী করেছে আর কীভাবে এইচআইভি হয়েছে, সবটাই প্রকাশ্যে আসা দরকার! " অভিযোগকারীদের বক্তব্য, অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে না, কিন্তু হেনস্থা হতে হচ্ছে! রোগীর পরিজনদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই ডায়ালিসিস সেন্টার অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন! বিছানায় রক্তের দাগ লেগে থাকে। এমনকী একজন রোগীকে সিরিঞ্জ ব্যবহারের পরে অনেক সময়েই তা পরিবর্তন করা হয় না। অধিকাংশ সময়েই নেফ্রোলজিস্ট উপস্থিত থাকেন না। তাই কোনও সমস্যা হলেও সমাধান পাওয়া যায় না।
অভিযোগ জানানোর পরে ন'মাস কেটে গেলেও এখনও সবকিছু খতিয়ে দেখা শেষ হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে! তবে, ওই মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারি রয়েছে। ওই হাসপাতালের ডায়ালিসিস (Dialysis) সেন্টার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে নয়। পিপিপি মডেলে তা তৈরি। ফলে, পরিষেবার দায়িত্ব অনেকটাই ওই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার। তবে, ওই হাসপাতালে এইচআইভি রোগীদের জন্য আলাদা ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেও কীভাবে সাধারণ রোগীর মধ্যে রোগ সংক্রমণ হল, তা খতিয়ে দেখা হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কাজ করছে। তবে, সম্পূর্ণ সত্য জানতে সময় লাগবে।
অভিযোগকারী পরিবারের তরফে জানানো হচ্ছে, ওই হাসপাতালের ডায়ালিসিস (Dialysis) সেন্টারের সঙ্গে যে বেসরকারি সংস্থা জড়িত আছে, তারা জানিয়েছে, এই ঘটনায় তাদের কোনও দায়িত্ব নেই। সরকার থেকে যেমন সিরিঞ্জ দেওয়া হয়, সেগুলিই তারা ব্যবহার করে।
সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস (Dialysis) করাতে গিয়ে একসঙ্গে পাঁচজন রোগী এইচআইভি সংক্রমণের শিকার হলেন, এই ঘটনায় বিস্মিত চিকিৎসক মহল। বিশেষত আক্রান্ত ও তাদের পরিবারকে যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ চিকিৎসক মহল। তারা জানাচ্ছে, শুধুমাত্র অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক থেকেই এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে, এই ধারণা ভ্রান্ত। এই ধরনের ঘটনার জেরে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরও কমবে। রক্তের মাধ্যমেও এই রোগ সংক্রমিত হয়। এরকম করলে ভবিষ্যতে এইচআইভি রোগীরা নিজেদের সমস্যা জানাতে ভয় পাবেন। তারা জানাচ্ছে, ডায়ালিসিস করার আগে রোগীর একাধিক রক্ত পরীক্ষা হয়, যেখানে স্পষ্ট করা থাকে, ওই রোগীর হেপাটাইটিস কিংবা এইচআইভি সংক্রমণের মতো সমস্যা রয়েছে কিনা। হাসপাতালে কি সেই নিয়ম মেনে পরীক্ষা করা হয় না? যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে অভিযোগকারী রোগীদের সেই রিপোর্ট কেন স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশ করে ঘটনার সুরাহা করছে না? সেই প্রশ্নও তুলছেন রাজ্যের চিকিৎসক মহল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।