মহারাষ্ট্রে ডামাডোল, কেন পটবদলের পরিস্থিতি সেখানে?
Maharastra Political Crisis
মহারাষ্ট্রে কি সরকার বদল এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা? পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট হচ্ছে। বিদ্রোহীদের অনড় মনোভাবের কাছে এখন নতজানু হয়েছেন উদ্ধব ঠাকরেও। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সঞ্জয় রাউতকে দিয়ে তিনি বার্তা পাঠিয়েছেন, জোট সরকার থেকে বেরিয়ে আসবে শিবসেনা। তবে তার জন্য আসাম থেকে মহারাষ্ট্রে ফিরতে হবে বিদ্রোহীদের। মুখোমুখি আলোচনায় বসতে হবে তাদের। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ শিবসেনা বিধায়কের সিদ্ধান্তের কাছে যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাথানত করতে বাধ্য হচ্ছেন তা পরিষ্কার।
কিন্তু মহারাষ্ট্রে কেন এই অবস্থা? আসলে, বিজেপি বিরোধিতার নামে উদ্ধব ঠাকরে যেভাবে কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, তা সহ্য করতে পারছিলেন না অধিকাংশ বিধায়ক। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই পথ বাল ঠাকরের পথ নয়। হিন্দুত্বই ছিল তাঁদের মূল মন্ত্র। কিন্তু বিজেপি বিরোধিতার নামে সেখান থেকে লক্ষ্য সরে যাচ্ছিল শিবসেনার। যে বিক্ষোভ ধিকিধিকি জ্বলছিল, জোট সরকারের আড়াই বছর পর তা আরও ছড়িয়ে পড়ল।
কদিন আগেই বিক্ষোভের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন শিবসেনার গুরুত্বপূর্ণ নেতা তথা উদ্ধব ক্যাবিনেটের পিডব্লুডি মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। গুজরাটের সুরাটে গিয়ে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন কয়েকজন বিধায়ক। পরে এই সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তেই আজ প্রায় চল্লিশ। এই বাগী বিধায়করা এখন আছেন আসামের গুয়াহাটিতে। সেখান থেকেই চলছে ভবিষ্যত পরিকল্পনা। শিন্ডের দাবি, শিবসেনার ৫৫ জন বিধায়কের মধ্যে ৪০ জনই তাঁদের পক্ষে। তাই আসল শিবসেনা তাঁরাই। এটা বুঝতে পেরেছেন উদ্ধব ঠাকরেও। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এখন তিনি বার্তা দিচ্ছেন কংগ্রেস-এনসিপি জোট ছাড়ার। তা না হলে তাঁর যে একূল ওকূল দুকুলই যাবে, তা বুঝতে পারছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক ছবিটা কী দাঁড়াচ্ছে? শিবসেনা জানিয়ে দিয়েছে, জোট সরকার থেকে তারা বেরিয়ে আসবে। তার মানে এটা স্পষ্ট, সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাবে সরকার। ২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভায় শিবসেনার বিধায়ক ৫৫ জন, কংগ্রেস ৪৪, এনসিপি ৫৩। ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে ওই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিজেপি। তারা দখল করে ১০৯টি আসন। কিন্তু একসঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে লড়লেও মুখ্যমন্ত্রীর আসন নিয়ে অনড় থাকেন উদ্ধব ঠাকরে। ২৩ নভেম্বর দেবেন্দ্র ফড়নবীশ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেও তিনদিনের মধ্যে তাঁর সরকার পড়ে যায়। কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে জোট বেঁধে নিজের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন উদ্ধব ঠাকরে। যার ফল আজ তাঁকে ভোগ করতে হচ্ছে। শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়কদের বেশিরভাগই চাইছেন কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। নিজেদের ভূল বুঝতে পেরে এখন চাইছেন বিজেপির হাত ধরতে। আর তাই পটবদলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাণিজ্য নগরীতে।