হিঙ্গলগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ। সুন্দরবনে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানকে নামিয়ে আানা হল পাড়ার ফাঁংশনের পর্যায়ে। পুরোটাই এলোমেলো। সেখানে আচমকা রেগে কাঁই মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে উঠে হাতের কাছে শীতবস্ত্র না পেয়ে তিনি জনতার সামনেই তিরস্কার করতে শুরু করেন সরকারি আধিকারিকদের। তারপর মঞ্চেই বসে পড়েন অবস্থানে। জনগণকেও দেন এক বার্তা। দেখুন, কীভাবে তৈরি হল সেই নাটকীয় মুহূর্ত।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, এত মানুষকে এক সঙ্গে দেওয়ার অসুবিধা বলে ক্যাম্প করে বিলির কথা ছিল। তাহলে হঠাৎ তাঁর এই ভোলবদল কেন? বিলি করার কম্বল যে সেখানে নেই, তা আগেই জানতে পেরেছিলেন তিনি। তাই বক্তব্য শুরুর আগেই তাঁর মুখ জুড়ে বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে। আর এই বিরক্তিই পরে তিনি উগরে দেন প্রশাসনের প্রতি। প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর ভুল বোঝাবুঝির জন্য দায় কি শুধু সরকারি আধিকারিকদের? তিনি নিজে কেন আগে সব কিছু স্পষ্ট করে দেননি? এই ভুল বোঝাবুঝি বুঝিয়ে দিচ্ছে, হয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের যোগাযোগ নেই, বা জানানো হয়নি। আর তা না হলে সিএমওর নির্দেশ মানছে না জেলা প্রশাসন। এখানেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, পুলিশ কি করছে, প্রশাসন কি করছে তাঁর দায় আমি নেব কেন?
বিরোধীদের প্রশ্ন, তাহলে প্রশাসনের মাথায় তিনি বসে আছেন কেন? রাজ্যে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হলে, তার দায় তো মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। দুষ্কৃতীরা দুষ্কর্ম করলে, তা যদি সঠিক হাতে দমন করা না যায়, তার জন্য তো মুখ্যমন্ত্রীকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু তিনি যদি থানায় ঢুকে দুষ্কৃতীদের ছাড়াতে যান, তাহলে তার ফল ভুগতে হবে গোটা রাজ্যকে। একথা কি জানা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের? তাই কি একের পর এক কেলেঙ্কারি যখন নাড়িয়ে দিচ্ছে গোটা রাজ্যকে, তখন আমি জানতাম না বলে খালি মুখ লুকনোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের পুলিশের ওপর ভরসা না করে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শিক্ষায় কেলেঙ্কারির কথা আগে জানাননি তো! যেন খবর দেখে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তাঁর এই মানসিকতাই ডোবাচ্ছে গোটা রাজ্যকে। নিজের পুলিশ প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখছেন না । জেলায় জেলায় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে তিরস্কার করছেন সরকারি আধিকারিকদের। এই ঘটনা প্রশাসনের মনোবলই ভেঙে দিচ্ছে। আর সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। আর সবকিছু চাপা দিতেই কি প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মঞ্চে অবস্থানে বসে পড়ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? তাঁর কি মুঠো আলগা হচ্ছে প্রশাসনের ওপর থেকে? নাকি মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালিপনার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না প্রশাসনিক আধিকারিকরা? প্রশ্ন উঠছে।