স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষে দেশের প্রথম নাগরিক সাঁওতালি কন্যা?
A Journey: Tribal belt to Raisina Hills
সুখবরটা পেয়েছিলেন গতকাল রাতে। আজ তাই সকাল হতেই চলে এসেছিলেন মন্দির প্রাঙ্গনে। নিজের হাতে ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করলেন ঠাকুরদালান। তারপর মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম।
হ্যাঁ, ইনিই দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থী। গতকালই তাঁর কাছে ফোন আসে খোদ প্রধানমন্ত্রীর। নিজের কানকেও তখন বিশ্বাস করতে পারছেন না কাউন্সিলর থেকে রাজ্যপাল হয়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে পা বাড়ানো দ্রৌপদী। দু চোখ দিয়ে তখন নেমে আসছে জলের ধারা। আজ যখন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলায় নিজের বাড়িতে উৎসবের চেহারা, তখন সেকথা জানিয়েছেন দ্রৌপদীর মেয়ে ইতিশ্রী। আসলে জন্মদিনের একদিন পর থেকেই জীবনটা বদলে যেতে শুরু করেছে বিজেপির এই লড়াকু নেত্রীর। তাঁর নিরাপত্তায় আজ কমান্ডো বাহিনী। সকালে মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময়ও তাঁকে ঘিরে রেখেছিল এই জেড প্লাস নিরাপত্তারক্ষীরা। অঘটন না ঘটলে তিনিই হতে চলেছেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি।
১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে জন্ম দ্রৌপদীর। বাবার নাম বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু । বিয়ে হয় শ্যামচরণ মুর্মুর সঙ্গে। শ্যামচরণ ছিলেন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ম্যানেজার। অবসর নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলেকেও হারান দ্রৌপদী। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রামে নামেন দ্রৌপদী। সেচ দফতরের কর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন। করেন শিক্ষকতাও। রাইরঙ্পুরে শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৭ সালে বিজেপি কাউন্সিলর হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ওই বছরই রাইরঙ্গপুরে বিজেপির ভাইস চেয়ারপার্সন হন। ২০০০ সালে নির্বাচিত হন বিধায়ক হিসেবে। ২০০২ সাল পর্যন্ত পরিবহণ ও বাণিজ্য দফতর সামলান। এরপর মৎস্য ও পশুপালন দফতরের মন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনি।
২০০৪ সালে রাইরঙ্পুর বিধানসভা থেকে দ্বিতীয় বার বিধায়ক হিসেবে জিতে আসেন ।
২০০৬ সালে বিজেপি তাঁকে জনজাতি মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদে বসায়।
২০১০ ও ২০১৩ সালে পরপর দুবার তিনি ময়ুরভঞ্জ জেলার বিজেপি সভাপতি হন।
২০১৫ সালে ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেন তিনি।
আর এবার একেবারে রাষ্ট্রপতি পদের দাবিদার। ওড়িশা থেকে তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। ফলে রাজ্য বিজেপিতে খুশির হাওয়া। বুধবার রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বিজেপি মহিলা ব্রিগেড। চলে লাড্ডু বিতরণ।
চলছে উদযাপন। আসছে শুভেচ্ছা। এভাবেই ২০০৭ সালে ওড়িশার সেরা বিধায়ক হিসেবে নীলকান্ত পুরস্কার পাওয়া দ্রৌপদী মুর্মু এবার দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসেবে রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী একদা বিজেপির বিদেশমন্ত্রী তথা দলত্যাগী যশোবন্ত সিনহা। দ্রৌপদীর মনোনয়ন ওড়িশাবাসীর কাছে গর্বের মুহূর্ত বলে জানিয়েছেন নবীন পট্টনায়ক। সমর্থন এসেছে নীতীশের পক্ষ থেকেও। ফলে মোদি জমানায় দেশ যে প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি পেতে চলেছেন, তা খালি সময়ের অপেক্ষা।