মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তৃণমূল সরকারের (TMC Government) ভোট অস্ত্র। শহর থেকে গ্রাম এই সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন ঢেকে গিয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী যে কোনও সভা মঞ্চে সাফল্যের তালিকা তুলে ধরলেই সেই প্রকল্পের কথা সব্বার প্রথমে বলেন। কিন্তু তারপরেও যেন বাস্তবে বড় ধাক্কা খেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata) স্বপ্নের প্রকল্প।
রাজ্যে বাড়ছে নাবালিকা বিয়ে। প্রশ্ন উঠছে কন্যাশ্রী কি শুধুই বিজ্ঞাপনে আটকে? বাস্তবের ছবি কি আলাদা? ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের (NFHS) ২০১৯-২০ সালের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নাবালিকা বিয়ে (Child Marriage) বেড়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের বিয়ের সংখ্যা ২০১৫-১৬-র তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালের এনএফএইচএস রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪১ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৯-২০ সালের এনএফএইচএস রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ৪৮.১ শতাংশ গ্রামীণ মেয়ের নাবালিকা বিয়ে হয়। শহরে সেই সংখ্যা ২৬.২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: কার্ড দেখালেই বেসরকারি হাসপাতালে 'বেড ফাঁকা নেই', স্বাস্থ্য সাথী কি কেবল 'বিজ্ঞাপন'?
কেন্দ্রের এই পরিসংখ্যান কন্যাশ্রীর (Kanyashree) সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে মনে করছেন একাংশ। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু করে। মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প। ১৮ বছর পর্যন্ত মেয়েরা পড়াশোনা করবে এবং নাবালিকা বিয়ে আটকানো যাবে, এই দুইয়ের বাস্তবায়ন কন্যাশ্রীর উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে কন্যাশ্রী আদৌও কার্যকরী হচ্ছে কি? সেই প্রশ্ন জোরালো করছে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান।
প্রশাসনের অন্দরের একাংশ জানাচ্ছেন, কন্যাশ্রী নিয়ে প্রচার যতখানি হচ্ছে, সুফল ভোগ কত মেয়ে করছে, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। অনেকেই কন্যাশ্রীর টাকা ঠিক মতো পাচ্ছে না। শুধু টাকা নয়, সরকারের তদারকিরও অভাব থাকছে। মেয়েদের বিয়ে রুখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা জরুরি। কিন্তু অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠছে, নাবালিকা বিয়েতে স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলরদের ও ইতিবাচক ভূমিকা থাকছে। ফলে, হোর্ডিংয়ের মতো বাস্তবে কন্যাশ্রী জ্বলজ্বল করছে না।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়া নিয়েও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনেক এলাকায় কন্যাশ্রীর টাকার একাংশ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা কাউন্সিলরকে দিতে হয়। কন্যাশ্রীর টাকার 'ভাগ' না পেলে প্রয়োজনীয় নথিতে সই করতে চান না সংশ্লিষ্ট মহল। তার উপরে কে কন্যাশ্রী পাবে, সে নিয়েও চলে নানান রাজনৈতিক জটিলতা। এলাকার শাসক দলের নেতার সুনজরে না থাকলে অনেকেই ফর্ম পূরণ করেও কন্যাশ্রীর সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে, যাদের এই প্রকল্পের প্রয়োজন, তাঁরা অনেকেই আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: এসএসসিতে ভুয়ো নিয়োগ কত? ১৩ হাজারের নামের তালিকা পর্ষদের!
যদিও কন্যাশ্রীর জন্য পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে বলে মনে করেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী যে সফল, তা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও স্বীকৃতি পেয়েছে। নাবালিকা বিয়ের মতো সমস্যা একদিনে মিটবে না। প্রশাসন এ নিয়ে তৎপর। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে এই ঘটনা আরও বেশি হচ্ছে।"
তবে, খামতি যে থাকছে সে কথা স্বীকার করছে রাজ্য শিশুর অধিকার সুরক্ষা কমিশন। কমিশনের তরফে বলা হয়, নাবালিকা বিয়ে একটা সামাজিক সমস্যা। একে পুরোপুরি নির্মূল করতে হলে আরও সক্রিয় হতে হবে। সব মহলকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি মেয়েদের সতর্ক ও করতে হবে। বাড়ির লোক জোর করলেও যাতে মেয়েরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানায়, অভিযোগ করে, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। সেটা হচ্ছেও। অনেক জায়গায় মেয়েদের সাহসের জোরেই নাবালিকা বিয়ে আটকানো যাচ্ছে।
+ There are no comments
Add yours