প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার
সিনেমায় মধ্যবিত্তের গল্প বলা মানুষটা চলে গেলেন। সোমবার সকাল এগারোটা সতের মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তরুণ মজুমদার। বয়স হয়েছিল ৯২। গত ২২ বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তরুণ মজুমদার। এছাড়াও বর্ষীয়ান পরিচালকের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ও ডায়াবিটিস রোগও ছিল। একাধিক জটিলতা নিয়েই SSKM-এ ভর্তি হয়েছিলেন।দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন বিখ্যাত চলচিত্র পরিচালক। এর আগেও চিকিৎসার কারণে তাঁকে ভর্তি করতে হয়েছিল এসএসকেএমে। প্রতিবারই ফিরে এসেছিলেন। এবার আর ফেরা হল না।
তরুণ মজুমদার নামে নয়। তার প্রথম সিনেমা পরিচালনা যাত্রিক নামে। সঙ্গী আরও দুই চিত্র পরিচালক শচীন মুখার্জি আর দিলীপ মুখার্জি। ১৯৫৯ সালে। ছবির নাম চাওয়া-পাওয়া। নায়ক নায়িকা উত্তমকুমার আর সুচিত্রা সেন। সেই শুরু। যাত্রিক নামেই পরিচিত ছিল তিন পরিচালকের টিম। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত একাধিক ছবি পরিচালনা করে যাত্রিক।
১৯৬৫ সালে প্রথমবার পরিচালক তরুণ মজুমদারকে পায় বাংলা সিনেমা। 'একটুকু বাসা' দিয়ে শুরু এরপর 'আলোর পিপাসা'। তৃতীয় ছবি 'বালিকা বধু'তেই বাজিমাত। সাতষট্টির বক্স অফিস জানল নতুন মুখের সারল্যেও তুফান ওঠে হলে। এরপর একে একে ১৯৭১-এ কুহেলি, তিয়াত্তরে শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, চুয়াত্তরে ফুলেশ্বরী, আশি সালে দাদার কীর্তি। তরুণ মজুমদারের মধ্যবিত্ত তারুণ্যের গল্পে মজেছিল বাঙালি। মৌসুমি চ্যাটার্জি, মহুয়া রায়চৌধুরী, অয়ন ব্যানার্জি, তাপস পালের মত একাধিক নতুন মুখের চলচিত্রে হাতে খড়ি তার হাত ধরেই। এছাড়াও সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, পলাতক, নিমন্ত্রণ, ঠগিনীর মত অসংখ্য বিখ্যাত সিনেমার পরিচালক তরুণ মজুমদার। মধ্যবিত্ত বাঙালির সাদামাটা জীবনের লড়াই-ই তার পরিচালনায় অরূপকথা হয়ে উঠত।
চলচ্চিত্র জীবনে একাধিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছিলেন এই চলচ্চিত্র পরিচালক। ৪টে জাতীয় পুরস্কার, সাতটা বিএফজেএ পুরস্কার পাঁচটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এছাড়াও বহু পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালবাসা। ১৯৯০ সালে দেশের সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করে।
দেহদান করেছিলেন তরুণ মজুমদার। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা। শোক জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য সহকর্মী, গুণমুগ্ধ দর্শক। আর আপামর বাঙালি।
শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মাধ্যমও