অমর অটল
তিনি কবি। তিনি সুবক্তা। তিনি রাজনীতিবিদ। তিনি তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পান ভবিষ্যতের ভারত। তাঁর স্বপ্নের ঢেউ ভারত আত্মাকে দোলা দেয়। তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে সেতুবন্ধন রচনা করেন দুই শতকের। অটল বিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee)। ভারতের দশম প্রধানমন্ত্রী (10th Prime Minister)। ১৯৫৭ থেকে ২০০৪। নেহরু জমানা থেকে মোদির সময়কাল। পুরো সময় জুড়েই তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। আজ দেশজুড়ে উন্নয়নের যে বিপুল সমাহার, জাতীয় সড়কে গতির উল্লাস,এর সূচনা তাঁর আমলেই। সোনালি চতুর্ভূজের মাধ্য়মে তিনিই প্রথম দেশকে সড়কপথে এভাবে জোড়ার চেষ্টা করেন। ভারতে মোবাইল ফোনের বর্তমানে যে বিস্তার,এর নান্দীপাঠও হয়েছিল তাঁর আমলেই। সেই ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মবার্ষিকী ২৫ ডিসেম্বর। ২০১৪ সাল থেকে এই দিনটিকেই পালন করা হচ্ছে সুশাসন দিবস হিসেবে।
১৯২৪ সাল। গোয়ালিয়রে জন্ম অটলবিহারীর। বাবা কৃষ্ণবিহারী বাজপেয়ী। মা কৃষ্ণা দেবী। সাত ভাইবোনের সংসার। বাবা শিক্ষক। কবিও। মূলত বাবার হাত ধরেই তাঁর মধ্যে আন্দোলিত হতো কবিতা। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ বাস করে আইন নিয়ে পড়তে যান। কানপুরে তাঁর সহপাঠী হন তাঁর বাবাও। শিক্ষকতার পর কৃষ্ণবিহারীও পড়তে চান ল। ছেলের সঙ্গেই এক ক্লাসে পড়া। থাকাও একসাথে। এভাবেই শিক্ষা জীবন এগিয়ে চলে অটলবিহারীর। বাবা সাহেব আমতের প্রভাবে যোগ দেন আরএসএসে। ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাঁকে জেলও খাটতে হয়। এরপর দেশ স্বাধীন হয়। ১৯৪৭ সালে পুরো সময়ের জন্য আরএসএসের প্রচারক হন। যান উত্তরপ্রদেশ। সেখানে সাংবাদিকতাও করেন। ১৯৫৭ সালে জনসঙ্ঘের হয়ে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন তিনি। দাঁড়িয়ে ছিলেন দু জায়গায়। হারেন মথুরায়। জেতেন বলরামপুরে। তাঁর ভাষণে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু। এই মুগ্ধতা বজায় ছিল সর্বত্র। ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের মন্ত্রিসভায় তিনি বিদেশমন্ত্রী হন। অটল বিহারীই প্রথম রাজনীতিবিদ, যিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনে হিন্দিতে বক্তৃতা দেন। ১৯৭৯ সালে জনতা দল সরকারের পতন হয়। এর পরের বছরই ১৯৮০ সালে আডবাণীকে নিয়ে তিনি তৈরি করেন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি।
তবে তার আগেই জনতার মন উদ্বেলিত করে তুলেছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে রামলীলা ময়দানে এমার্জেন্সির বিরোধিতায় তাঁর ভাষণ শুনতে জনতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেদিন এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটে। বিরোধী সভা ভেস্তে দিতে সেদিন টিভিতে ববি সিনেমা দেখানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধী। কিন্তু সত্তর দশকের হিট ফিল্ম ববির প্রলোভনকে উপেক্ষা করেই জনতা সেদিন সাড়া দিয়েছিল বাজপেয়ীর আহ্বানে। রাত পর্যন্ত রামলীলা ময়দানে হাজির ছিলেন তাঁরা। ফলে এই মিরাক্যালই কাজ করেছিল আগামিদিন। ১৯৮০ সালে বিজেপি গঠন। ১৯৮৪ সালে লোকসভা ভোটে দুটি আসন। এর বারো বছর পরেই ১৯৯৬ সালে ভোটে সবচেয়ে বেশি আসন। কিন্তু সেবার মাত্র ১৩ দিনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯৮ সালে ১৩ মাসের জন্য দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৯ সালে তৈরি হয় ২৪ দলের এনডিএ জোট। তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে পাঁচবছর সময়কালই অতিবাহিত করেন বাজপেয়ী। আর সেসময়ই দেখিয়ে দেন, আলাদা মত, আলাদা ভাবনা থাকলেও কীভাবে চালাতে হয় জোট সরকার।
শুধু জোট সরকারই নয়, প্রতিবেশী দেশকে কীভাবে কাছে টানতে হয়, সেই পাঠও দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। ১৯৯৯ সালেই পাকিস্তানকে দিয়েছিলেন বার্তা। তুমি যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে পার, কিন্তু প্রতিবেশী দেশকে বাছার সুযোগ নেই। কঠিন সময়ে প্রতিবেশীই প্রতিবেশীকে দেখে। সেই সদ্ভাবনা থেকেই তিনি শুরু করেছিলেন দিল্লি লাহোর বাস যাত্রা। চেষ্টা করেছিলেন দিল্লিতে পাক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা মেটানোর। কিন্তু পাকিস্তান নিজেকে বদলাতে পারে না। তাই কারগিলে অনুপ্রবেশ করে তা দখলের চেষ্টা করে। যোগ্য জবাব দেয় ভারত। এভাবেই উদয় হয় নতুন ভারতের। আমেরিকার রক্তচক্ষু এড়িয়ে পোখরানে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটান অটল বিহারী বাজপেয়ী। নান্দীপাঠ করেন নতুন ভারতের। যে পথে এগিয়ে আগামী ভারত বিশ্বের সমীহ আদায় করবে। কুর্নিশ করবে ভারতের সত্যমেব জয়তেকে।
Tags:
Atal Bihari Vajpayee
atal bihari vajpayee speech
atal bihari vajpayee poems
atal bihari vajpayee latest news
atal bihari
vajpayee
atal bihari vajpayee news
pm atal bihari
atal bihari vajpayee best speech
atal bihari pradhan mantri
birthday of atal bihari vajpayee
atal bihari vajpayee birthday
birthday
atal bihari vajpayee birth anniversary
atal bihari vajpayee's birthday
bihari
atal bihari vajpayee 98th birth day