দুয়ারে CBI, সে কারণেই কি মেজাজ হারাচ্ছেন অভিষেক?
বাঁকুড়ায়, ১৯ মে,২০২৩ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমাকে ডাকতে হবে না, যদি আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ থাকে, আমি ফাঁসির মঞ্চে উঠে মৃত্যু বরণ করব।
গত শুক্রবারের হুঙ্কারের পর শনিবার সকালে সিবিআইয়ের জেরা এবং গ্রেফতার ঠেকাতে ফের সুপ্রিম কোর্টে রক্ষাকবচের আবেদন অভিষেকের। এবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে লিভ পিটিশন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর।
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির রায়ই বহাল রেখেছিলেন বিচারপতি সিনহা। এবং আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য কুন্তল ঘোষ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২৫লাখ করে জরিমানা করেছিলেন। সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে লিভ পিটিশন। এবং সেকথা সিবিআই কর্তাদের জানিয়েই এই চিঠি।
শনিবার সকাল ১০-৫০-এ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হন নিজাম প্যালেসে। ১১-১৫ থেকে শুরু হয় জেরা। চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। টানা সাড়ে ন-ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। যদিও তাঁর আগেই নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় সিবিআইয়ের কলকাতা সদর দফতর নিজাম প্যালেসে।
শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। প্রস্তুতি নেয় নিজাম প্যালেসও। নিজাম প্যালেসের বাইরে অভিষেকের অনুগামীদের ভিড় বা শাসক দলের কর্মী যাতে কোন রকম বিশৃংখলা সৃষ্টি না করে, সেই কারণেই তিনটি বলয় তৈরি করা হয় নিজাম প্যালেসের ভিতরে। নিজাম প্যালেসের বাইরেও কড়া নিরাপত্তা ঘেরাটোপে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। নিজাম প্যালেসের বাইরে ভিতরে একাধিক জায়গায় তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। যাতে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
প্রস্তুতি ছিল অভিষেকের পক্ষ থেকেও। কি সেই প্রস্তুতি?শুক্রবার সন্ধ্যাতেই কলকাতা ফিরে দফায় দফায় আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক। কারণ স্পষ্ট, নিজেই হয়তো বুঝতে পারছেন, দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে বাইরে যতই গরম গরম বক্তব্য রাখুন না কেন, ঐ বার্তার বাষ্প সিবিআইয়ের সামনে চলবে না। কারণ সেখানে তথ্য প্রমাণ আর যুক্তির ধার লাগবে। প্রতিটি জবাবের সামঞ্জস্য প্রয়োজন। হাওয়ার কথা চলবে না। সেই কারণেই আইনজীবীদের পরামর্শ মেনে গ্রেফতারি এড়াতে সকালেই ফের সুপ্রিম কোর্টের কাছে রক্ষা কবচের আবেদন। যার শুনানি হবে ২২মে দিল্লিতে। এবং সেই চিঠি সিবিআই কর্তার হাতে ধরানো। সাবজুডিস বিষয়ের তকমা লাগাতে।
অন্যদিকে সিবিআইও সেরে রেখেছিল প্রস্তুতি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এলে কোন কোন বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যার প্রথমটাই ছিল কুন্তল ঘোষের চিঠি। যে চিঠি দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার কুন্তল দাবি করেছিলেন, তাঁকে অভিষেকের নাম বলতে বাধ্য করেছে সিবিআই। ৩০মার্চ প্রথমবার কুন্তল ঘোষ এই অভিযোগ করেন। অথচ ঠিক তাঁর আগের দিন ২৯ মার্চ শহীদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি, সারদা নারদা থেকে গরু বালি পাথর খাদান টেট সহ সব বিষয়ে তাঁর নাম যুক্ত করার জন্য সিবিআই চাপ দিয়েছিল।
পরদিনই অভিষেক ঘনিষ্ঠ কুন্তল ঘোষ দাবি করেন তাঁকেও চাপ দেওয়া হচ্ছে অভিষেকের না বলানোর জন্য। ঐ খানেই থামেননি তিনি, নেতাকে টানতে আদালতে বিচারপতির নাম উল্লেখ করে চিঠিও জমা নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম এজেন্ট কুন্তল। যাকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন অভিষেক নিজেই।
জানা গেছে পাঁচ পাতার প্রশ্নপত্রে ১০ টিরও বেশি প্রশ্ন নিয়ে তৈরি ছিল সিবিআই। জানতে চেয়েছিল রাজ্যের সেই সব এজেন্টদের নাম, যারা তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে চাকরি বিক্রি করেছিলেন জেলায় জেলায়। হুগলির নেতা কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও কালিঘাটের কাকু, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, যিনি, অভিষেককে বস বলে ডাকেন তাঁর নামও রয়েছে। অভিষেকের শেল কোম্পানি লিপস এন্ড বাউণ্ডের অন্যতম ডিরেক্টরও ছিলেন এই সুজয় কালীঘাটের কাকু। এছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণার বাগদার রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডল, অয়ন শীল সহ মেদিনীপুর মুর্শিদাবাদের এজেন্টদের নাম। নিজেই জানিয়েছেন অভিষেক।
অর্থাৎ তিনি স্বীকার করলেন, তৃণমূল আমলেই নিয়োগ দুর্নীতির শুরু। তাই এমন এজেন্ট নেট ওয়ার্ক জেলায় জেলায়। এবং দলীয় নির্দেশ মেনেই ঐ জেলাগুলির বিধায়ক সাংসদরা তাঁদের নিজস্ব কোটা ধরিয়েছিলেন পার্থ চ্যাটার্জিদের নেট ওয়ার্ক বানিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য কল্যাণময় গাঙ্গুলিরা। যারা প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের মাথা ছিলেন। আর এসএসসি চেয়ারম্যানকে দিয়ে হত নিয়োগ। প্রশ্ন ছিল এঁদের চিনতেন কিনা অভিষেক? এঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কথাবার্তা হত কিনা অভিষেকের। সি বি আই সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রশ্নের জবাব দিলেও একাধিক প্রশ্ন এড়িয়েও গেছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও সাড়ে ন ঘণ্টার লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ আসলে অশ্বডিম্ব প্রসব। শূন্য! এবং ফের দাবি, প্রমাণ পেলে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে চলুন।
কিন্তু তবু তিনি মেজাজ হারালেন, সাংবাদিকের প্রশ্নে। পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। ধমকালেন সাংবাদিককে।
আসলে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন, তৃণমূলের নেতা, বুঝতে পারছেন, দলের ডিফেন্স নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ছে। এখন রাজ্যের শাসক দলের দুয়ারেই সিবিআই-ইডি। ক্রমশ উন্মুক্ত হচ্ছে রাজ্যে লুঠে খাওয়ার তৃণমূলের এন্ড কোম্পানির ষড়যন্ত্র !
Tags:
Calcutta High court
Mamata Banerjee
Madhyom
news
bangla news
Bengali news
Abhishek Banerjee
Recruitment scam
abhishek banerjee news
abhishek banerjee latest news
abhishek banerjee today
abhishek banerjee tmc
abhishek banerjee news update
abhishek banerjee news latest
abhishek banerjee news today
abhishek banerjee comment
cbi summoned abhishek banerjee
at the door
door
abhishek losing temper
temper
lose your temper
fix your temper