IIEST Shibpur: শিবপুর আইআইইএসটি-তে নেই র‍্যাগিং বা ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা, কীভাবে সম্ভব হল?

শিবপুর করে দেখিয়ে দিয়েছে, যাদবপুর কি পারবে র‍্যাগিং বন্ধ করতে?
IIEST_Shibpur
IIEST_Shibpur

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ছাত্রমৃত্যুতে উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এরকমই ছাত্রমৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার শিবপুর আইআইইএসটি-তে ছাত্র সংঘর্ষ ও র‍্যাগিংয়ের ঘটনা। অভিযোগ, ২০০৬ সালের আগে বারবার র‍্যাগিং ও ছাত্র সংঘর্ষের অভিযোগ আসত হাওড়ার শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০০৬ সালে তৎকালীন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু-র ১১ নম্বর হস্টেলের দোতলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় সৌমিক বসু নামে তৃতীয় বর্ষের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রের। সেই সময় বেসুতে এসএফআই  এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন নামে দুই ছাত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ প্রায়শই লেগে থাকত। মাঝে মধ্যে অভিযোগ আসত র‍্যাগিংয়েরও।

কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল সৌমিক বসুর?

সৌমিক বসু এসএফআই-এর সমর্থক ছিলেন। ২০০৬ সালের ৭ই অগাস্ট রাতে ১১ নম্বর হস্টেলে দুই ছাত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ৮ ই অগাস্ট যখন ততকালীন রেজিস্ট্রার ইন্দ্রনাথ সিনহা (বর্তমানে মাইনিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক) হস্টেলে ঢুকছিলেন, সেই সময় ওই ছেলেটি মনে করেন যে ইন্দ্রনাথবাবু পুরো ব্যাপারটা জেনে গেছেন। তখন তিনি ছুটে পালাতে যান। তখন ছিল বর্ষাকাল। বারান্দা ভিজে ছিল। পা পিছলে দোতলা থেকে নিচে পড়ে যান ওই যুবক। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে থাকে। প্রথমে কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকরা দ্রুত তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গ্রিন করিডোর করে সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও বাঁচানো যায়নি। ১২ তারিখ অর্থাৎ ঘটনার তিন দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়।

কীভাবে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল র‍্যাগিং?

সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত শুরু হয়। সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। পরে পরশমণি চট্টোপাধ্যায় কমিশন গঠন করা হয়। পরশমণি চট্টোপাধ্যায় বেসু-র প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন। তিনি এই ক্যাম্পাসে গন্ডগোল এবং র‍্যাগিং রুখতে বেশ কিছু পরামর্শ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার ফলে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ আস্তে আস্তে কমে যায় এবং র‍্যাগিংয়ের ঘটনাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ২০১৪ সালে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বেসু রূপান্তরিত হয় শিবপুর আইআইইএসটি-তে। কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে চলে আসে বেসু। শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বর্তমানে ইউজিসি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে।

এরপর ‍র‍্যাগিং বা ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা রুখতে আইআইইএসটির অধ্যাপকরা উদ্যোগী হন। ‍র‍্যাগিং এবং ছাত্র সংগঠনের ঘটনা বন্ধে যেমন অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটিকে সক্রিয় করা হয়, এর পাশাপাশি ছাত্রদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হয়। ক্যাম্পাস চত্বরে সিসিটিভি, অ্যান্টি রাগিং হেল্পলাইন চালু করা, বাইরের রাজনীতি থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতি বন্ধ করা, আইআইইএসটি-র গেটে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কোনও রকম আইডি কার্ড ছাড়া কাউকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়া, এই সমস্ত নানা পদক্ষেপের ফলে র‍্যাগিং ও ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

কী বলছেন ছাত্ররা?

আইআইইএসটির এক ছাত্র বলেন, যাদবপুরে যেমন বহিরাগত রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ অনেক বেশি দেখা যায়, সে দিক থেকে শিবপুর আইআইইএসটি সম্পূর্ণ ভাবে বাইরের রাজনীতি থেকে মুক্ত। কেন্দ্র সরকারের অধীনে সরাসরি চলে যাওয়ার পর সেখানে ছাত্র নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই তাঁদের লিডার নির্বাচন করেন। এছাড়া হস্টেল ক্যাম্পাসে পাশ আউট ছাত্রদের থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। হস্টেল, লাইব্রেরি সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের বিভাগ থেকে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিলে তবেই ছাত্রদের হাতে মার্কশিট দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই আইআইইএসটি-তে বহিরাগত বা পাশ আউট ছাত্রছাত্রীরা থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই।

কী বলছেন জয়েন্ট রেজিস্ট্রার? 

বর্তমান জয়েন্ট রেজিস্ট্রার (অ্যাকাডেমিক) নির্মাল্যকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ২০০৬ সালে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর ছাত্র-ছাত্রীদের উপলব্ধি হয় যে অযথা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন তাঁরা। তারপর থেকে নিজেরাই আস্তে আস্তে এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে এখানে র‍্যাগিং বলে কিছু নেই। উল্টে তাঁরা সিনিয়রদের কাছ থেকে সহযোগিতা পান অনেক বেশি।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles