গঙ্গা নদীর উৎপত্তি
কোথা থেকে উৎপত্তি গঙ্গা (ganga river) নদীর? কোন কোন নদীর মিলনের ফলে গঙ্গা নদীর এই রূপ। এই ভিডিওর মাধ্যমে আমরা বোঝার চেষ্টা করব। আসলে গিরিরাজ হিমালয়ের বুকে যেমন আছে একের পর এক পবিত্র ধাম, তেমনি এই পর্বত শৃঙ্গের বিভিন্ন গুহা থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক জলধারা। একদিকে গঙ্গোত্রি, অন্যদিকে পিন্ডারি গ্লেসিয়ার। একদিকে কেদারনাথ। আর একদিকে বদ্রিনাথ। একাধিক জলধারার মিলন থেকেই সৃষ্টি হচ্ছেন মা গঙ্গা।
প্রথমেই আসি বদ্রিনাথে। এখান থেকেই উৎপত্তি হচ্ছে বিষ্ণুগঙ্গার। মন্দিরের সামনেই নীলকন্ঠ পাহাড়। দুপাশে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে নর ও নারায়ণ দুই পর্বত। প্রবাদ আছে, পূর্ব জন্মে অর্জুন, নারায়ণ ও নর ঋষিরূপে এখানে তপস্যা করেন। অষ্টম শতকে আদিগুরু শঙ্করাচার্য বদরি দর্শনে যান। গাড়োয়ালের রাজা বর্তমান মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৩ শতকে মন্দিরের চূড়া সোনায় মুড়ে দেন ইন্দোরের রানি অহল্যাবাঈ। ১৮০৩ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরকে সংস্কার করেন জয়পুরের মহারাজা। স্কন্দপুরাণে উল্লেখ আছে, একসময় মুনি ঋষিদের বাস ছিল এই বদ্রিনাথে। এই বদ্রিনাথেই একাধিক জলপ্রপাতে তৈরি হচ্ছে বিষ্ণুগঙ্গার। নীতি পাস থেকে আসছে ধৌলি গঙ্গা। এই দুটি নদীর মিলন হচ্ছে বিষ্ণুপ্রয়াগে।
বিষ্ণুপ্রয়াগও দুই পর্বত নর ও নারায়ণের মাঝে অবস্থিত। কথিত আছে, পিতামহ ব্রহ্মার নির্দেশ সৃষ্টির দায়িত্ব নিতে মানবজন্ম লাভ করেন মহর্ষি নারদ। কিন্তু তাতে রাজি নন নারদ। তাই তপস্যা শুরু করেন বিষ্ণুর। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে বর দেন বিষ্ণু। ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন নারদ। সেই থেকেই এই জায়গার নাম হয় বিষ্ণুপ্রয়াগ। এই বিষ্ণু প্রয়াগেই দুই নদীর সঙ্গমে তৈরি হচ্ছে অলকানন্দা। পাহাড়ি পথে গড়িয়ে এসে নন্দপ্রয়াগে নন্দাকিনী নদীর সঙ্গে মিলিত হচ্ছে অলকানন্দা। এই প্রবাহ আরও এগিয়ে নামছে কর্ণপ্রয়াগে। এখানে সে মিলিত হচ্ছে পিন্ডার থেকে আসা নদীর প্রবাহের সঙ্গে।
এখানে একটু নজর দেওয়া যাক পিন্ডারি গ্লেসিয়ারের দিকে। নন্দাকোট ও নন্দাখাত পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই গ্লেসিয়ার। এর ডাইনে বাঁয়ে ডিম্বাকারে দাঁড়িয়ে আটটি শৃঙ্গ।কাছেই সুন্দরডিঙ্গা হিমবাহ। এই হিমবাহ গলে তৈরি হচ্ছে পিন্ডার নদী। কর্ণপ্রয়াগে এই নদী মিশছে নন্দাকিনী নদীর সঙ্গে। এই জলের প্রবাহ আরও নীচে নেমে রুদ্রপ্রয়াগে মিশছে মন্দাকিনী নদীর সঙ্গে।
কিন্তু মন্দাকিনী নদী কোথা থেকে আসছে? এই নদীর সৃষ্টি হচ্ছে কেদারনাথের কাছে। কেদারনাথ ধাম হিন্দুদের কাছে অন্যতম পবিত্র তীর্থ ক্ষেত্র। পুরাণে আছে হিমালয় কন্যা দেবী গৌরী শিবকে পতি রূপে পেতে এখানে তপস্যা করেন। পাণ্ডবদের হাতেই নাকি তৈরি গ্রানাইট পাথরে তৈরি এই মন্দির। যা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। এখানেই দুধগঙ্গা, মধুগঙ্গা, স্বর্গদুয়ারী ও সরস্বতী - স্বর্গের এই চার নদী এসে মিলে সৃষ্টি হচ্ছে মন্দাকিনী নদীর।
রুদ্রপ্রয়াগে এই মন্দাকিনী নদী মিশছে অলকানন্দার প্রবাহের সঙ্গে। বিপুল জলরাশি নিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে দেবপ্রয়াগের দিকে। এই দেবপ্রয়াগেই মিশছে ভাগিরথী। ভাগিরথী নদী আবার সৃষ্টি হচ্ছে গঙ্গোত্রী থেকে। সবমিলিয়ে রূপ নিচ্ছেন মা গঙ্গা।
এবার চলুন নজর দেওয়া যাক গঙ্গোত্রীর দিকে। গঙ্গোত্রী অর্থাৎ স্বর্গ ও মর্ত্যলোকের সন্ধিস্থল। ভাগীরথীর উৎপত্তিস্থল। গুহার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে বাঁধন ছেঁড়া জলের ধারা। কথিত আছে সগর রাজার ষাট হাজার সন্তানের নশ্বর দেহে প্রাণ সঞ্চার করতে ভগীরথ তপস্যায় বসেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট হন মা গঙ্গা। কিন্তু তিনি বলেন, তাঁর স্রোতে ভেসে যেতে পারে পৃথিবী। তখন মহাদেব গঙ্গাকে নিজের জটায় ধারণ করতে সম্মত হন। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত ভাবে তিনি নীচে নেমে আসেন। বয়ে আসেন একেবারে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত।
ফলে গঙ্গোত্রী থেকে ধেয়ে আসা ভাগীরথী রুদ্রপ্রয়াগে এসে যখন মন্দাকিনী ও অলকানন্দার জলধারার সঙ্গে মিশছে, তখন তা রূপ পাচ্ছে গঙ্গা নদীর। এই বিপুল জলরাশিই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মিশছে আমাদের গঙ্গাসাগরের কাছে। নদীর জলে যেমন দু কূলকে শস্য শ্যামলা করছেন মা গঙ্গা, তেমনি পূজিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।
Tags:
Ganga River
Ganga
origin of ganga
ganga river system
ganga river origin
river ganga
ganges river
the story of river ganga
river
ganga river in india
ganga river trick
ganga river history
origin of ganga river
story of river ganga
holy river ganga
origin of river ganga
how to origin ganga river
ganges
origin of river ganges
river ganges
ganges river facts
origin point or rever ganga
nandakani river
sacred history of ganga river