Kolkata Taxi: উৎপাদন বন্ধ, পরিকল্পনার অভাব! কলকাতার রাস্তা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হলুদ ট্যাক্সি
কলকাতা থেকে হলুদ ট্যাক্সি বিলুপ্তির পথে। ফাইল চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দোতলা বাস, ট্রামের পর এবার হলুদ ট্যাক্সি (Yellow Taxi)। হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতার (Kolkata Taxi) পরিচিতি। ইতিহাস বলছে, ইউরোপে অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে হলুদ ক্যাবের আনাগোনা শুরু হয়। প্যারিস ও লন্ডনে সেই সময় শুধু হলুদ ক্যাবের দাপট ছিল। ঊনিশ শতকে কলকাতার রাস্তায় আসে হলুদ ট্যাক্সি। ক্রমেই হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের মতোই হলুদ ট্যাক্সি হয়ে ওঠে কলকাতার পরিচিতি। হলুদ ট্যাক্সির সঙ্গে কলকাতার নস্ট্যালজিয়া জড়িয়ে রয়েছে। ট্রাম প্রায় উঠেই গিয়েছে। এবার হলুদ ট্যাক্সি বিদায় নেওয়ার পালা।
স্বাধীনতা লাভের অনেক আগে থেকেই এই শহরের রাজপথে দাপিয়ে বেড়াত ট্যাক্সি (Yellow Taxi)। ইতিহাস বলছে, ১৯০৮ সালে কলকাতায় শুরু হয় পরিষেবা। তখন ভাড়া ছিল মাইল প্রতি আট আনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই ১৯৪৮ সালে উত্তরপাড়ার হিন্দুস্তান মোটর ফ্যাক্টরিতে শুরু হয় গাড়ি তৈরি। ১৯৫৮ সাল থেকে সেখানে তৈরি হতে থাকে অ্যাম্বাসাডর। ১৯৫৬ সালের মরিস অক্সফোর্ড সিরিজ ৩-কে মাথায় রেখেই তৈরি হয় নকশা। এর পর ১৯৬২ সালে কলকাতা ট্যাক্সি (Kolkata Taxi) অ্যাসোসিয়েশন অ্যাম্বাসাডরকেই পরিণত করল ট্যাক্সিতে। রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয় হলুদকেই। কারণ একটাই, দূর থেকে পরিষ্কার দেখা যায় এই রং। এমনকী, রাতের বেলাতেও।
শহর কলকাতার পরিচয় যেন এই হলুদ ট্যাক্সি (Yellow Taxi)। কলকাতা বললেই ভিন রাজ্য বা দেশের মানুষের কাছে প্রথমেই ভেসে ওঠে এই হলুদ যান৷ বিভিন্ন সেলিব্রেটিদেরও কলকাতায় এসে এই হলুদ ট্যাক্সি চেপে শহর চষে বেড়াতে দেখা গিয়েছে৷ সম্প্রতি তার উদাহরণ হল, বিখ্যাত পাঞ্জাবি গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জ৷ কলকাতায় এসে তিনি হলুদ ট্যাক্সি চড়ার বেশকিছু ছবি পোস্ট করেছেন তাঁর সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে৷ এর আগে কার্তিক আরিয়ানকেও দেখা গিয়েছিল ছবির প্রচারে শহরে এসে হলুদ ট্যাক্সির মাথায় উঠে ছবি তুলতে৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিদ্যা বালানও৷ বাংলা সাহিত্য, সিনেমা, সিরিয়াল প্রভৃতিতে হলুদ ট্যাক্সির ছিল অবাধ বিচরণ। এখন তা বিলুপ্তির পথে।
সূত্রের খবর, করোনার আগে কলকাতায় রাস্তায় চলত ১৬,৫০০ ট্যাক্সি। এখন মহানগরের রাস্তায় ট্যাক্সির সংখ্যা কমে ৭-৮ হাজার। কলকাতায় সকালের রাস্তায় প্রায় ২,৫০০ বৈধ ট্যাক্সি চলে। রাতে প্রায় ৩০০০ ট্যাক্সি চলে, ৯০ শতাংশের বৈধ নথি নেই। চালকের অভাব ও অন্যান্য কারণে বসে গেছে ৬,৫০০ ট্যাক্সি। সেই ২০১৪ সাল থেকে হিন্দুস্তান মোটর্সের অ্যাম্বাসাডর গাড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ। এবার ধরুন যে ট্যাক্সির মেরামতির প্রয়োজন হল, তখন আবার গাড়ির আসল যন্ত্রাংশ অনেক সময় মিলছে না। হাজারও সমস্যা। তার উপর ধরুন, মান্ধাতার আমলের মিটার। এসবের মধ্যে ২০০৮-০৯ থেকে যে সব ট্যাক্সি পথে নেমেছিল, তাদের মেয়াদও ফুরোনোর মুখে। মাঝখানে অতিমারি-পর্বে দু’বছরেরও বেশি হলুদ ট্যাক্সি কার্যত বসে ছিল। চালকদের একাংশ বলছেন, তখন গাড়ির ইঞ্জিনের সেভাবে ক্ষতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু, গাড়ি না নামায় রোজগারও তো বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ব্যাঙ্কে ঋণের কিস্তি মেটাতে হয়েছে। অতিমারি কেটে যাওয়ার পরে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও জ্বালানির দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চালকদের অভিযোগ, ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙায় জরিমানা বেড়েছে অনেকটাই। পুলিশের জুলুম চলে। এর পাশাপাশি কমেছে যাত্রী। সব মিলিয়ে সঙ্কটের মুখোমুখি। এর ফলে একের পর এক ট্যাক্সি বসে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দুষছে একাধিক সংগঠন।
কলকাতায় ধুঁকছে হলুদ ট্যাক্সি (Yellow Taxi)। অথচ, লন্ডনে ব্ল্যাক ক্যাব অর্থাত্ কালো ট্যাক্সিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেখানে সংস্কৃতি বাঁচিয়ে পরিবহণের চাকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। অনেকেই বলছেন, যাত্রী সাথী অ্যাপ আনার পর ট্যাক্সি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হয়রানি কমলেও, সেই অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রচারের অভাব পদে পদে। এখানেও তো সেই প্রশ্ন সদিচ্ছার। এখন তো স্মার্টফোন থাকলেই অ্যাপের মাধ্যমে নিমেষে ট্যাক্সি বুক হয়ে যায়। আবার সেই বেসরকারি অ্যাপ নির্ভর ক্যাব নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু, তারপরও অ্যাপ ক্যাবের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে ট্যাক্সি।
আরও পড়ুন: নিয়মের বেড়াজালে বন্ধ হয়ে গেল শ্রীরামপুর-কলকাতা ৯৮ বছরের পুরানো ৩ নম্বর বাসরুট
একদা শহর কলকাতা মানেই তো ছিল ট্রাম এবং হলুদ ট্যাক্সি (Yellow Taxi)। তবে বর্তমানে গণপরিবহণ অনেক বেশি স্মার্ট। তাই এক সময় অতি ব্যবহৃত ট্রাম বা হলুদ ট্যাক্সি অপরিহার্য থাকলেও শহরবাসী এখন অনেক বেশি নির্ভরশীল মেট্রো এবং অ্যাপ ক্যাবের উপর। রাজ্যে বন্ধ হয়েছে অ্যাম্বাসেডর গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা হিন্দুস্থান মোটরস৷ হলুদ ট্যাক্সিগুলো হল অ্যাম্বাসেডর গাড়ি৷ হিন্দুস্থান মোটরস কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাই তার সঙ্গে অস্তাচলে গিয়েছে অ্যাম্বাসেডর গাড়ির নির্মাণও। হিন্দুস্থান মোটরসের বিড়লার কারখানাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর তাই পথে যেই অ্যাম্বাসেডর ট্যাক্সিগুলো চলছে, সেগুলি অচিরেই বয়সের ভারে স্বাভাবিক নিয়মে চলা বন্ধ করে দেবে। আড়াই হাজার ট্যাক্সি বাতিল হয়ে গেলে বাকি ট্যাক্সি (Kolkata Taxi) দিয়ে যাত্রিচাহিদা সামলানো অসম্ভব। একটি ট্যাক্সি পিছু পাঁচটি করে পরিবারের অন্নসংস্থান হয়। এত সংখ্যক ট্যাক্সি এক সঙ্গে বসে গেলে পথে বসবেন অনেকে। মুম্বই এই বিষয়ে পথ দেখিয়েছে। একসময় মুম্বইয়ে ট্যাক্সির যাত্রা শুরু হয়েছিল ফিয়াট কোম্পানির প্রিমিয়ার পদ্মিনী দিয়ে। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যনগরীতে এখন বিভিন্ন গাড়ি নির্মাণ সংস্থার নানা মডেলের গাড়ি চলে। কলকাতাতেও এই ধরনের ব্যবস্থা আনতে চাইছেন ট্যাক্সি চালকেরা। আর নস্ট্যালজিক কলকাতাবাসীও বলছে "ফিরবে না, সে কী ফিরবে না...ফিরবে না আর কোনও দিন!"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।