শিবসেনায় উদ্ধব-জমানার শেষ?
গাঁটছড়াটা ছিঁড়েছিল ২০১৯ সালে। তার আগে ৩০ বছরের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। একসঙ্গে ভোটে লড়া। একজোটে হিন্দুত্বের সওয়াল করা। সবকিছু চলছিল ভালোই। কিন্তু উনিশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি শতাধিক আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এলেও, অন্য সুর ধরেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। মুখ্যমন্ত্রিত্বের দিকে চোখ ছিল তাঁর। আর এই লোভেই ভেঙে গেল সেই পুরনো সম্পর্ক। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাই যাদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ভোটে লড়েছিলেন, তাদের সঙ্গেই জোট বাঁধলেন বালা সাহেব পুত্র উদ্ধব ঠাকরে। তখন তাঁর স্বপ্ন সফল হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন তাঁরই একসময়ের অনুগতরা। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এখানেই কি ফুলস্টপ পড়বে উদ্ধবের রাজনীতিতে?
এরমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছেন একনাথ শিন্ডে। শিবসেনার দখল নিতে নির্বাচন কমিশনে সরকারি ভাবে আর্জি জানাতে চলেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে শিবসেনার ৫০ বিধায়ক আছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। ফলে একটা ক্রস রোডে এসে দাঁড়িয়েছে বালাসাহেবের দল। ষাটের দশকে, যখন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মারাঠিদের উৎখাত করা হচ্ছিল, সেই সন্ধিক্ষণে শিবসেনা গঠন করেন বালাসাহেব ঠাকরে। গত ৫৬ বছরে বারবার ভাঙনের মুখে পড়েছে হিন্দুত্ববাদী দলটি। ১৯৯১ সালে ছগন ভুজবালের নেতৃত্বে বহু বিধায়ক বেরিয়ে যান দল থেকে। ২০০৫ সালে দল ছাড়েন নারায়ণ রানে। তাঁর সঙ্গেই শিবসেনা ত্যাগ করেন অনেক বিধায়ক। ঠিক তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৬ সালে দল ছাড়েন বালাসাহেবের ভাইপো রাজ ঠাকরে। অনুগামীদের নিয়ে তিনি তৈরি করেন নতুন দল। এত ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যেও নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছিল শিবসেনা। তবে এবারে অন্য ছবি। এতটা বিপর্যয়ের মধ্যে আগে পড়েনি ঠাকরে পরিবার। দলের ক্ষমতা একনাথ শিন্ডে নেওয়ার পরই তাঁর অনুগামীরা যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তা থেকে বোঝা যায়, কী চাইছিলেন তাঁরা।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন চিন্তার মেঘ ঠাকরে পরিবারে। উদ্ধব এখন বলছেন, আড়াই বছর তাঁকে যদি মুখ্যমন্ত্রিত্ব দেওয়া হতো, তাহলে আজ এমন হতো না। কিন্তু তিনিও কি এই বিধিলিখন তখন পড়তে পেড়েছিলেন? গদির লোভে কংগ্রেস, এনসিপির হাত ধরার আগে তিনি কি একবারও ভেবেছিলেন তাঁর অনুগামী ও সমর্থকদের কথা? পড়তে পেরেছিলেন তাদের মনের কথা? আজ যখন ডুবতে বসেছে তাঁর সাধের তাজ, তখন স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে সেকথাই ভাবার সময় এসেছে।