মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নজিরবিহীন পদক্ষেপ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার পরীক্ষার মুখে খোদ পরীক্ষকরাই। বন্ধ ঘরে ইন্টারভিউয়ারদের গোপন বয়ান নিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর এই পরীক্ষকদের জিজ্ঞাসা করতেই বেরিয়ে এল আরও এক আশ্চর্যকর তথ্য। টেট পরীক্ষার অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়া সেই পরীক্ষকদের একাংশ জানালেন, তাঁদের অনেকে জানতেনই না অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট কী ভাবে নিতে হয়। আর এমনকী পরীক্ষকদের মধ্যে একজন বিচারপতিকে বলেছেন, বাংলায় কথা বলতে, ইংরেজি বুঝতে পারবেন না। ফলে খোদ পরীক্ষকদের এমন পরিস্থিতি দেখে প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
কী ঘটেছিল?
২০১৪-এর টেটের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে নিয়োগপ্রক্রিয়া সংগঠিত হয়েছিল। অভিযোগ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি। নিয়োগের পরীক্ষায় অ্যাপ্টিটিউড টেস্টে নিয়ম না মানার অভিযোগ করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই প্রেক্ষিতে এবার হুগলি, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার এবং মুর্শিদাবাদের ইন্টারভিউয়ারদের তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, পর্ষদের হলফনামা থেকে এটা স্পষ্ট যে প্রাথমিকের ২০১৬-র নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কোনও অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট হয়নি। ৪০ জনের সঙ্গে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার কথা থাকলেও এই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে উপস্থিত ছিলেন না হাওড়ার ইন্টারভিউয়াররা। ফলে মোট ৩০ জনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বিচারপতি।
পরীক্ষকদের কথা শুনে 'স্তম্ভিত' বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
গতকাল এজলাসে নয়, হাইকোর্টের সার্ধশতবর্ষ ভবনের একটি ঘরে পরীক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন বিচারপতি। ১১টা ৪৫ থেকে শুরু হয় সেই প্রক্রিয়া। পরীক্ষকদের আশ্বস্ত করে বিচারপতি জানান, সামান্য কিছু প্রশ্ন করা হবে। এরপর নাম ডেকে একে একে ওই পরীক্ষকদের ঘরে ডাকা হয়। তাঁদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন বিচারপতি।
আইনজীবী সূত্রে খবর, বন্ধ ঘরে উপস্থিত ইন্টারভিউয়ারদের প্রথমেই বিচারপতি অভয় দিয়ে বলেন, “আপনাদের কোনও ভয় নেই। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। যা সত্যি তা আমায় জানাবেন। তবে বিচারকক্ষের বাইরে এ নিয়ে কোনও কথা বলবেন না।” এর পর সেখানেই কেউ কেউ বিচারপতিকে জানান, অ্যাপ্টিটিউড পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না তাঁরা। এই পরীক্ষা কী, কীভাবে নিতে হয়, তা কিছুই জানতেন না তাঁরা। আবার তাঁদের কারও কারও ‘জ্ঞানের দৌড়' দেখেও বিস্মিত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। খবর মিলছে, এই ‘পরীক্ষক'-দের একজন নাকি জেরার শুরুতেই আর্জি জানান “বাংলায় বলুন সার! ইংরেজি বুঝতে পারব না।” যা শুনে স্তম্ভিত বিচারপতি।
ফলে যাঁরা পরবর্তীতে শিক্ষক হতে চলেছেন, তাঁদেরই পরীক্ষা নিতে পারেননি এই ইন্টারভিউয়ার বা পরীক্ষকরা। ফলে তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে বিচারপতি। এমনকী প্রাথমিকে ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষক নিয়োগ নিয়েই ফের প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। আদালত সূত্রে খবর, এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি। তবে সে দিন আর রুদ্ধদ্বার শুনানি নয়। নিজের এজলাসেই মামলাটি শুনবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
+ There are no comments
Add yours